অধ্যায়-৩: কিয়ামতের দিন সম্বন্ধে ইসলামের দৃষ্টিভংগী
মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন যে, ইহকালীন জীবন পরকালীন
জীবনের একটি প্রস্তুতি। দুনিয়ার এ জীবন আখেরাতের জীবনের পরীক্ষাকেন্দ্র।
বিশ্বজগত ধ্বংসের পরে এই দিনটি আগমন করবে। মৃতব্যক্তিদেরকে আল্লাহর সামনে
হিসাব-নিকাশের জন্য উত্থিত করা হবে। এ দিনটি হবে একটি নতুন জীবনের শুরু
যার কোন শেষ নেই। এ দিনকেই বলা হয় কিয়ামতের দিন।
প্রত্যেক মানুষ তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস ও কর্মফলের মুখোমুখি হবে। যারা “ لا إله إلا الله محمد رسول الله
” (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ) তে বিশ্বাস করে মারা
গেছে তারা মুসলমান। তারা তাদের কর্মফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (82)
অর্থাৎ, আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তারা হবে জান্নাতী। সেখানে তারা চিরস্থায়ী অবস্থান করবে। (সুরা বাকারা: ৮২)
আর যারা ” لا إله إلا الله محمد رسول الله
” (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ) তে বিশ্বাস স্থাপন না
করে মারা যাবে তারা মুসলমান বলে গণ্য হবে না। তারা চিরদিনের জন্য জান্নাত
থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ (85)
অর্থাৎ, আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন কিছুকে ধর্ম বা জীবন
ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করবে তা কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য হবে না। আর পরকালে
সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আলে ইমরান:৮৫)
তিনি আরও বলেন:
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ
فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِمْ مِلْءُ الْأَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ
افْتَدَى بِهِ أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ وَمَا لَهُمْ مِنْ
نَاصِرِينَ (91)
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কুফরী অবস্থায় মারা
গেছে তারা যদি আজাবের বিনিময়ে সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও দেয় তবুও তা
গ্রহণ করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর তাদের কোন
সাহায্যকারীও নেই। (সুরা আলে ইমরান: ৯১)
কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে- আমি ধারণা করি যে,ইসলাম উত্তম ধর্ম;
আমি যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি তাহলে,পরিবার-পরিজন,বন্ধুবান্ধব,ও অন্যান্য
লোকেরা আমার উপর অত্যাচার নির্যাতন ও ঠাট্টা বিদ্রুপ করবে। তাহলে,আমি যদি
ইসলাম গ্রহণ করি দোযখ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে কি জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারব?
এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে-আমরা পবিত্র কুরআন মাজীদে দেখতে পাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ (85)
অর্থাৎ, আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন কিছুকে ধর্ম বা জীবন
ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করবে তা কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য হবে না। আর পরকালে
সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আলে ইমরান:৮৫)
আল্লাহ তায়ালা রাসুল হিসেবে মুহাম্মদ (সাঃ)কে প্রেরণ
করার পরে কেউ নিজেকে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের সাথে সম্পৃক্ততা দেখালে
আল্লাহ তায়ালা তা গ্রহণ করবেন না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা,ও
অভিভাবক। তিনি দুনিয়ার সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের যতসব কল্যাণ,
দয়া-মায়া,মমতা সবকিছুই তার কাছ থেকে এসেছে। এসবের পরেও যে ব্যক্তি আল্লাহ ও
তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে না এবং তার মনোনীত ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা
ইসলামকে মেনে নেবে না তাকে পরকালে শাস্তি দেয়াই ন্যায়পরায়ণতার কাজ।
তবে,ইহকালে আমাদেরকে সৃষ্টির মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে একক সত্ত্বা আল্লাহ
তায়ালার ইবাদাত বা আনুগত্য করা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ (56)
অর্থাৎ,আমি মানুষ ও জ্বীনজাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদাতের জন্য।(সুরা যারিয়াত:৫৬)
আমরা যেখানে বসবাস করছি তা খুবই সংক্ষিপ্ত জীবন।
কিয়ামতের দিনে কাফেররা বিশ্বাস করবে যে,তারা দুনিয়ায় বসবাস করেছে
শুধুমাত্র একদিন বা তার কিছু অংশ। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِينَ
(112) قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلِ
الْعَادِّينَ (113)
অর্থাৎ,আল্লাহ তায়ালা বলবেন:তোমরা বছরের গণনায় পৃথিবীতে
কতদিন অবস্থান করেছিলে? তারা বলবে-আমরা একদিন বা তার কিছু অংশ পৃথিবীতে
অবস্থান করেছিলাম। অতএব,গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। (সুরা
মু’মিনুন:১১২-১১৩)
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন:
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا
وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ (115) فَتَعَالَى اللَّهُ
الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
(116)
অর্থাৎ,তোমরা কি মনে করেছ যে,আমি তোমাদেরকে অযথাই সৃষ্টি
করেছি এবং তোমাদেরকে আমার দরবারে ফিরে আসতে হবে না? অতএব, শীর্ষ মহিয়ান
আল্লাহ তায়ালা তিনিই সত্যিকার মালিক, তিনি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। তিনি
সন্মানিত আরশের মালিক। (সুরা মু’মিনুন: ১১৫-১১৬)
পরকালের জীবনই আসল জীবন। সেটা শুধুমাত্র আত্মার জীবনই
নয় বরং, তা শারিরীক জীবনও। আমরা সেখানে বসবাস করব আমাদের আত্মা ও শরীর
উভয়টি নিয়েই। দুনিয়ার জীবনের সাথে আখেরাতের জীবনের তুলনা করতে গিয়ে রাসুল
(সাঃ) বলেছেন-
وَاللَّهِ مَا الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا
مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ فِي الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ
بِمَ تَرْجِعُ إِلَيْهِ
অর্থাৎ, আল্লাহর কসম! কোন ব্যক্তি তার আঙ্গুলকে সমুদ্রের
মধ্যে ডুবিয়ে দেয়ার পর (আঙ্গুল সরিয়ে নিলে) তার কাছে সমুদ্রের তুলনায়
যতটুকু অংশ (পানি) আসে আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া তেমনই। (মুসলিম ও মুসনাদে
আহমদ)
এমনিভাবে আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের মুল্য অথৈ সমুদ্রের তুলনায় কয়েক ফোটা পানির সমান ছাড়া আর কিছুই নয়।…
No comments:
Post a Comment