Wednesday, July 9, 2014

কুরআন সুন্নাহ্র আলোকে কবীরা গুনাহ

কুরআন সুন্নাহ্র আলোকে কবীরা গুনাহ

মূল : ইমাম শামসুদ্দীন উসমান আযযাহাবী (রাহ.)
অনুবাদ : মুহাম্মদ আবদুল হাই নদ্ভী
(সেপ্টেম্ব’১৩ইং সংখ্যার পর)
হযরত আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত। একদিন রাসূল (স.) তাঁর সহচরদের নিয়ে নামায পড়ে বসলেন। এ সময়ে এক ব্যক্তি এসে তাড়াতাড়ি রুকু সিজদা করে নামায পড়ল। রাসূল (স.) বললেনঃ তোমরা এ ব্যক্তিকে কি দেখতে পাচছ ? সে যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে মুহাম্মদ (স.)-এর উম্মতের বহির্ভূত অবস্থায় মারা যাবে। কাক যেমন তার ঠোঁট দিয়ে রক্তে ঠোকর মারে, সে যে রকম ঠোক মেরে নামায সমাপ্ত করল।
রাসূল (স.) আরো বলেছেনঃ কেউ যখনই নামায পড়ে তখন একজন ফেরেশতা তার ডানে এবং একজন ফেরেশতা তার বামে থাকে। সে যদি সুষ্ঠুভাবে নামায শেষ করে তাহলে তারা উভয়ে সে নামাযকে নিয়ে আল্লাহ্র কাছে পৌঁছায়। অথবা তারা তা তার মুখের ওপর ছুঁড়ে মারে।’’ (দারে কুত্নী)
রাসূল (স.) আরো বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে অযু করে, এরপর নামাযে দাঁড়িয়ে, সুষ্ঠুভাবে রুকু সিজদা ও কুরআন পাঠ দ্বারা নামায সম্পন্ন করে, তার নামায তাকে বলেঃ তুমি যেমন আমাকে সংরক্ষণ করেছ, তেমনি আল্লাহ্ তোমাকে রক্ষা করুন। এরপর তা আলোকরশিম ছড়াতে ছড়াতে আকাশের দিকে উঠে গেলে তার জন্য আকাশের দুয়ার খুলে যায় এবং আল্লাহ্র কাছে পৌঁছে দিয়ে এ নামাযীর পক্ষে সুপারিশ করে। আর যখন রুকু সিজদা ও কুরআন তেলাওয়াত সুষ্ঠুভাবে করে না তখন নামায তাকে বলেঃ তুমি যেমন আমাকে বিনষ্ট করলে, আল্লাহ্ও তেমনি তোমাকে বিনষ্ট করুন। এরপর তা অন্ধকারে আচ্ছন্ন অবস্থায় আকাশে উঠে যায়। তখন তার জন্য আকাশের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তাকে পুরানো কাপড়ের মত গুটিয়ে নামাযীর মুখের ওপর ছুড়ে মারা হয়।
রাসূল (স.) আরো বলেছেনঃ নামায হচ্ছে একটি দাঁড়িপাল্লা স্বরূপ। যে ব্যক্তি এ দাঁড়িপাল্লায় পুরোপুরিভাবে মেপে দেয়, তাকে তার পুরস্কারও পুরোপুরি-ভাবে প্রদান করা হবে। আর যে মাপে কম দেবে, তার সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য ‘ওয়েল’ নির্দিষ্ট রয়েছে। মাপে কম দেয়া যেমন অন্যান্য বস্ত্ত হতে পারে, তেমনি নামাযেও হতে পারে। আর ‘ওয়েল’ হচ্ছে জাহান্নামের এমন উত্তপ্ত জায়গা, যার উত্তাপ থেকে জাহান্নাম নিজেও আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ কামনা করে। (মুসলিম, আহমদ)
রাসূল (স.) বলেছেনঃ সিজদার সময় তোমরা মুখাবয়ব, নাক ও দুই হাত মাটিতে রাখবে। কেননা আল্লাহ্ তাআলা আমাকে সাতটি অঙ্গের মাধ্যমে সিজদা করতে আদেশ দিয়েছেন। কপাল, নাক, দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু ও দুই পায়ের পিঠ। সিজদার সময়ে কাপড় ও চুল সামলাতে নিষেধ করেছেন। যে ব্যক্তি প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে তার অধিকার না দিয়ে নামায পড়ে, তাকে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ সম্পূর্ণ নামাযের সময় ধরে অভিশাপ দিতে থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত হুযাইফা (রা.) এক ব্যক্তিকে দেখলেন ভালভাবে রুকু সিজদা না করে নামায পড়ছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে কতদিন যাবত নামায পড়ছ ? সে বললঃ চল্লিশ বছর। তিনি বললেনঃ তুমি চল্লিশ বছর যাবত কোন নামায পড়নি। এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তুমি অমুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ইমাম হাসান বসরী (রহ.) বলতেন, ‘‘হে আদম সন্তান! নামায যদি তোমার কাছে গুরুত্বহীন কাজ বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে ইসলামের আর কোন কাজটি তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে? অথচ রাসূল (স.) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন বান্দা সর্বপ্রথম নামাজ সম্পর্কেই জিজ্ঞাসিত হবে। সে যদি সঠিকভাবে নামাজ পড়ে তাহলে মুক্তি পাবে। আর যদি নামায সুষ্ঠুভাবে না পড়ে, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি ফরয নামাযে অসম্পূর্ণতা ধরা পড়ে, তাহলে আল্লাহ্ বলবেন, ‘‘দেখ, আমার বান্দার কোন নফল কাজ রয়েছে কিনা? যদি থাকে তাহলে তা দিয়ে ফরযের ত্রুটি পরিপূর্ণ কর। অনুরূপভাবে সকল কাজের বিচার অনুষ্ঠিত হবে।’’ (তিরমিযী)
এ জন্য প্রত্যেক মুমিনের উচিত যত সম্ভব বেশি বেশি নফল আদায় করা, যাতে ফরযের ক্ষতিপূরণ করা যায়। এ কাজটা খুব গুরুতর কাজ নয়- ইচ্ছা থাকলেই করা যায়। অনর্থক সময় নস্ট না করে এ কাজে মনযোগী হওয়া উচিত।

No comments:

Post a Comment