Wednesday, July 9, 2014

সূরা হজ্ব ৪১ আয়াত

সূরা হজ্ব ৪১ আয়াত

বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম।

অনুবাদ
তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহ্র ইখতিয়ারভুক্ত। (সূরা হজ্ব-৪১ আয়াত)
শানে নুযুল
হিজরতের পর পরই আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়। মক্কার কাফিরদের সীমাহীন নির্যাতনের পর রাসূল (সা.) সাহাবীদেরকে নিয়ে মদীনায় হিজরীত করার পর পরই দীনের দাওয়াতের মুক্ত সুযোগ সৃষ্টি হলো। সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ সকলেই নামায কায়েম, যাকাত প্রদান ও সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করা ইত্যাদি কাজসমূহ অত্যমত্ম যত্নসহকারে পালন করতে থাকেন। তাঁদেরই প্রশংসা করে আল্লাহ্ তায়ালা আলোচ্য আয়াতখানা অবতীর্ণ করেন।
(তাফসীরে ইবনে কাছির, ৪/২৭৭)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বিপদ মুছিবত থেকে মুক্ত করেন, নিশ্চিমত্ম চলার জন্য ব্যবস্থা করে দেন এবং জমিনের বুকে শামিত্ম-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা সহকারে অবস্থানের সুযোগ দেন তারা মৌলিক চারটি কাজ করবে (১) নামায প্রতিষ্ঠা করবে (২) যাকাত প্রদান করবে (৩) সৎ কাজের আদেশ ও (৪) লোকদেরকে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করবে।
প্রথমত নামায কায়েম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘তারা নামায কায়েম করবে। নামায কায়েম বলতে রুকু, সিজদা ঠিকমত আদায় করবে। জামায়াত সহকারে নামায আদায় এবং নামাযের শিক্ষা সমাজে বাসত্মবায়ন করাকে বুঝায়।’’
(তাফসীরে বায়জাবি, ১ঃ৮)
আয়াতে শুধুমাত্র নামায আদায় করতে আল্লাহ্ বলেননি বরং নামায কায়েম করতে বলা হয়েছে। জামাতে নামায আদায়; অন্য মুসলমান ভাইদেরও তাতে শরীক করার কথা বলা হয়েছে। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, দীনের মূল হল তাওহীদ আর নামায হল তার সত্মম্ভ। (তিরমীযি)
মুয়াত্তা মালেকে হযরত ওমর (রা.) একটি বর্ণনা এসেছে, ‘‘আমার কাছে নামায সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি নামায হেফাজত করল (কায়েম করল) সে গোটা দীনের হেফাজত করল, আর যে নামায নষ্ট করল সে সব কিছুই নষ্ট করে ফেলল।’’
উল্লেখিত হাদীস সমূহ থেকে স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে যে, ইসলামের মধ্যে নামাযের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ জন্য কুরআন মজিদের অনেক জায়গায় নামাযের ব্যাপারে আল্লাহ্ তায়ালা বিশেষ গুরুত্ব সহকারে নামায কায়েম করতে বলেছেন।
নামাযের সময় ও পদ্ধতি
নামায আদায়ের সময় ও পদ্ধতি কুরআন এবং হাদীসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় নামাজের সময় মুমিনদের জন্য সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। (সূরা নিসা, ১০৩)
নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখবে, সেভাবেই নামায পড়বে। (বুখারী ও মুসলিম)
ধীরে সুস্থে সুন্দর করে নামায পড়তে হয়। তাড়াহুড়ো করে নামায পড়লে নামাযের রুকন ও শর্তগুলো ভালো করে আদায় হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল (সা.) নামাযে কুরআনের আয়াতগুলোকে খন্ড খন্ড করে একের পর এক আয়াত পড়তেন। (তিরমীযি)
রাসূল (সা.) এক বেদুঈনকে তাড়াহুড়া করে নামায আদায় করায় পুনরায় নামাযের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘‘পুনরায় নামায পড়, কেননা তোমর নামায হয়নি।’’
(বুখারী ও মুসলিম)
এভাবে তিনবার তাকে পুনরায় নামায আদায়ের নির্দেশ দেন। নামাযে রুকু, সিজদাগুলোকে সুন্দর করে আদায় করার প্রতি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রশামিত্মর সাথে সিজদা করো।’’ (বুখারী)
রুকু সিজদা সঠিকভাবে আদায় না করলে নামায সহীহ তো হয়ই না বরং বলা হয়েছে, সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি যে নামায চুরি করে।
সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল, নামাযে আবার কিভাবে চুরি করবে? উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে নামাযে রুকু, সিজদা ঠিকমত আদায় করে না, সেই বড় চোর। (তাবারানী)
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, মুমিনরাই সফলকাম। যারা নামাযে ভীতি ও বিনয় অবলম্বন করে। (সূরা মুমিনুন, ২)
পক্ষামত্মরে নামাযে উদাসীনদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, যারা নামাযে অমনোযোগী ও উদাসীন থাকে ঐ মুসল্লিদের জন্য ধ্বংস অবধারিত। (সূরা মাউন, ৪)
দ্বিতীয়ত সত্যিকার ঈমানদারগণ সুযোগ হলেই নামায কায়েমের পরপরই যাকাত আদায় করবে। যাকাত আদায় আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ধনীদের মালের মধ্যে নির্ধারিত পরিমাণে গরিব মিসকীনদের জন্য অধিকার সাব্যসত্ম করা হয়েছে। এটা গরীবদের ওপর দয়া বা অনুগ্রহ নয় বরং যাকাত তাদের পাওনা বা অধিকার। আল্লাহ্ তায়ালার বাণী- তোমাদের সম্পদের মধ্যে অসহায় ও গরীবদের জন্য অধিকার রয়েছে। (সূরা জারিয়াত, ১৯)
তৃতীয়ত সফলকাম ঈমানদারগণ সুযোগ পেলেই সৎ কাজের আদেশ দেয়াটাকে নিজের জীবনের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব হিসেবে নেবেন। দাওয়াত নিজের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের দিয়েই শুরু করবে। তাদেরকে নামাযে উদ্বুদ্ধ করবে, জামাতে শরীক হতে বলবে।
হাদীসে এসেছে, তুমি সুযাগ পেলেই তোমার দীনের দাওয়াত দিতে দিতে সার্বক্ষণিক ভাবে তোমার জবান সচল রাখো। (তিরমীযি)
চতুর্থত ‘‘অসৎ কাজের নিষেধ’’। অসৎ, গর্হিত, বিবেকবর্জিত, অসুন্দর কাজসহ সকল ধরনের অপরাধ ও দুর্নীতি চিরতরে নির্মূল করার জন্য সত্যিকার ঈমানদারগণ নিরলস প্রচেষ্টা চালাবে।
তাই আসুন আমরা সকলে নামায কায়েম করি এবং সামগ্রিক ভাবে জীবনের সকল অংশে নামাযের শিক্ষা বাসত্মবায়ন করি।

No comments:

Post a Comment