Saturday, July 12, 2014

পরকালীন জীবনই আসল জীবন

পরকালীন জীবনই আসল জীবন

الْحَمْدُ لِلَّهِ ذِيْ الْكَرَمِ وَالْجَلَالِ، وَالْفَضْلِ وَالنَّوَالِ ، يَعْلَمُ مَا فِيْ السَّرَائِرِ وَيَطَّلِعُ عَلَى مَا فِي الضَّمَائِرِ (عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الكَبِيْرِ الْمُتَعَالِ)، أَحْمَدُهُ حَمْداً يَلِيْقُ بِكَرِيِمِ وَجْهِهِ، وَبِعَظِيْمِ سُلْطَانُهِ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، وَصَفِيُّهُ وَخَلِيْلُهُ، صَلَّى اللهُُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَسَلَّمَ تَسْلِيْماً كَثِيْرَاً، أَمَّا  بَعْدُ :
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আমরা আজ পৃথিবী নামক এক গ্রহে বসবাস করছি। পৃথিবীর আলো-বাতাস, নান্দনিক দৃশ্য, খাদ্য-পানীয় ও নানাবিধ নিয়ামত আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করছি। তবে আমাদের এ ভোগ কেবলই সাময়িক, ক্ষণস্থায়ী। এ পৃথিবীরমায়া ছেড়ে, সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে পরপারে, অনন্ত ঠিকানায়। যেখানে নেই কোনো মৃত্যু,নেই কোথাও পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ।
প্রিয় ভাইয়েরা! মানুষের ফানা হয়ে যাওয়া, মৃত্যুবরণ করা এক প্রাত্যহিক, বরং প্রতি মুহূর্তের ঘটনা, প্রতি মুহূর্তেই পৃথিবীরকোথাও না  কোথাও মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি মিনিটে ১০৮ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। তবেমৃত্যুবরণ মানুষের সামগ্রিক ধ্বংস নয়। বরং মৃত্যুর দরজা দিয়ে সে পাড়ি জমাচ্ছে অনন্ত জগতে। তাই বুদ্ধিমান তো সেই যেদুনিয়ার জীবনকে পরকালের ফসল ফলানোর জন্য ব্যবহার করে। শাশ্বত ও অনন্ত জীবনের  পাথেয় সংগ্রহের কাজে লাগায়।
‘তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভাÑসৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্বÑঅহঙ্কার এবং ধনÑসম্পদ ওসন্তানÑসন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপরতা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়Ñকুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিনআযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়’ (সূরা আলহাদীদ:২০)।
‘নিশ্চয় দুনিয়ার জীবনের তুলনা তো পানির ন্যায় যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি, অতঃপর তার সাথে যমীনের উদ্ভিদেরমিশ্রণ ঘটে, যা মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তু ভোগ করে। অবশেষে যখন যমীন শোভিত ও সজ্জিত হয় এবং তার অধিবাসীরা মনে করেযমীনে উৎপন্ন ফসল করায়ত্ব করতে তারা সক্ষম, তখন তাতে রাতে কিংবা দিনে আমার আদেশ চলে আসে। অতঃপর আমিসেগুলোকে বানিয়ে দেই কর্তিত ফসল, মনে হয় গতকালও এখানে কিছু ছিল না। এভাবে আমি     চিন্তাশীল লোকদের জন্যনিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি’(সূরা ইউনুস:২৪)।
দুনিয়া যার গুরুত্বের বিষয় হবে, আল্লাহ তার সবকিছু বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। তার দারিদ্র্যকে তার সামনে চাক্ষুষ্মান করে দেবেন।তার কাছে দুনিয়া আসবে না তবে যেটুকু লেখা আছে  কেবল সেটুকু। আর আখিরাত  যার উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ তার সবকিছুসুসংহত করে দেবেন। তিনি তার হৃদয়ে ধনাঢ্যতা দান করবেন। আর দুনিয়া তার কাছে বাধ্য হয়েই আসবে’ (ইবনে মাজাহ,সহীহ)।
‘দুনিয়াতে তুমি এমনভাবে থাকো যেন তুমি অপরিচিত অথবা পথিক’(বুখারী)। ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত এ হাদীসেরব্যাখ্যায় ইবেন রজব হাম্বলী রহ. বলেন, ‘এ হদীসটি দুনিয়াবিষয়ক আশা-ভরসার হ্রস্বতা-ক্ষীণতার ব্যাপারে মৌলিকভাবধারামূলক হাদীস। তাই দুনিয়াকে আবাসস্থল বানিয়ে, ঘরবাড়ী সাব্যস্ত করে পরিতৃপ্তি অনুভব করা মুমিনের জন্য সমীচীননয়। বরং দুনিয়াতে মুমিনকে এমনভাবে থাকতে হবে, যেন সে সফর অবস্থায় আছে এবং প্রস্থানের জন্য মাল-সামানা গোছগাছকরছে’ (জামেউ‘ল উলূমি ওয়াল হিকাম)।
এটা এ কারণে যে আখিরাতে প্রতিটি মানুষই অমর হয়ে যাবে এবং অমর হয়েই সে অনন্তকালের জন্য পরকালের জীবনযাপনশুরু করবে। সেখানে থাকবে মানুষের মনোতৃপ্তিকর ও চক্ষুশীতলকারী সবকিছু। আখিরাত হলো দারুসসালাম বা শান্তির নীড়।সকল ত্র“টি ও অপূর্ণতা থেকে মুক্ত। সকল বালা-মুসীবত থেকে মুক্ত। সেখানে থাকবে না কোনো রোগ-শোক। থাকবে নাকোনো মৃত্যু। থাকবে না কোনো কষ্ট-যাতনা অথবা বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন-
‘নিশ্চয় জান্নাতে তোমাদের কারো চাবুক রাখার পরিমাণ জায়গা দুনিয়া ও দুনিয়ায় যা আছে তার  চেয়ে উত্তম’। হ্যাঁ, এটাইহলো বাস্তবতা। জান্নাতে একটি লাঠি রাখার স্থান তাবৎ দুনিয়া থেকে উত্তম। দুনিয়ায় যা কিছু সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও খুশি,আমোদ-আহ্লাদ নেয়ামত-সামগ্রী আছে জান্নাত তার থেকে উত্তম। জান্নাত যদি দুনিয়া থেকে উত্তম হয়ে থাকে তাহলে আমরাদুনিয়ায় যে সামান্য সময় পেলাম তা কি আদৌ কোনো হিসাবে আসতে পারে? না, পারে না। যদি জান্নাতের একটি চাবুকরাখার জায়গা দুনিয়া থেকে উত্তম হয়ে থাকে তাহলে একজন সর্বনিম্ন জান্নাতবাসীর বিশাল বাসস্থান কতোই না উত্তম হবে, যাদু’হাজার বছর চলার পথ পরিমাণ বড় হবে এবং যার নিকটবর্তী ও দূরবর্তী উভয় প্রান্ত জান্নাতবাসী সমানভাবে দেখতে পাবে!আল্লাহ তাআলা জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন :
وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا. مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا. وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا. وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِآَنِيَةٍ مِنْ فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَ. قَوَارِيرَ مِنْ فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًا. وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْجَبِيلًا. عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا. وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَنْثُورًا. وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا. عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُنْدُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِنْ فِضَّةٍ وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا
‘আর তারা যে ধৈর্যধারণ করেছিল তার পরিণামে তিনি তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী বস্ত্রের পুরস্কার প্রদান করবেন। তাদের উপরসন্নিহিত থাকবে উদ্যানের ছায়া এবং তার ফলমূলের থোকাসমূহ তাদের সম্পূর্ণ আয়ত্তাধীন করা হবে। তাদের চারপাশেআবর্তিত হবে রৌপ্যপাত্র ও স্ফটিক স্বচ্ছ পানপাত্র- রূপার ন্যায় শুভ্র স্ফটিক পাত্র; যার পরিমাপ তারা নির্ধারণ করবে। সেখানেতাদেরকে পান করানো হবে পাত্রভরা আদা-মিশ্রিত সুরা, সেখানকার এক ঝর্ণা যার নাম হবে সালসাবীল। আর তাদেরচারপাশে প্রদক্ষিণ করবে চিরকিশোরেরা; তুমি তাদেরকে দেখলে বিক্ষিপ্ত মুক্তা মনে করবে। আর তুমি যখন দেখবে তুমিসেখানে দেখতে পাবে স্বাচ্ছন্দ্য ও বিরাট সাম্রাজ্য। তাদের উপর থাকবে সবুজ ও মিহি রেশমের পোশাক এবং মোটা রেশমেরপোশাক, আর তাদেরকে পরিধান করানো হবে রূপার চুড়ি এবং তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়’ (সূরা আলইনসান:১২-২১)।
أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَلِجُ الْجَنَّةَ، صُورَتُهُمْ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، لا يَبْصُقُونَ فِيهَا، وَلا يَمْتَخِطُونَ، وَلا يَتَغَوَّطُونَ، آنِيَتُهُمْ فِيهَا الذَّهَبُ، أَمْشَاطُهُمْ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَمَجَامِرُهُمْ الألُوَّةُ، وَرَشْحُهُمْ الْمِسْكُ، وَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ، يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ، لا اخْتِلاَفَ بَيْنَهُمْ، وَلاَ تَبَاغُضَ، قُلُوبُهُمْ قَلْبٌ وَاحِدٌ، يُسَبِّحُونَ اللَّهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا
‘জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বপ্রথম দলের আকৃতি হবে পূর্ণিমা-রাতের ন্যায়। তারা জান্নাতে থুথু ফেলবে না, নাকের শ্লেষ্মা ফেলবেনা, মল ত্যাগ করবে না, সেখানে তাদের (খাদ্য ও পানীয়ের) পাত্র হবে  সোনার তৈরি। তাদের চিরুনি হবে সোনা ও রূপার।তাদের ধুপদানী হবে উলওয়ার। তাদের ঘাম হবে মিসকের ন্যায়। আর তাদের প্রত্যেকের থাকবে দু’জন স্ত্রী। সৌন্দর্যেরআধিক্যে মাংসের বাইরে থেকে যাদের পায়ের নলার অভ্যন্তর ভাগ পর্যন্ত দেখা যাবে। তাদের মাঝে কোনো মতানৈক্য থাকবেনা, পরস্পরের প্রতি ঘৃণা থাকবে না। তাদের সকলের হৃদয় হবে এক হৃদয়ের মতো। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতাবয়ান করবে’ (বুখারী ও মুসলিম, হাদীসের শব্দগুলো বুখারী থেকে নেয়া)।




সুপ্রিয় ভাইয়েরা! আখিরাতই যেহেতু প্রকৃত জীবন তাই আমাদের উত্তম পূর্বপুরুষগণ, সালাফে সালেহীনগণ দুনিয়াকে কেবলআখিরাতের শস্যক্ষেত্র হিসেবেই ব্যবহার করেছেন। দুনিয়াকে তাঁরা শুধুই পরকালের পাথেয় সংগ্রহের কালপর্ব বলে ভেবেছেন।দুনিয়াকে উদ্দেশ্য হিসেবে নেননি। দুনিয়ার প্রতি তাঁরা লালায়িত ছিলেন না। দুনিয়ার যশ-জৌলুস তাঁদের হৃদয়কে আকৃষ্টকরতে পারেনি। বরং তাঁদের সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ছিল পরকালের ভাবনা। উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. বলেন
নিশ্চয় দুনিয়া তোমাদের স্থায়ী বাসস্থান নয়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার ভাগ্যে ধ্বংস হয়ে যাওয়া লিখে রেখেছেন। আর যারা এরবাসিন্দা তাদের ভাগ্যে তো দুনিয়া থেকে প্রস্থান করে অন্যত্র চলে যাওয়া লিখে রেখেছেন। কতো উন্নত-মজবুত (বসতি)বেশিদিন না যেতেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। কতো আনন্দে উদ্বেলিত বসবাসকারী মুহূর্তের মধ্যেই প্রস্থান করে চলে যায়। তাইতোমাদের কাছে উত্তম যা আছে তা গোছগাছ করে সফরের জন্য ভালোভাবে তৈরি হয়ে নাও। আর সঙ্গে করে পাথেয় নাও।নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় হলো তাকওয়া’ (জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম)।
হাবীব আবু মুহাম্মদ রহ. মৃত্যুমুখে পতিত  ব্যক্তি যেভাবে অসিয়ত করে, প্রতিদিনই তিনি সেভাবে অসিয়ত করতেন। মৃত্যুর পরগোসল দেয়া ও অন্যান্য কর্ম কিভাবে করতে হবে সেগুলো তিনি বলতেন। তিনি সকাল বেলায় কাঁদতেন। আবার সন্ধ্যাবেলায়ও কাঁদতেন। তিনি কেন এভাবে কাঁদেন, তাঁর স্ত্রীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কসম, তিনিযখন সন্ধ্যায় উপনীত হন তখন আশঙ্কা করেন সকাল পর্যন্ত বাঁচবেন না। আবার যখন সকালে উপনীত হন তখন আশঙ্কাকরেন সন্ধ্যা পর্যন্ত বুঝি আর বাঁচবেন না’।
ওয়াইস কুরুনী রহ.-কে যখন বলা হত, ‘আপনার দিনকাল কেমন যাচ্ছে’? তিনি বলতেন, ‘ঐ ব্যক্তির দিনকাল আর কেমনযাবে, যে সন্ধ্যা বেলায় উপনীত হলে ধারণা করে যে, সে সকাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না, আবার সকাল  বেলায় উপনীত হলেধারণা করে যে, সে আর সন্ধ্যা করা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। অতঃপর তাকে হয়তো জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হবে অথবাজাহান্নামের দুঃসংবাদ’।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের কে না চায় দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হতে? আমাদের কে চায় আখিরাতের প্রকৃতজীবনকে বরবাদ করে ধ্বংসশীল দুনিয়াকে নির্মাণ করতে? আমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে জান্নাতের অশেষ-অকল্পনীয় সুখ ভোগ করতে আগ্রহী নয়? যদি কেউ না থাকে তাহলে আমাদের অবশ্য কর্তব্য হবে নিজদেরকে তাকওয়া-পরহেজগারীতে সমৃদ্ধ করা। আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করা। আর জেনে রাখবেন, আল্লাহ তাআলা আমলদার মুমিনদের জন্যদুনিয়া ও আখেরাত- উভয় জাহানেই হায়াতে তাইয়েবা তথা উত্তম জীবন দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে :
আর আল্লাহ যা ওয়াদা করেন তা তিনি অবশ্যই পূরণ করেন। তবে এর জন্য প্রয়োজন আল্লাহর দেয়া শর্ত পূরণ করা। উল্লিখিতআয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈমান ও নেক আমালের শর্ত করেছেন। আমারা যদি এ শর্ত পূরণ করতে পারি তাহলে দুনিয়াআখিরাত উভয় জাহানেই আল্লাহ আমাদের হায়াতে তাইয়িবা দান করবেন। তাহলে আর ভয় কিসের? আসুন আমরা প্রকৃতঈমানে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি নেক আমলের ময়দানে। শুরু করি প্রকৃত জীবন গড়ার কর্মতৎপরতা।
মুহতারাম হাযেরীন! আমাদের কার জীবনের  কতটুকু বাকী আছে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। তাই বিগতজীবনে যে যাই করি না কেন আসুন এখন থেকে নিজদের বিশুদ্ধ করে নিই। নামাজ, রোযা সাদকা, মাতা-পিতার সাথেসদাচরণ, আল্লাহর রাস্তায় অর্থদানসহ সকল নেক- আমলের প্রতি ঐকান্তিকভাবে মনোনিবেশ করি। দুনিয়ার পেছনে হা-হুতাশবাদ দিয়ে প্রকৃত জীবন বিনির্মাণে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে যাই। কেননা পরকালের জীবনে যদি দুঃখ ভোগ করতে হয়, তাহলেসে দুঃখ থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরকালে যারা দুঃখ ভোগ করবে তাদের আফসোস হা-হুতাশেরকোনো সীমা থাকবে না। মানুষের ইচ্ছে হবে সামান্য সময়ের জন্য হলেও পৃথিবীতে ফিরে এসে দান-সাদকা করতে, সবকিছুআল্লাহর পথে বিলিয়ে দিতে, সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত হতে; কিন্তু মানুষ তার এ ইচ্ছা বাস্তবায়নের আদৌ কোনো সুযোগ পাবেনা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন :
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ . وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنَ الصَّالِحِينَ. وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
হে মুমিনগণ, তোমাদের ধনÑসম্পদ ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারাএরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসারপূর্বে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছু কাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমিদানÑসদাকা করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর আল্লাহ কখনো কোন প্রাণকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তারনির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ (সূরা আল মুনাফিকূন:৯-১১)।
اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.
হে আল্লাহ আপনি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত দুরস্ত করে দিন। আপনি আমাদেরকে প্রকৃত জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণেরতাওফীক দান করুন। দুনিয়ার চাকচিক্যে আমরা যাতে  ধোঁকা না খাই সেই তাওফীক আমাদেরকে দান করুন। আম্বিয়ায়েকিরাম ও সালেহীনগণ যেভাবে দুনিয়ার জীবন যাপন করেছেন আমাদেরকেও তদ্রƒপ যাপনের তাওফীক দান করুন।



Read more: http://www.annur.it/products/%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%80%e0%a6%a8-%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a6%87-%e0%a6%86%e0%a6%b8%e0%a6%b2-%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8/

No comments:

Post a Comment