Saturday, June 28, 2014

৫ মিনিটে ওয়েবসাইট

৫ মিনিটে ওয়েবসাইট

কী বিষয়ের উপরে কোর্স?
বেসিক ওয়েবসাইট ডিজাইন
এই কোর্সে ওয়েবসাইট ডিজাইনের একেবারে গোড়ার সব বিষয় শিখানো হবে। এই ব্যাপারে আগে থেকে ধারণা থাকার দরকার নেই, কোর্সেই সব শিখানো হবে।

নিবন্ধনের লিংক
দয়া করে এখানে ক্লিক করে কোর্সে রেজিস্ট্রেশন করুন। রেজিস্ট্রেশন করলে কোর্সের লেকচার আসা মাত্র ইমেইলে খবর পাবেন এবং কোর্স শিক্ষকের ঘোষণা পাবেন।

প্রশিক্ষক
ঝংকার মাহবুব, ওয়েব ডেভেলপার, Nielsen, শিকাগো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

কোন পর্যায়ের কোর্স?
শুধুমাত্র কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন এমন মানুষের জন্য ওয়েবসাইট বানানোর কোর্স। অর্থাৎ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা এরকম অতিরিক্ত আর কিছু জানা লাগবেনা।

কোর্সে কয়টি লেকচার থাকবে?: ৮টি

লেকচারগুলোর বর্ণনা/কোর্সের সিলেবাস:
১ম: ৫ মিনিটে ওয়েবসাইট
২য়: পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরী
৩য়: ওয়েবসাইটের মেকআপ(css)
৪র্থ: পর্দার অন্তরালে ওয়েবসাইট
৫ম: স্মার্ট ওয়েবসাইট (javascript ও JQuery)
৬ষ্ঠ: ইউজার ইনপুট ও ওয়েব ডিজাইন
৭ম: অন্যের ওয়েবসাইট থেকে কপি মারার আর্ট
৮ম: ওয়েব ডেভেলপার হবার সিক্রেট

কোর্স কবে থেকে শুরু হবে? কয় সপ্তাহ চলবে?
জানুয়ারী মাসের ২০তারিখ থেকে ২ সপ্তাহ অন্তর



কোর্স শিক্ষকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আমি ঝংকার মাহবুব (jhankar.mahbub@gmail.com)। আমি BUET এর ২০০১ ব্যাচের ছাত্র। বুয়েট থেকে পাশ করার পর নিজস্ব ফার্মে কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছি। ২০১২ সালে আমি নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করে বর্তমানে শিকাগো শহরে nielsen এ ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ করছি।

 

প্রোগ্রামিং এ হাতে খড়ি

প্রোগ্রামিং এ হাতে খড়ি 


১) কোর্সের শিরোনামঃ

প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি
এখানে ক্লিক করে কোর্সটিতে রেজিস্ট্রেশন করে নিন।

২) কোর্সের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ

বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখান থেকে দল বাছাই করে আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ এবং বেশ কয়েকটি মেডেলও নিয়ে এসেছে এই প্রতিযোগিতা থেকে। কিন্তু সারা দেশে ছয়টি বিভাগে বিভাগীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে অংশগ্রহন খুবই কম। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও কেবলমাত্র প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ না জানার কারণে এমন একটি আনন্দদায়ক বিষয় থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তাদেরকে প্রোগ্রামিংয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যই এই অনলাইন কোর্সের আয়োজন।

বাংলাদেশ ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডের ফেসবুক গ্রুপ – https://www.facebook.com/groups/bdoifamily/

৩) কাদের জন্য কোর্সঃ

স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্যই মূলত এই কোর্সটির আয়োজন। পঞ্চম শ্রেণী বা তার উপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা সহজেই কোর্সটি করতে পারবে। তবে কোর্সটি সমানভাবে কাজে আসবে প্রোগ্রামিংয়ে একেবারেই নতুন যে কারও।

৪) কোর্সে কয়টি লেকচার থাকবেঃ

কোর্সে মোট ছয়টি ইউনিট থাকবে। প্রতি ইউনিটে ৫০ থেকে ৬০ মিনিটের ভিডিও লেকচার থাকবে। প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ইউনিট প্রকাশিত হবে।

৫) লেকচারগুলোর বর্ণনা/কোর্সের সিলেবাস

ইউনিট ১ – প্রোগ্রামিং পরিচিত, ভেরিয়েবল ও ডাটা টাইপ
ইউনিট ২ – কন্ডিশলান লজিক
ইউনিট ৩ – লুপ
ইউনিট ৪ – ফাংশন, অ্যারে
ইউনিট ৫ – স্ট্রিং
ইউনিট ৬ – ফাইল ও স্ট্রাকচার

৬) কোর্স কবে থেকে শুরু হবে? কয় সপ্তাহ চলবে?

অক্টোবরের ৬ তারিখ শুরু হবে, তিন সপ্তাহ চলবে।

৮) কোর্স শিক্ষকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মীর ওয়াসি আহমেদঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন ২০১২ সালে। তিনি ২০১২ সালে এসিএম আইসিপিসি-র চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহন করেছেন। মুক্ত সফটওয়্যার লিমিটেডে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি, বাংলাদেশ ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডের স্বেচ্ছাসেবী কোচ।

তাহমিদ ইসলাম রাফিঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন ২০১২ সালে। ২০০৫ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াডে বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন। সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন এবং বাংলাদেশে প্রোগ্রামিং জনপ্রিয় করার পেছনেও শ্রম দিচ্ছেন।

তামিম শাহ্‍রিয়ার সুবিনঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। বাংলা ভাষায় ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামিং’ নামে একটি বই লিখেছেন। মুক্ত সফটওয়্যার লিমিটেড নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানী পরিচালনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে একজন ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেন।

অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি: ক্লাস-১

  অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি: ক্লাস-১

(আজকে ফাইন্যান্স ১০১ – অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি  কোর্সের প্রথম ক্লাস যার পুরোটাই টেক্সট আকারে দেয়া । আমার জন্য অডিও আপলোড করা একটু সমস্যা, তাই আপনাদের খানিকটা কষ্ট করে পুরোটা পড়তে হবে। তবে খুব সমস্যা হলে জানাতে পারেন । ঈদের ব্যস্ততা শেষ করে কুইজও দিয়ে দিলাম । )

এখানে কোর্সে নিবন্ধন করুন

কোর্স পরিচিতি দেখুন

ফাইন্যান্স কী এবং কেন:

১.১: অর্থের ব্যবহার কেন জানতে হবে?

আপনার ছোটবেলায় এক রোযার ঈদের বিকেল বেলার কথা । মনটা বেজায় ফুরফরে, কারণ এবার ঈদ সেলামীর আমদানী আশাতীত রকম ভাল হয়েছে । কেন জানি এবার বড়রা সবাই খোশমেজাজে ছিল, তাই সকাল বেলা থেকে যাকে যাকে সালাম করেছেন, মোটামুটি সবাই হাতভরে সেলামী দিয়েছে । দশটাকার কম তো কেউ পকেট থেকে বেরই করেনি ! বিকেলবেলা পর্যন্ত হিসাব করে দেখলেন, সব মিলিয়ে ২৭০ টাকা সেলামী পেয়েছেন; এর মধ্যে বিভিন্ন আত্মীয়দের বাসায় যাতায়াত ভাড়া বাবদ খরচ পড়েছে ২৫ টাকা, ইগলুর নতুন কোনআইসক্রিম খেয়েছেন ২০ টাকা আর সকালে বাসার সামনে বসা চটপটির দোকানে চটপটি খেয়েছেন ১০ টাকা । বর্তমানে আপনার কাছে নগদ আছে ২১৫ টাকা । অবশ্য এই টাকা দিয়ে কি করবেন আগেই ঠিক করা । ঈদের ছুটির আগে স্কুলের সামনে যে খেলনার দোকানটা আছে, সেখানে একটা নতুন টয়ট্রেন দেখে খুব পছন্দ হয়েছে, দাম ১৮০ টাকা । বন্ধুদের কাছে বলা আছে, ঈদের দিনই ট্রেনটা কিনে ফেলবেন – যদিও একটু সংশয় ছিল, না জানি এবার কি রকম ঈদ সেলামী পাওয়া যায় ! তবে আজ যা সেলামী পেয়েছেন তাতে ট্রেনটা কিনেও হাতে টাকা থাকবে, তাই আপনি বেজায় খুশী ।
বিকেলবেলা ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে খেলনার দোকানে পৌছালেন টয়ট্রেন কেনার জন্য । দোকানী ট্রেন বের করে আপনার সামনে দিয়েছে, আপনি কেনার আগে শেষবারের মত সেটাকে পর্যবেক্ষণ করছেন । ঠিক এমন সময় শোকেসে রাখা একটা নতুন খেলনা আপনার চোখে পড়লো । দোকানী জানালো এটা একটা হ্যান্ডগেম, যখন যেখানে খুশি খেলা যাবে, সাথে নিয়ে ঘোরা যাবে – মারাত্মক জিনিষ; এক দেখাতেই আপনার পছন্দ হয়ে গেল । মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ট্রেনের বদলে হ্যান্ড গেমটা কিনবেন; ট্রেনতো আপনার আগেও ছিল । কিন্তু জিনিষটার দাম ২৫০ টাকা ! আপনার আছে ২১৫ টাকা, আরো ৩৫ টাকা লাগবে । ছোট ভাইয়ের কাছে ধার চাইলেন ৩৫ টাকা, আপনার মত সেও এবার ভাল সালামী পেয়েছে । ওকে বোঝালেন, গেমটা কেনা হলে তো দুই ভাইই খেলা যাবে । কিন্তু সে দ্বিধাগ্রস্থ – দোনোমনো করছে কি করবে । তাই ওকে প্রস্তাব দিলেন স্কুলের হাতখরচ বাবদ দৈনিক যে ৫ টাকা করে পান, তা থেকে জমিয়ে যে টাকা নিচ্ছেন তার কিছু বেশিই ওকে ফেরত দেবেন । শেষমেষ রফা হল ছোটভাই ২০ টাকা দেবে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে দুই সপ্তাহ পর তাকে ২২ টাকা ফেরত দিতে হবে – সেই সাথে কেনার পরপরই ওকে একবার গেম খেলতে দিতে হবে – আপনার রাজি না হয়ে উপায় নাই । তাহলে সবমিলিয়ে ২৩৫ টাকা হল, এখনো ১৫ টাকা বাকি । সব দিক চিন্তা করে মনে হল, মায়ের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করলেই বাকি ১৫ টাকা পাওয়া যবে । সত্যি সত্যি মায়ের কাছে কিছুক্ষণ চাইতেই টাকাটা পাওয়া গেল । আপনি সাথেসাথে ছোটভাইকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন এবং সন্ধ্যায় চকচকে নতুন হ্যান্ডগেম নিয়ে বাসায় ফিরলেন; এবার বন্ধুরা সব তাক লেগে যাবে ! স্কুল পড়ুয়া সেই ছোট্ট আপনি কত আগে থেকেই বিভিন্ন আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করেছেন, সেটা কখনো ভেবে দেখেছেন কি?

১.২: ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞান কী এবং কেন পড়বো?

লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে অর্থ/টাকাপয়সা ব্যবহারের ইতিহাস ৩৫০০ বছরের পুরোনো । সেই প্রাচীনকাল থেকেই অর্থের সাথে মানুষের সম্পর্ক, যা সময়ের সাথে সাথে আরো নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়েছে । বর্তমান সময়ে অর্থ বা টাকাপয়সা সভ্যতার এক অন্যতম চালিকা শক্তি । পৃথিবীতে পার্থিব প্রায় সবকিছুরই অর্থমূল্য রয়েছে, – সেটা হতে পারে সম্পদ, পণ্য বা সেবা । চলতে-ফিরতে, উঠতে বসতে সবখানে অর্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে আছে । আর তাই আর্থিক সিদ্ধান্ত কমবেশি আমাদের সবাইকেই নিতে হয় । একটু আগেই আমরা দেখলাম ছোট বেলায় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমদের কিভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় । তাই পরিকল্পিতভাবে অর্থের ব্যবহার জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আর অর্থ ও অর্থসম্পর্কিত যাবতীয় কর্মকান্ড যে বিষয়ের অধীনে অধ্যায়ন করা হয় সেটাই ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞান । বাংলা ভাষায় ফাইন্যান্সের চর্চা অনেকটাই সীমিত । যেসব বই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ি তার প্রায় সবগুলোই বাইরের এবং ইংরেজিতে লেখা; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমেরিকান বই । তাই বাধ্য হয়েই এই কোর্সে আমাকে অনেক ইংরেজি টার্ম/শব্দ ব্যবহার করতে হবে । এর মূল কারণ এই না, যে এসব শব্দের বাংলাকরণ করা যাবে না; বরঞ্চ কারণটা হল, আমাদের এখানে ফাইন্যান্সের ইংরেজি টার্মগুলোই সচরাচর ব্যবহৃত হয় । তাই এসবের বাংলা করলে দুর্বোধ্যতা বা কনফিউশন তৈরি হতে পারে ।
এবার আসি ফাইন্যান্স শব্দের মানে কি কি হতে পারে । ফাইন্যান্সকে একটি পাঠ্য বিষয় হিসেবে যদি আমরা দেখি তবে একে বলতে হয় অর্থবিজ্ঞান, যা লেকচারের শুরুতেই বলা হয়েছে । এছাড়া ফাইন্যান্সের পরিসরের মধ্যে আছে অর্থ (Money) ও আর্থিক বিভিন্ন উপকরণ (Monetary Instruments), অর্থায়ন (Financing), আর্থিক বাজার (Financial Markets), অর্থব্যবস্থাপনা (Financial Management), আর্থিক সিদ্ধান্ত (Financial Decision), বিনিয়োগ (Investment), ব্যবসায়িক অর্থায়ন (Business/Corporate Finance), অর্থপ্রকৌশল (Financial Engineering), সরকারি অর্থায়ন (Government/Public Finance) এবং অর্থসম্পর্কিত আরো যত যা কিছু আছে ।
ফাইন্যান্স অনেকক্ষেত্রেই অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত । বলা যায়, অর্থনীতির পথ ধরেই ফাইন্যান্সের উৎপত্তি । সম্পদের সুষম বন্টন অর্থনীতির একটি চিরন্তন সমস্যা । সম্পদের সুষম বন্টন না হলে একটি সমাজে নানাধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয় যা আমরা প্রতিনিয়তই দেখি । একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে । উৎপাদনের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হল মূলধন । সম্পদের সুষম বন্টন না হলে মূলধনও কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে, ফলে উৎপাদনের সবগুলো সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায় না বা সেক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয় এবং ফলশ্রুতিতে উৎপাদনও কম হয় । একই কথা প্রযোজ্য উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রেও এবং সর্বোপরি আমাদের জীবনের অর্থসম্পর্কিত সর্বক্ষেত্রে । এই সমস্যাগুলোর বাস্তব সমাধান দেয় ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞান । যেমন, ফাইন্যান্সই পথ করে দেয়, যাতে মূলধন কেন্দ্রীভূত হয়ে অলস পড়ে না থেকে উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলোতে কাজে লাগতে পারে । এবার একটু আসি জনকল্যাণের দিকে । সমাজে সম্পদ সুষমভাবে বন্টিত না হলে অপচয় ও অদক্ষতা বৃদ্ধি পায় । যেমন কারো কাছে যদি মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং অন্যজনের কাছে প্রয়োজনের চেয়ে কম সম্পদ থাকে, তবে যে বেশি সম্পদের অধিকারী, তার ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় বেশি হয় । উপরন্তু অতিরিক্ত সম্পদের কারণে সে হয়তো সব সম্পদ উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে চায় না বা পারে না, – যার করণ হতে পারে প্রয়োজন না থাকার কারণে উৎসাহহীনতা বা অদক্ষতা অথবা অন্য কোন কারণ । অন্যদিকে যার কাছে সম্পদের পরিমান কম সে তার উৎপাদনশীলতা পরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনা । তার জীবনযাত্রার মান হয় নিম্ন এবং সমাজে বৈষম্য দেখা দেয় । বাস্তবজীবনে অর্থনীতির এ সব সমস্যার সমাধানের প্রচেষ্টা করাই ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞানের কাজ ।

১.৩: একটা ছোট্ট উদাহরণ

এবার ফাইন্যান্সের প্রয়োগের ছোট্ট এবং খুবই সাধারণ একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো, যার অভিজ্ঞতা আমাদের প্রতিনিয়তই হয় । আমরা অনেকেই হয়তো এ ব্যাপারে সচেতন ভাবে চিন্তা করি, আবার অনেকে হয়তো ভাবি না । ধরে নেই একজন ব্যক্তি একটি মুদি দোকানের ব্যবসা করবে । এ জন্য তার কাছে প্রয়োজনীয় যে সম্পদ আছে তা হল: বাজারে নিজের একটা দোকানঘর এবং ১০ লক্ষ টাকা । সে নিজেই একবছর ব্যবসাটা চালালো এবং তাতে বছর শেষে মুনাফা হল ৪,০০,০০০ টাকা । অর্থাৎ সরল হিসাবে সে মূলধনের ওপর (১০ লক্ষ টাকার ওপর) ৪০% মুনাফা করেছে এবং একে বেশ ভাল রিটার্ন বা আয় বলতে হবে । এখন দেখি, খুব সাধারণ ফাইন্যান্সের জ্ঞান আমাদের কি বলছে । লোকটি ব্যবসায়ে ১০ লক্ষ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করেছে । এই সম্পদের একটি বিকল্প ব্যবহার হতে পারতো ব্যাংকে FDR করে রাখা । তাই যদি সে ব্যাংকে টাকাটা FDR করে রাখতো, তবে ১৩% হিসাবে বছর শেষে তার ইন্টারেস্ট পাবার কথা ১,৩০,০০০ টাকা । এবার আসি দোকান ঘরটির প্রসঙ্গে । দোকানটি সে নিজে না ব্যবহার করে যদি ভাড়া দিয়ে রাখতো, তবে মাসিক ভাড়া ১২,০০০ টাকা (একটা ধরে নিলাম) হিসেবে বছরে ভাড়া পেত ১,৪৪,০০০ লক্ষ টাকা । এবার আসি ওই লোকটি ব্যবসায়ে বছর জুড়ে যে শ্রম দিয়েছে তার হিসাবে । সে নিজে ব্যবসা না করলে অন্য কোথাও চাকরি করতে পারতো । ধরি কোথাও চাকরি করলে তার মাসিক বেতন হতো ১৫,০০০ টাকা (এটাও ধরে নিলাম) । চাকরি থেকে বছরে তার বেতন বাবদ পাবার কথা ১,৮০,০০০ টাকা । এসবগুলো যোগ করলে আমরা পাই মোট ৪,৫৪,০০০ টাকা ,যা লোকটি ব্যবসা না করে সম্পদগুলো বিকল্প পথে ব্যবহার করলে উপার্জন করতে পারতো । অর্থাৎ ব্যবসা করার ফলে সে তার সব সম্পদের রির্টান বা আয় হিসাবে ৫৪,০০০ টাকা (৪,০০,০০০ – ৪,৫৪,০০০ = – ৫৪,০০০) কম পাচ্ছে ! তাই এক্ষেত্রে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত হতে পারে, লোকটা নিজে ব্যবসা না করে একটি চাকরি করুক এবং তার অন্য সম্পদগুলো বিকল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করুক । লোকটির জন্য ব্যবসা করাটা আর্থিক দিক থেকে তখনই যুক্তিযুক্ত হবে যখন সেই ব্যবসা থেকে সেই বছর তার আয় হবে ৪,৫৪,০০০ টাকার বেশি । তবে এখানে যে উদাহরণটি আমরা দেখলাম, তার পারিপার্শ্বিক উপাদানগুলো পরিবর্তণ হলে ফলাফলও ভিন্ন হবে । তবে আর্থিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটি সবসময়ই লাভজনক হয়, সেটা ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।
আশা করছি আমাদের প্রথম ক্লাসে ফাইন্যান্স সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা প্রাথমিক ধারণা দিতে পেরেছি । কোর্সটি সম্পর্কে আপনাদের মতামত/ফিডব্যাক এটিকে আপনাদের জন্য আরো উপযোগী করার প্রচেষ্টায় আমাকে অনেক সাহায্য করবে । সামনের লেকচারগুলোতে আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে । ধন্যবাদ সাথে থাকবার জন্য ।

ফাইন্যান্স ১০১ – অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি: ক্লাস-২

ফাইন্যান্স ১০১ – অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি: ক্লাস-২

এখানে কোর্সে নিবন্ধন করুন

কোর্স পরিচিতি দেখুন


ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রগুলো: পর্ব-১ (ব্যক্তিগত ফাইন্যান্স/অর্থায়ন)

আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি ফাইন্যান্স ১০১ – অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি কোর্সের দ্বিতীয় ক্লাসে। আগের লেকচারে আমরা ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞান কী সে সম্পর্কে জেনেছিলাম। আশা করছি ফাইন্যান্স সম্পর্কে আপনাদের কিছু প্রাথমিক ধারণা গত ক্লাসে দিতে পেরেছি। আজকে আমরা দেখবো ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রগুলো কি বা কোন কোন ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সের ব্যবহার হয় এবং আমরা কিভাবে ফাইন্যান্সের ব্যবহারকে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারি। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, যেখানেই অর্থের/টাকাপয়সার সম্পৃক্ততা আছে বা আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় – সেখানেই ফাইন্যান্সের ব্যবহার রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা তিনটি ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সের ব্যবহারকে সাজাতে পারি: ১. ব্যক্তিগত পর্যায়ে, ২. ব্যবসায়িক পর্যায়ে ও ৩. সরকারি পর্যায়ে।

ব্যক্তিগত ফাইন্যান্স/অর্থায়ন:

আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে অর্থের ব্যবহার কতটা ব্যাপক তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের অর্থের প্রয়োজন হয়। কখনো এই অর্থের যোগান আসে অন্য কারো কাছ থেকে, যেমন আমাদের ছোট বেলায় আমাদের বাবা-মা আমাদের যাবতীয় আর্থিক প্রয়োজন মেটান। আবার একসময় আমরা নিজেরা আয় করি, নিজেদের জন্য এবং সেই সাথে ছেলেমেয়ে ও আমাদের ওপর যারা নির্ভরশীল তাদের জন্য। এখন চলুন দেখি ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা অর্থ বা টাকা পয়সা নিয়ে কোন কোন কাজগুলো করি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আর্থিক কর্মকান্ডগুলোর মর্ধে আছে: আয়, ব্যয়, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ঋণ গ্রহন ও ঋণ প্রদান। আর এসব ক্ষেত্রেই আর্থিক পরিকল্পনা করতে হয় এবং সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

আমার কী আছে:

ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হল নিজের আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা। একজন ব্যক্তির নীট আর্থিক অবস্থা হল, তার যাবতীয় সম্পদ থেকে যে পরিমান দায়দেনা আছে তার বিয়োগফল। একে ইংরেজিতে বলে Net Worth। প্রকৃতপক্ষে নীট আর্থিক অবস্থা হল একজন ব্যক্তির চূড়ান্ত হিসাব বা ব্যালান্সশিট। যে কোন আর্থিক সিদ্ধান্তের আগে নিজের আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা খুবই জরুরী, তাতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হয় এবং মাঝ পথে পিছিযে আসতে হয় না।
একজন ব্যক্তির নীট আর্থিক অবস্থা সচরাচর ধনাত্মত বা পজিটিভই হয় – অর্থাৎ সে ব্যক্তির কাছে মোট যে সম্পদ আছে তা থেকে তার সব দায়দেনা পরিশোধ করলেও তার হাতে কিছু সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে। তবে নীট আর্থিক অবস্থা বা Net Worth সবসময় পজিটিভ হবে এমন কোন কথা নেই। আমরা প্রায় সবাই ‘দেউলিয়া’ বা ‘Bankrupt’ শব্দটির সাথে পরিচিত। কোন ব্যক্তির দেউলিয়া বা Bankrupt হবার মানে হল, তার মোট সম্পদ থেকে তার দায়দেনার পরিমান বেশি। অর্থাৎ সে ব্যক্তির নীট আর্থিক অবস্থা ঋণাত্মক বা নেগেটিভ এবং তার সব সম্পদ দায়দেনা পরিশোধের কাজে লাগালেও সব দেনা শোধ করা যাবেনা। কোন ব্যক্তি এমন অবস্থায় পড়লে সে আদালতের মাধ্যমে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষনা করতে পারে। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির পাওনাদারেরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং তাদের পাওনার বিপরীতে কম অর্থ ফেরত পাবে। অন্যদিকে দেউলিয়া ঘোষিত হবার পর ওই ব্যক্তির নীট আর্থিক অবস্থা হবে শূণ্য বা ০। অর্থাৎ তার হাতে কোন সম্পদও থাকবে না এবং তার কাছে কারও পাওনাও থাকবেনা। এখানে দেউলিয়া ধারণাটির ব্যক্তি পর্যায়ের উদাহরণ দিলাম, তবে এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এবং তাত্ত্বিকভাবে একটি দেশের সরকারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।

ভবিষ্যৎ সবসময়ই অনিশ্চিত:

ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ হল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভবিষ্যতের আর্থিক ঝুঁকি নানা ধরনের হতে পারে। স্বাস্থ্যগত সমস্যা, দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা জনিত পঙ্গুত্ব, মৃত্যু, আর্থিক দেনা, সম্পদের ঝুঁকি ইত্যাদি নানা কারণে আমরা ভবিষ্যতে আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারি। এ ধরণের আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারি, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বীমা করার মাধ্যমে এসব আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করতে পারি। তবে এলোমেলো ভাবে বীমা করলেই তা আমাদের জন্য লাভজনক হবে না। সঠিকভাবে আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ের পর তার ওপর ভিত্তি করেই ঠিক করতে হবে কার জন্য কোন ধরণের বীমা উপযুক্ত হবে।

আয়করের চিন্তা:

আমাদের দেশে সরাসরি কর বা আয়কর দেবার প্রচলন কম; তবে দিন দিন এ হার বাড়ছে। উন্নত বিশ্বে নাগরিকদের জন্য আয়কর একটা বড় চিন্তা। আমাদের দেশে অল্প সংখ্যক মানুষ আয়কর দিলেও বর্তমানে সরকার বিভিন্নভাবে আয়করের আওতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যেমন, এখনকার নিয়মে যাদের নামেই নতুন স্থাবর সম্পদ (জমিজমা, বাড়ি/ফ্লাট ইত্যাদি) বা ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা হবে – তাদের সবাইকে আয়করের আওতায় আসতে হবে। এছাড়াও চাকরিজীবিদের একটা বড় অংশ এবং যারা বেশ কিছুদিন ধরে ব্যবসা করছেন তাদের নিয়মিত কর দিতে হয়। আমাদের দেশে সাধারণত আয়কর পেশাজীবিদের মাধ্যমেই সবাই কর দেয় এবং যারা কর দিচ্ছেন তারা তাদের আয়কর হিসাব সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। তবে এসব ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আয়করজনিত আর্থিক জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সবাই চায় আয়করের পরিমান যেন কম হয়। আয়কর দুইভাবে কম দেয়া যায়:
১. আয়কর না দিয়ে বা আয়কর ফাঁকি দিয়ে (ইংরেজিতে বলে Tax evasion), – এটি আইনের দৃষ্টিতে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এটা করলে যে কেউ নানা ধরণের আর্থিক ও আইনী সমস্যায় পড়তে পারেন।
২. আয়কর এড়িয়ে গিয়ে যাকে ইংরেজিতে বলে Tax avoidance এবং এটি কোন অপরাধ নয়। ব্যাপারটা এমন যে, যেই রাস্তা দিয়ে হাটলে আপনাকে কর দিতে হবে আপনি সেই রাস্তা দিয়ে না হেটে অন্য রাস্তা দিয়ে হাটলেন। আয়করের পরিমান কমানোর আরো একটি উপায় হচ্ছে আয়করের ছাড় বা রিবেটের সুবিধা নেয়া। যেমন আপনি যদি আপনার আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকার নির্ধারিত কিছু কিছু খাতে বিনিয়োগ করেন তাতে আয়করের ওপর নির্দিষ্ট পরিমান ছাড় পাবেন। এভাবে আমরা সঠিকভাবে কর দিয়েও আয়করের পরিমান কমাতে পারি এবং ভবিষ্যতের আয়কর সংক্রান্ত ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে পারি।

কেন এবং কিভাবে সঞ্চয় করবো বা কোথায় বিনিয়োগ করবো:

আমরা সবাই কমবেশি সঞ্চয় করি – সেটা হতে পারে কোন স্থাবর সম্পদ কেনার জন্য, হতে পারে জীবনের কোন বড় উপলক্ষের জন্য (বিয়ে, বিদেশে যাত্রা, পড়াশোনা ইত্যাদি), হতে পারে ভবিষ্যৎ জীবনের আয় ঘটতি মেটাতে বা হতে পারে অন্য কিছু। এক্ষেত্রে প্রথম বিবেচ্য বিষয় হল – আমাদের কোন নির্দিষ্ট কারণে কী পরিমান অর্থ লাগবে সেটা নির্ধারণ এবং আমরা নিজস্ব আয়ে কি সেটা একত্রিত করতে পারবো না বাইরের উৎস থেকে অর্থের সংস্থান করতে হবে। বাইরে থেকে অর্থসংস্থান করতে গেলে (যেমন ঋণ নিতে গেলে) তার খরচ কেমন হবে সেটাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় আমরা কিভাবে সঞ্চয় করবো এবং কত সময়ের জন্য করবো, সঞ্চয়টির ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য কি করণীয় ইত্যাদি। আমরা যদি নিজের কাছেই টাকা রেখে দেই তবে মূল্যস্ফীতির কল্যানে তার ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকবে। মানে আমি আজকে ১০০ টাকা দিয়ে যে জিনিষটা কিনতে পারবো একবছর পর জিনিষটার দাম বেড়ে গেলে (যেটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার) সেই ১০০ টাকার কেনার ক্ষমতা মূল্যস্ফীতির কারণে কমে যাবে। বিকল্প হিসেবে আমরা ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা রাখতে পারি (যাতে মুনাফার হার খুবই কম থাকে) বা FDR করতে পারি (মুনাফার হার কিছুটা বেশি থাকে)। ধরি ব্যাংকে মুনাফার হার ১২% এবং মূল্যস্ফীতির পরিমান ৮%; তাহলে আমরা প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে সঞ্চয়ের ওপর ৪% আয় করবো।
সঞ্চয়ের সাথেই আসে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত। আমার কাছে যদি কিছু টাকা থাকে তবে সেটা আমি বিনিয়োগ করতে পারি। বিনিয়োগের উদ্দেশ্য হল আয় বা লাভ করা এবং তার সাথে ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে বিনিয়োগে লাভের হার যত বেশি তাতে ঝুঁকির পরিমানও তত বেশি। আবার উল্টো করে বললে, আমি তখনই একটা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে যাব যখন তার লাভের পরিমানও সেরকম বেশি হবে। এখানে ঝুঁকিকে আমরা দুই ভাবে দেখতে পারি – প্রথমত: আয়ের ঝুঁকি; অর্থাৎ আমি আশা করছি ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে আমি ২০ টাকা লাভ করবো, কিন্তু বাস্তবে আমার লাভ হল ১৫ টাকা। এক্ষেত্রে তাহলে ক্ষতিটা কি হল? ধরি আমার কাছে আরো একটি বিনিয়োগের সুযোগ ছিল যেখানে আমি ১৮ টাকা লাভ পেতে পারতাম। সুতরাং আমার ক্ষতি এখানে ৩ টাকা (১৫ – ১৮ = – ৩)। তবে এক্ষেত্রে আমার আয় কম হলেও সেটা কম ক্ষতিকর কেননা আমার মূলধন বা আসল অক্ষত আছে।
এবার আসি দ্বিতীয় ঝুঁকির প্রসংগে যাকে আমরা মূলধনের ঝুঁকি বলতে পারি। এ ধরণের ঝুঁকির ক্ষেত্রে আমরা লাভ তো পাবই না, বরঞ্চ আমাদের মূলধনই কমে যাবার বা একবারেই ফেরত না পাবার সম্ভাবনা থাকে। সচরাচর যেসব বিনিয়োগে অস্বাভাবিক বা অতিমুনাফার সম্ভাবনা থাকে সেগুলোতে মূলধনের ঝুঁকিও বেশি থাকে। আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায় মানুষজন অতিমুনাফার আশায় (যেমন একবছরেই বিনিয়োগ দ্বিগুন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি) ঝুঁকিপূর্ণ এবং অপ্রচলিত ও সরকারি অনুমোদনবিহীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়। এধরণের ক্ষেত্রে একটু মনে রাখতে হবে যে, অতি মুনাফা মানেই অতিরিক্ত ঝুঁকি।
বিনিয়োগের ঝুঁকি কমানোর একটি প্রচলিত উপায় হচ্ছে একটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না করে একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা; একে ফাইন্যান্সের ভাষায় বলে ‘ডাইভারসিফিকেশন’ (Diversification)। ব্যাপারটা এমন, আমার কাছে ১,০০০ টাকা আছে এবং সেটা আমি একটা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলাম। এখন যদি ওই ব্যবসা কোন কারণে মার খায়, তবে আমার পুরো বিনিয়োগই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই আমি পুরো ১,০০০ টাকা এক জায়গায় বিনিয়োগ না করে যদি দুটি ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা – ৫০০ টাকা করে বিনিয়োগ করি, তবে তাতে ঝুঁকির পরিমান কিছুটা কমে যাবে। এর কারণ হল, দুটি ব্যবসাতেই একই সাথে লোকসান হবার সম্ভাবনা কম থাকবে। ঝুঁকি নিয়ে আরো বিস্তারিত আমরা পরের ক্লাসগুলোতে দেখবো।

ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তা – অবসর এবং তারপর:

প্রবাদে আছে, ভবিষ্যতের চিন্তা করাই জ্ঞানীর কাজ – আর সেটা যদি হয় আর্থিক ভবিষ্যতের ব্যাপার তবে তো কথাই নেই। আমরা শৈশবে কোন আয় করি না, তাই আমাদের কোন সঞ্চয়ও থাকে না। উল্টো আমাদের বাবা-মাকে আমাদের পেছনে খরচ করতে হয়, – অর্থাৎ আমাদের সঞ্চয় থাকে ঋণাত্মক। যৌবনে কর্মজীবনে প্রবেশের পর আমরা আয় করা শুরু করি এবং আমাদের আয় ক্রমে বৃদ্ধি পায়। ফলে সঞ্চয়ের ক্ষমতাও একইভাবে বাড়তে থাকে। আবার বৃদ্ধ বয়সে গিয়ে কাজ থেকে অবসর নেবার পর আমাদের আয় কমে যায় বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। অথচ বৃদ্ধ বয়সে নানা শারীরিক জটিলতায় খরচ বৃদ্ধি পায়। ফলে সঞ্চয় আবার ঋণাত্মক বা নেগেটিভ হয় (মানে সঞ্চয় বৃদ্ধি তো পায়ই না বরং জমানো টাকা খরচ হতে থাকে)। তাই অবসর জীবনকে সচ্ছল রাখতে আমাদের অবসর জীবনের জন্য আর্থিক পরিকল্পনা নেয়াটা জরুরী। রিটায়ারমেন্টের জন্য আমাদের দেশে এতদিন প্রভিডেন্ট ফান্ডই ছিল আর্থিক সুরক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। এছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে সবাই সনাতন জনপ্রিয় ব্যবস্থাগুলো গ্রহন করতেন, যেমন: কোন স্থাবর সম্পদে বিনিয়োগ করা (যেমন বাড়ি করা বা দোকান কেনা) যা থেকে স্থায়ীভাবে আয় পাওয়া যাবে, কারও ব্যবসায়ে টাকা খাটানো, সরকারি সঞ্চয়পত্র কেনা বা FDR করা ইত্যাদি। তবে বর্তমানে উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও এখন বিভিন্ন আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠান নানা ধরণের পেনশন প্ল্যান চালু করেছে তবে এদের প্রচলন এখনো তুলনামূলক কম। ভবিষ্যত আর্থিক সুরক্ষার জন্য তাই আমাদের যার যার প্রযোজন ও সক্ষমতা অনুযায়ী রিটায়ারমেন্ট প্লান নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হল যে ক্ষেত্রে রিটায়ারমেন্টের জন্য বিনিয়োগ করবো তার রিটার্ন বা আয়ের হার কেমন, ঝুঁকির পরিমান কি, কত বছরের জন্য প্লান করবো ইত্যাদি। তবে যেহেতু অবসর জীবনের বিষয়, তাই এক্ষেত্রে বিনিয়োগে ঝুঁকি পরিমান বেশি হওয়া ঠিক নয়।

মোটামুটিভাবে এই হল ব্যক্তিগত জীবনে ফাইন্যান্সের ব্যবহারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক। যেহেতু এই কোর্সের উদ্দেশ্য ফাইন্যান্স সম্পর্কে সবাইকে প্রাথমিক ধারণা দেয়া এবং কোর্সটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তৈরি, তাই ইচ্ছা করেই ব্যক্তিগত ফাইন্যান্স/অর্থায়ন অংশটি একটু বড় করলাম। তারপরও আরও অনেক কিছুই আমরা পরের ক্লাস গুলোতে জানবো আশা রাখি। যেমন ব্যবসায়িক ও সরকারি পর্যায়ে ফাইন্যান্স বা অর্থায়নের ব্যবহার আমরা পরের ক্লাসে আলাপ করবো। এছাড়া অনেকে অনুরোধ করেছেন কোর্সের ভিডিও টিউটোরিয়াল আপলোড করতে – সেটা হয়তো এ সপ্তাহেই তা করতে পারবো। সবার প্রতি অনেক শুভকামনা রইলো সাথে থাকবার জন্য। সবাইকে ধন্যবাদ।

ইংরেজি ভোকাবুলারি শিক্ষা

ইংরেজি ভোকাবুলারি শিক্ষা

[শিক্ষক.কম এর অন্য সব কোর্সের মতো এটিও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিখানো হবে। তবে সব সুবিধা পেতে রেজিস্ট্রেশন করে নিন নিচের লিংকে]   কোর্সের শিরোনাম
ইংরেজি ভোকাবুলারি শিক্ষা


নিবন্ধনের লিংক 

কোর্সের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
ভোকাবুলারি শেখা অনেক জরুরী হলেও অনেকের জন্য এটা বেশ কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার। কিন্তু সামান্য কিছু টেকনিক (যেমন – related words, etymology, combined contexts, story about special words, mnemonics, image ইত্যাদি) ব্যবহার করে এবং অনেক মজা/গল্প করতে করতে ভোকাবুলারি শেখা যায়। এই কোর্সে প্রায় ৩০০০ ইংরেজি শব্দকে অত্যন্ত সহজ ও মজাদার উপায়ে শেখানো হবে। এই পদ্ধতিতে ১০০ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে ভোকাবুলারি শেখানো হয়েছে, এবং তাদের প্রত্যেকেরই কঠিন কঠিন শব্দ মনে রাখার ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি বলে দেখা গেছে।
 
কাদের জন্য কোর্স?
বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য অথবা বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকুরির সাক্ষাৎকারের জন্য যারা প্রস্তুতি নিতে চান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক প্রয়োজনেও যারা ভোকাবুলারি রপ্ত করতে চান, তাদের জন্য
 
কোর্সে কয়টি লেকচার থাকবে?
১৬টি
 
লেকচারগুলোর বর্নণা, কোর্সের সিলেবাস
৩০০০ এর অধিক শব্দকে গ্রুপ করে ৭৪টা চ্যাপ্টারে সাজানো হয়েছে। প্রতি ক্লাসে ৪/৫টা চ্যাপ্টার নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রতিটা ক্লাস এর দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। কোর্স শিডিউল (কোন ক্লাসে কোন চ্যাপ্টার পড়ানো হবে, সেটার লিস্ট) এবং ইতোমধ্যে পাবলিশকৃত লেকচারগুলোর লিংক নিচে দেয়া হলো -
[Lecture 01]- Abandon, Abundance and Scarcity, Add and Subtract, Agreement and Argument, Animal Planet
[Lecture 02]- Beauty/Ugly, Beg Pardon, Calm and Angry, Care/Seriousness, Clever and Stupid
[Lecture 03]- Cloth, Colors, Criticism, Economics, Environment
[Lecture 04] - Fear and Courage, Flattery, Food, Form/Shape
[Lecture 05] - Friends, Geography and Environment, Government and Politics, Happy and Gloomy
[Lecture 06]- Hate and Inclination, Hesitation and Frustration, Insult and Praise, Introduction, Laughter and Humor, Law
[Lecture 07]- Life and Death, Literature and Music, Loyalty and Cheating, Luck-By Chance
[Lecture 08] - Marriage and Family, Medical terms, Memory, Metals, Mimic
[Lecture 09] - Mind, Motions, Name, Newer and Older, Odor, Normal/Abnormal, Philosophy
[Lecture 10] - Plants, Predict the Future, Quarrel, Religion
[Lecture 11] - Restrain from Greed, Rude and Modest, Sanctity, Scold, Secrets, Sex, Shame and Pride
[Lecture 12] - Skill, Sleep/Boredom, Small and Large, Society and People
[Lecture 13] - Sounds, Stubborn, Study Time, The Good, The Bad
[Lecture 14]- Tick-talk, Time, Travel, True Lies
[Lecture 15] - Understand the Meaning, V for Vendetta, War, Book of Synonyms
[Lecture 16] - Double-Trouble, Treacherous words

কোর্স কবে থেকে শুরু হবে? কয় সপ্তাহ চলবে?
জুলাই ১৫, ২০১৩…… ১৬ সপ্তাহ ধরে চলবে
 
কোর্স শিক্ষকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ফরহাদ হোসেন মাসুম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ আরকানসা-তে মাস্টার্স প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত। বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য একাডেমিকভাবে ও অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন, এখনো এ বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি ও অনলাইন ম্যাটেরিয়াল তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। ভোকাবুলারি নিয়ে তার লেখা বই ভোকাবিল্ডার (Facebook page - www.facebook.com/vocabuilder) পাঠক মহলে অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে। 

সুন্নাত ও বিদআত

সুন্নাত ও বিদআত

ওয়াহাবীদের বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ হলো ‘বিদআত’। ওয়াহাবী আলেমদের ফতোয়াসমূহ থেকে বোঝা যায় এমন অনেক আমলই যা মুসলমানদের সর্ব সাধারণের কাছে সুন্নাত ও জায়েয বলে পরিগণিত ওয়াহাবীদের পক্ষ থেকে তা বিদআত বলে ঘোষিত হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো শরীয়তের বিধান বোঝার ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা ও স্থবিরতা। (তাদের গোঁড়ামী ও কূপমণ্ডূকতার কারণেই এক সময় তারা সাইকেলকেও শয়তানের বাহন বলে আখ্যায়িত করেছিল। অবশ্য এখন তাদের আলেমরা সৌদি সরকারের সর্বাধুনিক যানবাহনে আরোহণ করেন এবং তাকে বিদআত বলেন না) তাদের এরূপ চিন্তা-ভাবনার পিছনে বিশেষ কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।
আমরা জানি ইসলামের বিধানসমূহ যা মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে তাকে সহজ শরীয়ত বলে অভিহিত করা হয়েছে। তদুপরি ওয়াহাবিগণ অসংখ্য জায়েয বিষয়কে বিদআতের শ্রেণীতে ফেলে তা হারাম বলে ঘোষণা করেছে। তাই আমরা প্রথমেই সুন্নাত ও বিদআতের সংজ্ঞা ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থে সুন্নাত
সুন্নাত শব্দগতভাবে নিয়ম বা পদ্ধতি অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর বহুবচন হলো সুনান। সুন্নাত শব্দটি পবিত্র কোরআনে আল্লাহর জন্য যেমন ব্যবহৃত হয়েছে তেমনি পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ক্ষেত্রেও এসেছে,যেমন :
سُنَّةَ اللَّـهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلُ  وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّـهِ تَبْدِيلًا
“আল্লাহর নীতি পূর্ব হতেই এরূপ (যে,সত্য মিথ্যার উপর বিজয়ী হবে) এবং আল্লাহর নীতিতে কোন পরিবর্তন নেই।”
অন্যত্র বলেছেন : فَقَدْ مَضَتْ سُنَّتُ الْأَوَّلِينَ “(তাদের জন্যও) পূর্ববর্তীদের পথ (পূর্ববর্তীদের জন্য আল্লাহর অনুসৃত রীতি) নির্ধারিত হয়ে গেছে।”
সুন্নাতুল্লাহ্ বা আল্লাহর নীতি বলতে তাঁর গৃহীত প্রজ্ঞাময় রীতি ও পদ্ধতি বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর চিরাচরিত নীতি বা রীতি এটাই যে,সময়ের পরিক্রমায় তিনি জাতির পর জাতিকে সৃষ্টি করেন,তাদের উদ্দেশে নবী,ধর্মগ্রন্থ ও শরীয়ত (বিধিবিধান) প্রেরণ করেন,তাদের আল্লাহর আনুগত্যের পথ দেখান এবং এভাবে তাদের পরীক্ষা করেন যাতে করে তারা স্বাধীনভাবে নিজেই নিজের পথকে বেছে নিয়ে ঈমান ও সৎকর্মের পথে অগ্রসর হয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে (আল্লাহর সন্তুষ্টি) পৌঁছতে পারে। কিন্তু পূর্ববর্তী অধিকাংশ জাতির অনুসৃত রীতি এটা ছিল যে,তারা আল্লাহর প্রেরিত নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে অন্যায় ও সীমা লঙ্ঘনের পথ গ্রহণ করত। এভাবে নিজেদের আল্লাহর জন্য একটি নীতির উপযুক্ত করত আর তা হলো আল্লাহর শাস্তির উপযোগী হওয়া। তারা আল্লাহর প্রেরিত নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে আল্লাহর নির্ধারিত আজাবে পরিণত হয়ে ধ্বংস হতো। যেমন আল্লাহ বলেছেন :
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَىٰ وَيَسْتَغْفِرُ‌وا رَ‌بَّهُمْ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ قُبُلًا
  “হেদায়েত আসার পর এ প্রতীক্ষাই শুধু মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বিরত রাখে যে,কখন আসবে তাদের কাছে পূর্ববর্তীদের জন্য (আল্লাহর) অনুসৃত রীতি অথবা কখন আসবে তাদের কাছে সরাসরি আজাব।” 
মহানবী (সা.) ও আহলে বাইতের ইমামগণের হাদীসে সুন্নাত শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে :
ক) কোরআন ব্যতীত যা কিছু মহানবী (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের উন্নত জীবনের জন্য এনেছেন। এ অর্থে সুন্নাত একটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ধর্মীয় সকল বিধান-ইবাদত ও লেনদেনসহ যাবতীয় বিধান (ফরজ,মুস্তাহাব,হারাম,মাকরূহ,মুবাহ,চুক্তিসমূহ বৈধ বা অবৈধ হওয়া প্রভৃতি)-এর অন্তর্ভুক্ত।
খ) হাদীসসমূহে সুন্নাত শব্দটি শুধু পছন্দনীয় ও মুস্তাহাব কর্মের ব্যাপারেও ব্যবহৃত হয়েছে।
যদি ‘সুন্নাত’ শব্দটি ‘কিতাব’ শব্দের পাশাপাশি আসে তার অর্থ হলো প্রথমটি। যেমন ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে :
ما من شیءٍ إلا و فیه کتابٌ أو سُنّةٌ
‘এমন কোন বিষয় নেই যার বিধান ‘কিতাব’ অথবা ‘সুন্নাতে’ বর্ণিত হয় নি।
হাদীসসমূহে ‘সুন্নাত’ শব্দটি দ্বিতীয় অর্থেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে- السواک هو من السنّة و مطهرة للفم ‘মিসওয়াক একটি সুন্নাত। তা মুখবিবরকে পরিচ্ছন্ন রাখে।’
অন্যত্র হাদীসে এসেছে-
 من السنّة أن تُصلّی علی محمد و أهل بیته فی کلِّ جمعة ألف مرة
‘এটি সুন্নাত বলে গণ্য যে,প্রতি শুক্রবারে তোমরা এক হাজার বার রাসূল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের উপর দরূদ পড়বে।’
ফিকাহবিদদের পরিভাষায় সুন্নাত হলো মহানবী (সা.) ও পবিত্র ইমামগণের বাণী (কাওল),কর্ম (ফেল) এবং নীরব সমর্থনের (তাকরীর) বিষয়সমূহ। সকল মুসলমানই মহানবীর নিষ্পাপত্বে বিশ্বাস করে। তাই তাঁর বাণী,কর্ম ও নীরব সমর্থনের সকল বিষয়ই সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু শিয়ারা রাসূলের আহলে বাইতের পবিত্র ইমামগণকেও নিষ্পাপ বলে বিশ্বাস করে সেহেতু তাঁদের বাণী (قول),কর্ম (فعل) এবং নীরব সমর্থনের (تقریر) বিষয়সমূহও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে। কোন বিষয় সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত কিনা তার জন্য দু’টি পথ রয়েছে (১) মুতওয়াতির (বহুল বর্ণিত) হওয়া ও (২) গাইরি মুতাওয়াতির (অপেক্ষাকৃত কম বর্ণিত এবং একক সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ)। মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হাদীস হতে মানুষ নিশ্চিত বিশ্বাস লাভ করে যে,তা রাসূল ও ইমামগণ হতে প্রকৃতই বর্ণিত হয়েছে। তাই এরূপ হাদীসের বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। গাইরি মুতাওয়াতির হাদীসসমূহ দু’ভাগে ভাগ করা যায়। কখনো কখনো তার সঙ্গে এমন কিছু সমর্থক ইঙ্গিত থাকে যা মানুষকে হাদীসটি ইমাম হতে বর্ণিত হওয়াকেই প্রতিষ্ঠিত করে। এইরূপ সহায়ক উপাদান বিদ্যমান থাকলে সেরূপ হাদীসও নির্ভরযোগ্য ও পালনীয় বলে গণ্য। কিন্তু যদি কোন হাদীসের সঙ্গে সমর্থনকারী ইঙ্গিত না থাকে ও হাদীসটি ইমাম হতে বর্ণিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকে তবে তা নিশ্চিত বর্ণিত বলা যায় না,বরং তা সম্ভাব্য বর্ণিত বলে গণ্য এবং এক্ষেত্রে যদি বর্ণনাকারী ন্যায়পরায়ণ (আদেল অর্থাৎ শিয়া ইমামী নির্ভরযোগ্য রাবী) ও বিশ্বস্ত হয় তবেই শুধু তা গ্রহণযোগ্য হবে।
শাব্দিক অর্থে বিদআত (بِدعَت)
বিদআতের শাব্দিক অর্থ হলো অভূতপূর্ব ও নতুন কোন বিষয়। এ শব্দটি শাব্দিক অর্থে সাধারণত কর্তার পূর্ণতা ও সৃষ্টিশীল বৈশিষ্টের ইঙ্গিতবহ। (بَدِیع) শব্দের অর্থ হলো অভিনব ও নজীরবিহীন,এ শব্দটি যখন মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তখন তার অর্থ হলো মহান আল্লাহ বিশ্বকে কোন পূর্ববর্তী নজীর ছাড়াই কারো সাহায্য ব্যতীত ও কোন প্রাথমিক উপাদান ভিন্নই সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ তিনি সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোন নমুনারই অনুসরণ করেন নি।
বিদআত শব্দটি হাদীস গ্রন্থসমূহে সাধারণত শরীয়ত ও সুন্নাতের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ এমন কিছু করা যা ইসলামী শরীয়ত ও মহানবী (সা.)-এর সুন্নাতের পরিপন্থী বলে গণ্য। হযরত আলী (আ.) বলেছেন :
إنّما النّاس رجلان متبع شرعة و مبتدع بدعة
অর্থাৎ ‘মানুষ দু’ধরনের : হয় শরীয়তের অনুসারী নতুবা ধর্মের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভাবক’।
অন্যত্র তিনি মহানবীর নবুওয়াত সম্পর্কে বলেছেন :
إظهر به الشرائع المجعولة و قمع به البدع المدخولة
‘মহান আল্লাহ মহানবীর মাধ্যমে মানব জাতিকে তাদের অজানা ও ভুলে যাওয়া শরীয়তের সাথে পরিচিত করিয়েছেন (অজানা বিধানসমূহকে তাদের সামনে প্রকাশ করেছেন) এবং পূর্ববর্তী শরীয়তসমূহের মধ্যে যে বিদআত ও নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ সংযোজিত হয়েছিল তা হতে পরিশুদ্ধ করেছেন।’
অন্যত্র আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন :
ما أحدثت بدعة إلا ترک بها سنّة
‘এমন কোন বিদআতই (নব উদ্ভাবিত বিষয়ই) শরীয়তে প্রবেশ করে নি যার দ্বারা কোন না কোন সুন্নাত উপেক্ষিত ও পদদলিত না হয়েছে।’১০
পারিভাষিক অর্থে বিদআত
ফিকাহ্শাস্ত্রবিদ এবং মুহাদ্দিসগণ বিভিন্নভাবে বিদআতকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এখানে আমরা এরূপ কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করছি :
১। ইবনে রাজাব হাম্বালী বলেছেন : ‘বিদআত হলো নব উদ্ভাবিত বিষয় যার শরীয়তগত কোন ভিত্তি ও দলিল-প্রমাণ নেই। যদি কোন কিছুর শারয়ী দলিল থাকে তবে তা বিদআত বলে গণ্য নয়,যদিও শাব্দিক অর্থে তা বিদআত হয়ে থাকে।’১১
২। ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেন : ‘বিদআত হলো নব উদ্ভাবিত এমন বিষয় যার কোন শরীয়তগত প্রমাণ ও দলিল নেই। যদি শরীয়তে তার সপক্ষে কোন দলিল থাকে তবে তা বিদআত বলে গণ্য হবে না।’১২
৩। সাইয়্যেদ মুর্তাজা বলেছেন : ‘বিদআত হলো ধর্মে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করে তাকে ধর্মের সাথে সম্পর্কিত করা।’১৩
৪। আল্লামা মাজলিসী বলেছেন : ‘শরীয়তের ক্ষেত্রে বিদআত হলো এমন বিষয় যা রাসূলের মৃত্যুর পর ধর্মে সংযোজন করা হয়েছে এবং এর সপক্ষে কোন প্রমাণ কোরআন ও সুন্নাহয় নেই। তবে তা সাধারণ কোন বিষয়ের অন্তর্র্ভুক্ত হলে বিদআত হবে না।’১৪
হাদীসশাস্ত্র ও ফিকাহবিদদের বর্ণিত সংজ্ঞাসমূহ হতে এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে,বিদআত পারিভাষিক অর্থে ধর্মে কোরআন ও সুন্নাহর দলিল ব্যতিরেকে কোন নতুন বিধান সংযোজন বা বিয়োজন।
সুতরাং এমন কোন বিষয় (বাণী ও কর্ম) যার শরীয়তে পূর্ব নজীর নেই কিন্তু কোরআন ও সুন্নাহয় তার সপক্ষে দলিল-প্রমাণ রয়েছে অথবা তার ইঙ্গিত রয়েছে তবে তা বিদআত বলে গণ্য হবে না। যদিও মুজতাহিদ কোরআন ও সুন্নাহ হতে বিধান বের করতে ভুল করে থাকেন এবং হাদীস হতে সঠিক অর্থ উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়ে থাকেন। কারণ ইজতিহাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে শাস্তি দিবেন না।
এখানে উল্লেখ্য যে,বুদ্ধিবৃত্তিক অকাট্য বিধানও কোরআন ও সুন্নাহ কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। অকাট্য বুদ্ধিবৃত্তি শরীয়তের বিধানের অন্যতম উৎস। যদি বুদ্ধিবৃত্তিক অকাট্য দলিলের ভিত্তিতে কোন নতুন ধর্মীয় বিধান হস্তগত হয়,তবে তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
বিদআত হারাম
ধর্মের মধ্যে নতুন কিছুর সংযোজন বা বিয়োজন এ অর্থে বিদআত হারাম কর্ম বলে বিবেচিত। কারণ শরীয়তের বিধান প্রণয়নের দায়িত্ব এককভাবে শুধুই আল্লাহর এবং তাঁর ইচ্ছা ও অনুমতি ব্যতীত শরীয়তের বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার কারো নেই। পবিত্র কোরআন ধর্মীয় পুরোহিতদের অন্ধ অনুসরণের কারণে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং তাদের নিরঙ্কুশ কর্মবিধায়ক নির্ধারণ করার কারণে ভর্ৎসনা করে বলেছে,
اتَّخَذُوا أَحْبَارَ‌هُمْ وَرُ‌هْبَانَهُمْ أَرْ‌بَابًا مِّن دُونِ اللَّـهِ
“তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের ধর্মযাজক ও সংসার বিরাগী পুরোহিতদের নিজেদের পালনকর্তা বলে গ্রহণ করেছে।” ১৫
যদিও ইহুদী আলেমরা তাঁদের অনুসারীদের নিজেদের উপাসনার দিকে আহ্বান করতেন না কিংবা তাঁদের অনুসারীরাও তাঁদের উপাসনা করত না,কিন্তু তাঁরা আল্লাহর হালাল করা বস্তুকে হারাম এবং হারাম করা বস্তুকে হালাল বলে ঘোষণা করতেন। জনসাধারণ তা জানা সত্ত্বেও তাঁদের আনুগত্য করত ও তাঁদের কথা শুনত। এ কারণেই এ আনুগত্যকে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিপালক গণ্যকারী বলেছেন যা প্রকৃতপক্ষে একরূপ উপাসনার নামান্তর।’১৬
খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,
 وَرَ‌هْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ
 “আর বৈরাগ্য,তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছিল যা আল্লাহ তাদের জন্য নির্ধারণ করেন নি।”১৭
সহীহ হাদীসসমূহেও কঠোরভাবে বিদআতকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন,کل بدعةٍ ضلالة، و کلّ ضلالة سبیلها فی النار ‘প্রতিটি বিদআতই স্পষ্ট বিচ্যুতি এবং প্রতিটি বিচ্যুতির পরিণতিই জাহান্নাম।’১৮
বিদআতের উপাদানসমূহ
হাদীস ও ফিকাহ্শাস্ত্রবিদদের উপস্থাপিত সংজ্ঞা হতে আমরা বলতে পারি,বিদআতের তিনটি মৌলিক উপাদান রয়েছে :
১। যদি কেউ কোন বিধান বা আদেশকে ধর্মের উপর আরোপ করে অথবা কোন ধর্মীয় বিধিকে ধর্ম বহির্ভূত বলে ঘোষণা করে তা বিদআত হবে। যেমন যদি কেউ الصلوة خیرٌمن النوم-কে আজানের অংশ বলে ঘোষণা করে অথবা ‘মুতা বিবাহ’যা রাসূলের  যুগে বৈধ ঘোষিত ছিল তা অবৈধ বলে ঘোষণা করে। মহান আল্লাহ মুশরিকদের এ জন্য তিরস্কার করেছেন যে,তারা তাঁর প্রতি মিথ্যা আরোপ করত।
  قُلْ آللَّـهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللَّـهِ تَفْتَرُ‌ونَ  “বলুন,আল্লাহ কি তোমাদের অনুমতি দিয়েছেন নাকি তোমরা আল্লাহর উপর অন্যায় মিথ্যারোপ করে থাক।”১৯
অন্যত্র বলেছেন,
 فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـٰذَا مِنْ عِندِ اللَّـهِ لِيَشْتَرُ‌وا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا
 “তাদের জন্য দুর্ভোগ যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লিখে,অতঃপর বলে,এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। যাতে করে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে।” ২০
২। বিদআত তখনই নিন্দনীয় ও হারাম হবে যখন তার প্রণনয়নকারী তার নষ্ট ও বিকৃত বিশ্বাস অথবা শরীয়তে অবৈধ ঘোষিত কোন কর্ম সমাজে প্রচার করবে। কেবল এরূপ বিশ্বাস পোষণ বা গোপনে এরূপ কর্ম সম্পাদন কোন বিষয় বিদআত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
মুসলিম নিজ সূত্রে মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,
 من دعا ألی ضلالة کان علیه من الإثم مثل آثام من یتبع لا ینقص ذلک من آثامهم شیئا
‘যে কেউ বিচ্যুতির দিকে আহ্বান করবে,তার গুনাহ ঐ সকল ব্যক্তির গুনাহের সমান যারা ঐ কাজে তাকে অনুসরণ করবে অবশ্য ঐ গুনাহের অনুসরণকারীদের পাপ হতে এতে কিছুই কম করা হবে না।’২১
এই হাদীসটিতে বিদআতের প্রতি আহ্বানের উল্লেখ রয়েছে যা তা প্রচারের দিকটির প্রতি ইশারা করছে।
৩। দ্বীনের মধ্যে উদ্ভাবিত বিষয়টি বিদআত হতে হলে এর কোরআন ও সুন্নাহ্ভিত্তিক কোন দলিল থাকা চলবে না। বিদআতের পারিভাষিক যে সংজ্ঞা আমরা উল্লেখ করেছি তা হতে স্পষ্ট বোঝা যায় কোন বিষয় বিদআত হওয়ার এটি অন্যতম শর্ত। তাই দু’টি বিষয় বিদআতের অন্তর্ভুক্ত নয় :
ক) নব উদ্ভাবিত বিষয়টি অভিনব হলেও তার জন্য শরীয়তে বিশেষ দলিল বিদ্যমান রয়েছে,যদিও তা রাসূলের জীবদ্দশায় না ঘটে থাকে। যেমন রাসূলের জীবদ্দশায় মদীনায় কখনোই ভূমিকম্প হয় নি। তাই ‘সালাতুল আয়াত’ যা ভীতিকর যে কোন কারণে পড়া হয় এক্ষেত্রে পড়া হয় নি,কিন্তু পরবর্তীতে কুফায় একবার ভূমিকম্প হলে ইবনে আব্বাস ভূমিকম্পের জন্য আয়াতের নামায পড়েন।
খ) এমন সকল বিষয় যা ইসলামের সর্বজনীন নীতির অধীন। ঐ সর্বজনীন বিধানই ইসলামী শরীয়তের রক্ষক ও নিশ্চয়তা দানকারী ঐ অর্থে যে,শরীয়তে বিদ্যমান সর্বজনীন দলিলসমূহই নতুন উদ্ভাবিত বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এটিই ইসলামী বিধানের গতিশীলতার টিকে থাকার রহস্য। এ কারণেই শরীয়তে উদ্ভূত নতুন কোন বিষয়কে এ নীতির ভিত্তিতে ধর্মীয় বলে ঘোষণা করা হলে যদি তার জন্য বিশেষ কোন বিধান শরীয়তে (কোরআন ও সুন্নাহতে) পাওয়া না যায়,কিন্তু তা ঐ সর্বজনীন দলিলসমূহের আওতায় পড়ে,তবে তা বিদআত বলে গণ্য হবে না। যেমন  আল কোরআনের এ আয়াতটি :
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ
 “তোমাদের শত্রুদের জন্য তোমাদের সাধ্যমত সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখ।” ২২
 ইসলামের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হলেও যেহেতু এর আহ্বান সর্বজনীন ও সাধ্যমত সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখার বিষয়টি বর্তমানে তৎকালীন সময়ের হতে ভিন্নরূপ। তাই এখন কোন মুসলিম দেশের উচিত হবে শত্রুদের সন্ত্রস্ত রাখতে আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম,যেমন,ট্যাংক,যুদ্ধ বিমান,নৌবহর ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত রাখা। সহীহ বুখারীতে রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,তিনি বলেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে নিজে কোরআন শিক্ষা লাভ করে এবং অন্যকে তা শিক্ষাদান করে।’এখন যদি কেউ আধুনিক পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা করে তবে তা ঐ নির্দেশের বহির্ভূত বলে গণ্য হবে না। কারণ তা এই সর্বজনীন নির্দেশের অন্তর্গত। এ যুক্তিতে ইবনে তাইমিয়া ও ওয়াহাবীদের ঘোষিত অনেক বিষয়ই বিদাআতের সীমার বাইরে পড়বে। যেমন,কবরের উপর সৌধ নির্মাণ,আল্লাহর ওলীদের জন্য শোক পালন,তাঁদের জন্মদিনে উৎসব পালন ইত্যাদি। কারণ এর সবগুলোই মহান আল্লাহর সর্বজনীন বিধান নিম্নোক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে :
وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ‌ اللَّـهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ
“এবং কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহ্ভীতি প্রসূত।”  ২৩
বিদআতের প্রকারভেদ
পূর্ববর্তী আলোচনা হতে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে যে শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদআত নিন্দনীয় (অপছন্দনীয়) একটি বিষয় এবং তা শরীয়তের বিধান মতে হারামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং বিদআতকে হাসান (পছন্দনীয়) ও কাবিহ (অপছন্দনীয়) এ দু’ভাগে ভাগ করা সঠিক নয়। কিন্তু আহলে সুন্নাতের আলেমদের মতে বিদআত ‘হাসান’ও ‘কাবিহ’এ দু’ভাগে বিভক্ত। ২৪
বিদআতকে বৈধ ও অবৈধ অর্থাৎ পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় এরূপ বিভাজনের কোন বৈধতা নেই। কারণ বিদআত হলো এমন বিষয় যার কোন শরীয়তগত ভিত্তি নেই অর্থাৎ এমন কোন বিধান সৃষ্টি করা যার উৎস কোরআন ও সুন্নাতে খুঁজে পাওয়া যায় না,তা-ই বিদআত। তাই এরূপ বিধান নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় ও হারাম বলে গণ্য।
কোন বিষয় বা কর্মে মোবাহের কর্মগত বিধান
(যে ক্ষেত্রে শরীয়ত কোন বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করে নি সেক্ষেত্রে ঐ বিষয়টি বৈধ হওয়ার সার্বিত নীতি)
উসূলশাস্ত্রের পণ্ডিতগণ বলে থাকেন,‘কোন বিষয় বা কর্মের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো বৈধতার নীতি অর্থাৎ যদি কোন বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা না থাকে তবে সেক্ষেত্রে বৈধতার অথবা স্বাধীনতার সর্বজনীন নীতি কার্যকর হবে। যাকে উসূলশাস্ত্রের পরিভাষায় আসালাতুল হিল্লিয়াত (বৈধতার সর্বজনীন নীতি) অথবা আসালাতুল জাওয়ায বলা হয়। স্বাধীনতার সর্বজনীন নীতি (আসালাতুল বারায়াত) হতেও এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এ নীতি মতে যে বিষয়ে শরীয়তের প্রবর্তক করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়কে বর্ণনা করেন নি সে বিষয়টি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ বলে গণ্য অর্থাৎ সেক্ষেত্রে শরীয়তের অনুসারীদের স্বাধীনতা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন :
قُل لَّا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّ‌مًا عَلَىٰ طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَن يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ‌ فَإِنَّهُ رِ‌جْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ‌ اللَّـهِ
“আপনি বলে দিন ;যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে,তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্য যা সে ভক্ষণ করে;কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস-এটা অপবিত্র ও অবৈধ-অথবা যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয় সে কারণে।”২৫
ড. ইউসুফ কারদ্বাভী বলেছেন,‘ইসলাম সর্বপ্রথম যে নীতি প্রবর্তন করেছে তা হলো সকল বস্তু ও কল্যাণকর বিষয়ের ক্ষেত্রে বৈধতার সর্বজনীন নীতি এবং যে বিষয়গুলো শরীয়তের প্রবর্তক সুস্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেন নি,তার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা হতে মুক্তির নীতি।’২৬
রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের অনুসৃত নীতিও সুন্নাত বলে গণ্য এবং তা শরীয়তের নীতি নির্ধারক।
এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোকে ওয়াহাবীরা এজন্য বিদআত বলে থাকে যে,তারা রাসূলের আহলে বাইতের সুন্নাতকে শরীয়তের জন্য নীতি নির্ধারক ও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না। অথচ সহীহ হাদীসসমূহে তাদের অনুসৃত কর্ম ও নীতিও শরীয়তের নির্ধারক ও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ঘোষিত হয়েছে। এখানে আমরা এরূপ কয়েকটি দলিলে প্রতি ইশারা করছি।
১। আয়াতে তাত্বহীর
মহান আল্লাহ বলেছেন :
إِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌ا
“নিশ্চয় আল্লাহ চান হে (নবীর) আহলে বাইত! তোমাদের হতে সকল অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।” ২৭
সহীহ মুসলিম হযরত আয়েশা সূত্রে বর্ণনা করেছে যে,একদিন সকালে মহানবী (সা.) গৃহ হতে বের হলেন এবং তখন তাঁর কাঁধে সেলাইবিহীন বিশেষ চাদর ছিল। (অতঃপর যখন তিনি বসলেন) তখন হাসান ইবনে আলী এসে ঐ চাদরের ভিতর প্রবেশ করল,তারপর হুসাইন তাতে প্রবেশ করল,তারপর ফাতেমা আসলে তাঁকেও চাদরে আবৃত করলেন,অতঃপর আলী আসলে তাঁকেও তাতে আবৃত করলেন। তাঁরা সকলে প্রবেশ করলে রাসূল এ আয়াতটি পাঠ করলেন,২৮
إِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌ا
আয়াতটির লক্ষণীয় বিষয়সমূহ :
প্রথমত আয়াতটিতে ((إنّما)) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যা দ্বারা বিধানকে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর জন্য সীমিত করা হয় এবং এটি সীমিতকরণের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যকরণশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আয়াতটিতে আল্লাহর ইচ্ছা বিশেষ ব্যক্তিবর্গের (আহলে বাইতের) জন্য নির্দিষ্ট ঘোষিত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত আয়াতটিতে আল্লাহর ইচ্ছা অবশ্যম্ভাবী ইচ্ছার (ইরাদায়ে তাকভীনি) অন্তর্ভুক্ত যার কোন ব্যত্যয় হয় না,إنّما أمره اذا أراد شیئاً أن یقول له کن فیکن “কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন বলেন : ‘হও’,অতঃপর তা হয়ে যায়।”
আয়াতটিতে (আয়াতে তাত্বহীরে) আল্লাহর অবশ্যম্ভাবী ইচ্ছার (ইরাদায়ে তাকভীনী) প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে,কেননা তা শরীয়তের বিধানগত ইচ্ছার (ইরাদায়ে তাশরীয়ী) অন্তর্ভুক্ত হলে যাতে বান্দার স্বাধীনতা রয়েছে সকল বান্দাই তার অন্তর্ভুক্ত হতো ও এরূপ পবিত্রতার আকাঙ্ক্ষা সবার জন্য প্রযোজ্য হতো। সেক্ষেত্রে আলাদাভাবে আহলে বাইতকে উল্লেখ মূল্যহীন হয়ে পড়ত। অর্থাৎ এ আয়াতে বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহর বিশেষ অলঙ্ঘনীয় ইচ্ছার প্রতিফলনের কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয়ত আয়াতটিতে যে رجس বা অপবিত্রতার কথা বলা হয়েছে তার অর্থ এমন অপবিত্রতা যা বস্তুর প্রতি অন্যদের ঘৃণার উদ্রেক করে। তাই কোরআন رجس শব্দটি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক উভয় অপবিত্রতার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করেছে। যেমন :
أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ‌ فَإِنَّهُ رِ‌جْسٌ
“অথবা শুকরের মাংস,নিশ্চয়ই তা অপবিত্র” এবং
وَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَ‌ضٌ فَزَادَتْهُمْ رِ‌جْسًا إِلَىٰ رِ‌جْسِهِمْ وَمَاتُوا وَهُمْ كَافِرُ‌ونَ
“এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি (সন্দেহ ও কপটতার) রয়েছে তা তাদের অপবিত্রতার উপর অপবিত্রতা বৃদ্ধি করতে থাকে এবং তারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।” (সূরা তওবা: ১২৫)
 এর বিপরীতে পবিত্রতাও বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক উভয় বিষয়ে হতে পারে। আল্লামা তাবাতাবায়ী বলেছেন: রিজস বা অপবিত্রতা হলো এমন আত্মিক অনুভূতি ও প্রভাব যা বিভ্রান্ত ও বিচ্যুত বিশ্বাস এবং নিকৃষ্ট কর্ম হতে উদ্ভূত। আলোচ্য আয়াতে رجس শব্দটির পূর্বে ال এসেছে যা ‘আলিফ ওয়া লামে জিন্স’নামে অভিহিত তা সকল প্রকৃতির অপবিত্রতাকে শামিল করে। তাই আয়াতে আত্মিক অপবিত্রতা অর্থাৎ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বা কর্মের ক্ষেত্রে ভুলের কারণ হতে পারে এমন সকল অপবিত্রতা হতেও মুক্তি ও পবিত্রতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এবং এরূপ পবিত্রতা কেবল ঐশী নিষ্পাপত্বের (স্রষ্টা প্রদত্ত পবিত্রতার) ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য অর্থাৎ ব্যক্তির মধ্যে এমন আত্মিক অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে যা তাকে ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অসৎ কর্ম হতে নিবৃত রাখে।’২৯
যে বিশিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর অলঙ্ঘনীয় ইচ্ছার অধীনে সকল প্রকার ত্রুটি ও পাপ-পঙ্কিলতা হতে মুক্ত ঘোষিত হয়েছেন,নিঃসন্দেহে তাঁরা নিষ্পাপ ও পবিত্র এবং যে কোন পবিত্র ও নিষ্পাপ ব্যক্তির কর্ম ও নীতি আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে হওয়ায় সুন্নাত ও সকলের জন্য প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গণ্য। তাই আল্লাহর নবীর আহলে বাইতের সদস্যদের অনুসৃত নীতিও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ও প্রামাণ্য দলিল বলে গণ্য।
২। হাদীসে সাকালাইন
তিরমিযী তাঁর সহীহ গ্রন্থে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারী হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.)-কে বিদায় হজ্জ্বের সময় উটের পিঠে বসে বক্তব্য দিতে দেখলাম ও তাঁকে বলতে শুনলাম :
‘হে লোকসকল! আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান ও ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি। যদি তোমরা তা আঁকড়ে ধর,তাহলে কখনোই বিভ্রান্ত হবে না : আল্লাহর কিতাব ও আমার রক্ত সম্পর্কীয় আহলে বাইত।’৩০
হাদীসটি হতে বিভিন্নভাবে মহানবীর আহলে বাইতের নিষ্পাপত্ব প্রমাণ করা যায়। হাদীসটিতে কোরআন ও আহলে বাইতকে একত্রে উল্লেখ করে উভয়কে আঁকড়ে ধরতে বলা হয়েছে। তাই কোরআন যেরূপ সকল প্রকার ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে,আহলে বাইতও সেরূপ সকল ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে।
তথ্যসূত্র
১। সূরা ফাত্হ : ২৩।
২। সূরা আনফাল : ৩৮।
৩। সূরা কাহ্ফ : ৫৫।
৪। উসুলে কাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৭৬,কিতবু ফাজলুল ইলম,বাবুর রাদ ইলাল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ,হাদীস নং ৪।
*যেসব রেওয়ায়েতে সুন্নাত ও বিদআত শব্দ পাশাপাশি এসেছে তাতেও সুন্নাত এ প্রথম অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
৫। ওয়াসায়িলুশ শিয়া,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৪৭।
৬। ওয়াসায়িলুশ শিয়া,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৪৭।
৭। অভিধান গ্রন্থসমূহ দ্রষ্টব্য। আল আইন,মুফরাদাত লি রাগিব ইসফাহানী,লিসানুল আরাব প্রভৃতি,‘بدع’  ধাতু।
৮ । নাহজুল বালাগা,খুতবা নং ১৭৬।
৯। প্রাগুক্ত,খুতবা নং ১৬১।
১০। প্রাগুক্ত,খুতবা নং  ১৪৫।
১১। জামেয়ুল উলুম ওয়াল হিকাম,পৃ. ১৬০।
১২। ফাতহুল বারী,১৭তম খণ্ড,পৃ. ৯।
১৩। রিসালাতু শারিফ আল মুরতাজা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৬৪।
১৪। বিহারুল আনওয়ার,৭৪তম খণ্ড,পৃ. ২০২।
১৫ । সূরা তাওবা : ৩১।
১৬। উসূলে কাফী,৪র্থ খণ্ড,কিতাবুল ঈমান ওয়াল কুফর,শিরক অধ্যায়;তাফসীরে তাবারী,১ম খণ্ড,পৃ. ৮০।
১৭। সূরা হাদীদ : ২৭।
১৮। উসূলে কাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৬৪,কিতাবুল ফাজলিল ইলম,বিদআত অধ্যায়,হাদীস নং-৮।
১৯। সূরা ইউনুস : ৫৯।
২০। সূরা বাকারা : ৭৯।
২১। সহীহ মুসলিম,৮ম খণ্ড,পৃ. ৬২,কিতাবুল ইলম। সহীহ বুখারী,৯ম খণ্ড,বাবুল ইতিসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ (কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের অপরিহার্যতা অধ্যায়)
২২। সূরা আনফাল : ৬০।
২৩। সূরা হাজ্জ্ব : ৩২।
২৪। ইবনে আসির,আন নেহায়া,১ম খণ্ড,পৃ. ৭৯।
২৫। সূরা আনআম : ১৪৫।
২৬। আল হালাল ওয়াল হারাম,পৃ. ৩৩-৩৫।
২৭। সূরা আহযাব : ৩৩।
২৮। সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,পৃ. ১৩০।
২৯। তাফসীরে আল মিযান,১৬তম খণ্ড,পৃ. ৩১২।
৩০। সহীহ তিরমিযী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৬২১।

IELTS এর সহজ পাঠ

 IELTS এর সহজ পাঠ


শিক্ষক.কম এবং Higher Study Abroad এর যৌথ পরিবেশনায় শুরু হচ্ছে IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতি কোর্স। কোর্সটির  নাম আই ই এল টি এস এর সহজ পাঠ

এখানে ক্লিক করে কোর্সে রেজিস্ট্রেশন করে নিন।



কোর্সটির  নাম আই ই এল টি এস এর সহজ পাঠ
ভূমিকা
INTERNATIONAL ENGLISH LANGUAGE TEST SYSTEM (ACADEMIC)   অথবা আই ই এল টি এস একটি জনপ্রিয় পরীক্ষা বিদেশে পড়াশুনা করতে যাওয়ার জন্য। এ কোর্সে টেস্ট এর সবকিছু খুব সহজভাবে উপস্থাপন করা হবে। কোর্সের প্রাথমিক বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা দিয়ে শুরু করে এরপর বিশদভাবে প্রস্তুতি সহ সবকিছু নিয়ে কোর্স সাজানো হয়েছে।

কাদের জন্য এই কোর্সঃ

এ কোর্সে সবাই অংশগ্রহন করতে পারবেন কিন্ত ইংরেজী অনুরাগীদের স্বাগতম।

কয়টি লেকচার থাকবে?

এ কোর্সে সর্বমোট বিশটা লেকচার থাকবে।

কবে ক্লাস শুরু

অক্টোবর ১, ২০১৩ হতে।  প্রতি সপ্তাহে ৩টি করে লেকচার থাকবে।

সিলেবাসঃ

১ আই এ এল টি এস নিয়ে প্রাথমিক ধারণা।
২ স্পিকিং অংশ নিয়ে একটুখানি।
৩ রিডিং অংশ খতম করার কৌশল।
৪ আই এ এল টি এস এর রাইটিং নিয়ে জানবেন।
৫ লিসেনিং নিয়ে কিছু বলার ছিল।
৬ স্পিকিং এর পার্ট-২ নিয়ে আলোচনা।
৭ আই এ এল টি এস এর রাইটিং টাস্ক-১ নিয়ে জানবেন।
৮ রিডিং অংশ খতম করার আর ও বিশেষ কৌশল।
৯  রাইটিং টাস্ক-১ নিয়ে আলোচনা।
১০ লিসেনিং এর ঘাড় ভেঙ্গে দিন।
১১ লিসেনিং এর ঘাড় মটকে দিন।
১২  রিডিং অংশ খতম করার আর ও বিশেষ কিছু কৌশল।
১৩ রিডিং অংশ ঘায়েল করার টিপস।
১৪ স্পিকিং এর পার্ট-২ ও ৩ নিয়ে আলোচনা।
১৫ স্পিকিং এর পার্ট-২ ও ৩ নিয়ে আলোচনা।
১৬ রাইটিং টাস্ক-২ নিয়ে আলোচনা।
১৭ রাইটিং টাস্ক-২ নিয়ে আলোচনা।
১৮ রাইটিং টাস্ক-২ নিয়ে আলোচনা।
১৯ লিসেনিং এর শেষ অংশ ব্যবচ্ছেদ।
২০ শেষকথা।

কোর্স শিক্ষকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ

আমি রায়হান চৌধুরী। ব্যাচেলর শেষ করেছি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আর অনেক চেষ্টার পর আই ই এল টি এস টেস্ট এ একটা ভালো ব্যান্ড স্কোর পেয়েছি। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশের গ্রামের প্রাথমিক স্কুল এ ইংরেজী  শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য কাজ করা।

নবী প্রেমের ৪১টি পুষ্প

নবী প্রেমের ৪১টি পুষ্প

“আমি শুয়ে যাব ইয়া মুস্তাফা বলতে বলতে, খুলব আঁখি যুগল ছাল্লে আলা বলতে বলতে।”


কুরআনুল কারীমে নবীয়ে রহমতের (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) উপর দুরূদ পড়ার নির্দেশ:
মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন ।
﴿اِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلىٰ النَّبِيِّ- يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْ تَسْلِيْمًا﴾ {الاحزاب:٥٦ }
নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর উপর দুরূদ পড়েন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দুরূদ পড়ো এবং পরিপূর্ণ সালাম প্রেরণ করো। (সূরা আহযাব, আয়াত- ৫৬)
ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) এর অভিমত:
অত্র আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাহদেরকে তাঁর প্রিয়তম বান্দা ও নবীর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) মালায়ে আ’লায় তাঁর নিকট যে মর্যাদা রয়েছে তা জানিয়ে দিয়েছেন। কেননা তিনি (রাব্বুল আলামীন) তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাদেও সামনে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) গুণ বর্ণনা করেন। আর সকল ফেরেশতা নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর উপর দুরূদ পড়েন। অতঃপর মহান আল্লাহ তা’আলা নি¤œ জগতবাসীকে তাঁর প্রিয় হাবীবের উপর দুরূদ ও সালাম প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে উচ্চজগতবাসী ও নিজগতবাসীর পক্ষ থেকে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি প্রেরিত গুণগান একত্র হয়ে যায়।
(তথ্যসূত্র: তাফসীরুল কুরআনিল আযী-ম, খন্ড-০৩,পৃ.৪৩২)
** এখানে একটি সুক্ষ্ম তত্ত্ব অনুধাবন করা প্রয়োজন। আর তা হলো মহান আল্লাহ এক, একক। তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর কোন কর্মকান্ডে কাউকে তিনি শরীক করেন না। যেমন- সৃষ্টিকরা, রিযিক দেয়া, মৃত্যুদান এবং পুনরুজ্জীবিত করা ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহরই শান, বান্দাহ এগুলো কখনো করতে পারে না। কিন্তু যখনই প্রাণের নবী নুরের রবি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মর্যাদার কথা আসে, সম্মানের কথা আসে তখন মওলায়ে কায়েনাত মহান রাব্বুল আলামীন নিজেই বলে উঠেন আমি লা-শরীক মালিক নিজেই শরীক হয়ে গেলাম। আমার মাহবুবের মর্যাদা র্চচায় আমি স্বয়ং আপন সৃষ্টিকুলের সাথে অংশ গ্রহন করি। যেমনটি মহান আল্লাহ উর্পযুক্ত আয়াতে বলেন-“নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর উপর দুরূদ পড়েন”। এখানে আরো একটি বিষয় বুঝা প্রয়োজন যে, আল্লাহ বলেছেন, “তাঁর ফেরেশতাগণ”। অপর স্থানে আদমকে সিজদা করার ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা। اُسْجُدُوْا لْاٰدَمَ فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ اَجْمَعِيْنُ
“তোমরা আদমকে সিজদা কর, অতঃপর সকল ফেরেশতা আদমকে সিজদা করল”। দেখুন, এখানেও ফেরেশতার কথা আছে এবং দুরূদের আয়াতেও আছে। কিন্তু দুরূদের বেলায় আল্লাহ “তাঁর ফেরেশতাগণ” উল্লেখ করেছেন, আর আদমের সিজদার বেলায় শুধু “ফেরেশতাগণ” উল্লেখ করেছেন। এরূপ কেন করলেন? এর উত্তর- যখনই আল্লাহ তাঁর প্রিয় মাহবুবের মর্যাদা, সম্মান নিয়ে আলোচনা করেন, তখন এ আলোচনায় সকল ফেরেশতাকে তিনি নিজের সাথে সম্পর্কিত করে মর্যাদার আসনে সমাসীন করেন। যদিও বা সকল ফেরেশতা আল্লাহরই তবুও নিজের দিকে সম্পর্কিত করেননি। যখনই আপন মাহবুবের আলোচনা উপস্থিত তখন বলে উঠলেন “তার ফেরেশতা”। সুবহানাল্লাহ!
এভাবে প্রিয়নবীর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) আগমনে ও তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নের প্রতিশ্রুতি গ্রহনের সম্মেলনে সকল নবীদের সাথে মহান প্রভু নিজেকেও শরীক করে নেন। যেমন কোরআন ঘোষণা করছেন
(وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيِّنَ لِمَا اَتَيْتُكُمْ مِنَ كِتَابٍ وَ حِكْمَةٍ ثُمَّ جَاۤءَكُمْ رَسُوْلٌ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لِتُؤمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَاَقْرَرْتُمْ وَاَخَذْتُمْ عَلىٰ ذَلِكُمْ اِصْرِيْ -قَالُوْاۤ اَقْرَرْنَا- قَالَ فَاشْهَدُوْا وِاَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِيْنَ)
আল্লাহ তা’আলা যখন নবীগণের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহন করলেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্য হতে যা কিছু দান করেছি, অতঃপর তোমাদের নিকট এমন একজন রাসূল আগমন করবেন, যিনি তোমাদের সঙ্গে যা আছে তার সত্যায়ন কারী। তোমরা অবশ্যই উক্ত রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে সহযোগীতা করবে।
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন- তোমরা কি স্বীকার করেছো এবং আমার এ শর্ত মেনে নিয়েছো? তাঁরা বললো- আমরা স্বীকার করেছি এবং মেনে নিয়েছি। তিনি আরো বলেন যে, তবে তোমরা সাক্ষী থাকো, আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষীগণের অন্তর্ভূক্ত রয়েছি”। (সূরা আলে ইমরান, পারা-৩, আয়াত-৮১)
“তফসীরে কবীর, তফসীরে কুরতুবী ও খাসায়েসুল কুবরা” তে অত্র আয়াতের বিশ্লেষণে বিবৃত হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা সকল নবীকে রূহ জগতে একত্রিত কওে একটি সম্মেলন আহবান করেন। সেখানে হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনের ব্যাপারে আলোচনা, তাঁর প্রতি দুরূদ ও সালাম প্রেরণের আহবান ও সহযোগীতা করার প্রতিশ্রুতি নেন।
প্রিয় ইসলামী ভাই ও বোন! বুঝা গেল যে, প্রিয়নবী হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর শান, মর্যাদা ও গুনাগুণ বর্ণনায় মহান প্রভু স্বয়ং শরীক থাকেন। আর কেনই বা থাকবেন না? তিনি নিজেই তো ঘোষণা দেনÑ
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
আর আমি আপনার জন্যই আপনার স্মরণকে উচ্চ করেছি।
(সূরা আলামনাশরাহ, আয়াত-০৪)
*সুন্নাতে নববিয়্যাহতে নবী করিম(সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম)এর উপর সালাত ও সালাম প্রেরণ প্রসঙ্গ:
এব্যাপারে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু নিম্নরূপ:-
হাদিস (১):
হযরত আবু তালহা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন- তিনি (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম)বললেন, হযরত জিব্রাইল (আ) এ মাত্র আমার নিকট এসে বলেন- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন- হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) আপনি কি একথায় আনন্দিত হবেন না যে, আপনার কোন উম্মত যদি আপনার প্রতি একবার দুরূদ শরীফ পড়ে, তাহলে আমি তাঁর উপর ১০টি রহমত নাযিল করি। আর যদি একবার আপনাকে সালাম দেয়, তাহলে আমি তাঁর উপর ১০টি সালামতি (নিরাপত্তা বিধান) নাযিল করি। (তথ্যসূত্র: আহমদ- ৪র্থ খন্ড, পৃষ্টা-৩০, বাগাভী- ৩য় খন্ড, পৃষ্টা-১৯৬)
হাদিস (২):
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, তোমরা আমার কবরকে ইদের স্থান বানাইওনা। আমা উপর দুরূদ পড়। কেননা তোমরা যে অবস্থায় থাকনা কেন তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পৌছে। (আবু দা’উদ, হাদিস নং-২০৪২, ফিল মানাসিক, বাবু যিয়ারাতিল ক্বুবুর, মসনদে আহমদ,২য় খন্ড, পৃ-৩৬৭)
হাদিস (৩):
হযরত আনাস (রাঃ) থেতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার প্রতি ১০টি রহমত নাযিল করেন, ১০টি গুনাহ মাফ করেন এবং তার জন্য ১০টি মরতবা উচ্চ করেন।
হাদিস (৪):
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন- যখন বৃস্পতিবার রাত আসে তখন আল্লহ এমন কতগুলো ফেরেশতা প্রেরণ করেন যাদের হাতে রুপার কাগজ ও স্বর্ণেও কলম থাকে, যা দ্বারা বৃস্পতিবার দিন ও শুক্রবার রাতে দুরূদ শরীফ পাঠকারীদের দুরূদ শরীফ সমূহ লিখতে থাকে। (সা’দাতুদ দারাইন, আল-মাকতাবাতুত তাওফিকিয়্যাহ, তুরস্ক, পৃ-৯২)
হাদিস (৫):
ইমাম ইবনে শাহীন (রহঃ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, হুজুর ইরশাদ করেন- নিশ্চয় আমার প্রতি দুরূদ পড়াটা পুলছিরাতে নূও হিসেবে থাকবে। আর যে ব্যক্তি জুমাআর দিনে ৮০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তার ৮০ বৎসরের গুণাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সা’দাতুদ দারাইন, আল-মাকতাবাতুত তাওফিকিয়্যাহ, তুরস্ক, পৃ-১০৩)
হাদিস (৬):
ইমাম ইবনে মাজাহ (রহঃ) হযরত আব্দুল্লা ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, হুজুর ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়া ভুলে গেছে মূলত সে জান্নতের পথই ভুলে গেছে। (ইবনে মাজাহ, পৃষ্টা নং-৬৫)
হাদিস (৭):
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একদিনে হাজার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, বেহেশতে তার স্থান না দেখা পর্যন্ত সে মৃত্যু বরণ করবে না।
(সা’দাতুদ দারাইন, আল-মাকতাবাতুত তাওফিকিয়্যাহ, তুরস্ক, পৃ-১১৫)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পড়ার স্থান সমূহ:
১। নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠ করার পর।
২। জানাযার নামাযে ২য় তাকবীর বলার পর।
৩। জুম’আর দিবসে।
৪। মুয়াজ্জিনের আযান শোনার পর।
৫। মসজিদে প্রবেশের পূর্বে এবং তা হতে বের হওয়ার পূর্বে।
৬। সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করার সময়।
৭। কোন মজলিস থেকে পৃথক হওয়ার পূর্বে।
৮। সকাল-সন্ধা।
৯। পাঠ শুরু করার পূর্বে এবং শেষ করার পূর্বে।
১০। দু’আ বা মুনাজাত করার সময়।
** “বিশ সেকেন্ডে বিশ হাজার নেকী”
لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدُ رُّسَوْلُ اللهِ
(লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ)
ফযিলত: প্রত্যেক নামাযের পর দশ বার পড়লে মৃত্যুর পর পরই বেহেশতে প্রবেশ করবে।
১. কাদেরীয়া তরীকার শ্রেষ্ঠ দুরূদ শরীফ:-
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আ-লি সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম)
ফযিলত: এই দুরূদ শরীফ সকাল ও সন্ধ্যা একশত বার পাঠ করলে বালা মুছিবত দূর হয়।
২. জিয়ারতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ رُوْحِ مُحَمَّدٍ فِي اَلْاَرْوَاحِ وَعَليٰ جَسَدِهِ فِي اَلْاَجْسَادِ وَعَليٰ قَبَرِهِ فِي الْقُبُوْرِ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা রুহি মুহাম্মাদিন্ ফিল আর ওয়াহি ওয়ালা জাসাদিহি ফিল আজসা-দি ওয়ালা ক্ববরিহি ফিল ক্বুবুর)
৩.যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য পড়–ন:-
قَلَّتْ حِيْلَتِيْ اَنْتَ وَسِيْلَتِيْ اَدْرِكْنِي يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
(ক্বল্লাত হিলাতী আন্তা ওয়াসিলাতি আদ্ রিকনি ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
ফযিলত: যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য পড়ন ইনশাআল্লাহ বৃথা যাবে না।
৪.হিসাব নিকাশ ও আযাব থেকে মুক্তি লাভের দরুদ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ كُلَّمَا ذَكَرَهُ الذّٰكِرُونَ وَصَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ كُلَّمَا غَفَلَ عَنْ ذِكْرِهِ الْغَافِلُوْنَ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিন কুল্লামা যাকারা হুজ্জাকিরুনা ওয়া আ’লা মুহাম্মদিন কুল্লামা গাফালা আন্ যিকরিহিল গাফিলু-ন)
ফযিলত: ইমাম শাফেয়ী (র:) এই দুরূদ শরীফ পড়তেন। এই দুরূদ শরীফের উছিলায় হিসাব-নিকাশ থেকে মুক্তি পাবেন। প্রতিদিন ১১১ বার পাঠ করলে ঈমানের হিফাজত এবং ঈমানের সাথে ইন্তেকাল হবে।
৫.ধন সম্পদ বৃদ্ধির দরুদ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ وَعَليٰ المْؤُمِنِيْنَ وَالمْؤُمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন্ আবদিক ওয়ারাসূলিকা ওয়াআলাল মুমিনীনা ওয়া মুমিনাতি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাতি।)
ফযিলত: ছাহেবে রুহুল বয়ান এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এই দুরূদ শরীফ নিয়মিত পাঠ করবে তার ধন-সম্পদ দিন রাত বৃদ্ধি হতে থাকবে।
৬. স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দরুদ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍنِ النَّبِّيِ الْكَامِلِ وَعَليٰ اٰلِهِ كَاَب لَانِهَايَةَ لِكَمَالِكَ وَعَدَدَ كَاَعلِهٖ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিন্ নাবিয়্যিল কামিলি ওয়া আ’লা আলিহি কামা-লা-নিহায়াতা লিকামালিকা ওয়া আদাদা কামালিহি)
ফযিলত: মাগরিব এশার মধ্যবর্তী সময়ে এই দুরূদ শরীফ পাঠ করলে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৭. ঈমানের সহিত মৃত্যু:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ مُّنْطَلِقِ عِنَانِ جَوَادِ الاِيْمَانِ فِي مَيْدِانِ الاِحْسَانِ مُرْسِلاً مُرْشِدًا اِليٰ رِيَاحِ الْكَرَمِهِ فِي رَوْضِ الجْنَانِ وَعَليٰ اٰلِ مُحَمَّدٍ وَّسَلِّمْ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সয়্যিদিনা মুহাম্মদিম মুনতালিকি ইনানি জাওয়াদিল ঈমানি ফি মিদানিল ইহসানি মুরসিলাম্ মুরশিদান ইলা রিয়াহিল কারামিহি ফি রাওদিল জানানি ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিও ওয়া সাল্লিম)
ফযিলত: উক্ত দুরূদ শরীফের উছিলায় ঈমানে সহিত মৃত্যু নসিব হবে।
৮.দরুদে গাউসিয়া:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَّعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَاٰلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সয়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিম মাআ’দিনিল যুদি ওয়াল কারামি ওয়া আলিহি ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।)
ফযিলত: এ দুরূদ শরীফ পাঠ করলে- ১.জীবিকায় বরকত হবে ২.সমস্ত কাজ সহজ হবে ৩.মৃত্যুকালে কলেমা নসীব হবে ৪.প্রাণবয়ু সহজে বের হবে ৫.কবর প্রশস্ত হবে ৬.কারো মুখাপেক্ষী থাককেনা ৭.আল্লাহর সৃষ্টি তাকে ভালোবাসবে।
৯. দরুদে রযভিয়্যাহ:-
صَلَّي اللهُ عَليٰ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ وَاٰلِهٖ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلِّمْ صَلوٰةً وَّسَلاماً عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ الله-
(ছাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলিহি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছালাতাও ওয়া সালামান আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ)
ফযিলত: এ দুরূদ শরীফ প্রত্যেক নামায ও জুমার নামাযের পর খাস করে মদীনা মনোয়ারার দিকে মুখ করে ১০০ বার পাঠ করলে অগণিত ফযিলত অর্জন হয়।
১০.বদ অভ্যস পরিত্যাগ করার দরুদ:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ اَفْضَلِ اَنْۭبِيَائِكَ وَاَكْرَمِ اَصْفِيَائِكَ مَنْ فَاضَتْ مِنْ نُّوْرِهِ جَمِيْعِ الْاَنْوَارِ وَصَاحِبِ الْمُعْجِزَاتِ وَصَاحِبِ الْمَقَامِ الْمَحْمُوْدِ سَيِّدِ اْلاَوَّلِيْنَ وَاْلاَخِرِيْنَ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন আফ্দালি আম্বিয়ায়িকা ওয়া আকরামি আছফিয়াইকা মান ফাদাত মিন্ নূরীহি জামিয়্যিল আনওয়ারী ওয়া ছাহিবিল মুজিযাতি ওয়া ছাহিবিল মাক্বামিল মাহমুদি সৈয়্যেদিল আওয়ালিনা ওয়াল আখিরিনা)
ফযিলত: এই দুরূদ শরীফ অধিক পরিমানে পাঠ করলে যে কোন অপকর্ম করা হতে বিরত থেকে ইবাদত বন্দেগীতে স্বাধ পাবেন।
১১. উভয় জাহানের নেয়ামত অর্জন:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَّسَلِّمْ وَبَارِكْ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍوَّعَليٰ اٰلِهٖ عَدَدَ اِنْعَامِ اللهِ وَاَفْضَالِهٖ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলিহি আদাদা ইনআ’মিল্লাহি ওয়া আফদ্বালিহি)
ফযিলত: এই দুরূদ শরীফ পড়লে অগণিত নেয়ামত অর্জিত হয়।
১২. দরুদে শিফা:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلۤانَا مُحَمَّدٍ طِبِّ الْقُلُوْبِ وَدَوَائِهَا وَعَافِيَةِ الأَبْدَانِ وَشِفَائِهَا وَنُوْرِ الاَبْصَارِ وَضِيَائِهَا وَعَليٰ اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ وَسَلِّمْ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সয়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন তিব্বিল কুলুবি ওয়া দাওয়া-ই হা ওয়া আফিয়াতিল আবদানি ওয়া শিফায়িহা ওয়া নুরীল আবছারি ওয়া দ্বিয়ায়িহা ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া ছাহ্বিহি ওয়া সাল্লিম)
ফযিলত: *এ দুরূদ শরীফ যেকোন জটিল ও কঠিন রোগ মুক্তির জন্য পড়া প্রয়োজন।
* প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যা ৩বার করে পড়লে মৃত্যু পর্যন্ত নিরোগ থাকা যায়।
১৩. দরুদে শাফায়াত:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدِوَّ اَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিও আন্যিলহুল মাক্বয়াদাল মুর্কারাবা ইনদাকা ইয়াউমাল কিয়ামাতি)
ফযিলত: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি এ দুরূদ শরীফ পড়বে তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।
১৪.প্রিয় নবীর নৈকট্য লাভের উপায়:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مُحَمَّدٍ كَاَা تُحِبُّ وَتَرْضٰى لَهٗ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিন কামা তুহিব্বু ওয়া ত্বারদ্বা লাহু)
ফযিলত: একদিন এক ব্যক্তি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি তাকে সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিআল্লাহু আনহু এবং নিজের মাঝখানে বসালেন তখন উপস্থিত সাহাবায়ে ক্বেরামগণ প্রশ্ন করলেন কেন উনাকে এত নিকটে বসালেন তিনি বললেন যে সে এই দুরূদ শরীফ নিয়মিত পড়ে।
১৫. দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপদ থাকার উপায়:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّ اٰلِهٖ وَصَحْبِهِ وَسَلِّمْ بِعَدَدِ مَا فِي جَمِيْعِ الْقُرْاٰنِ حَرْفًا حَرْفًا وَّبِعَدَدِ كُلِّ حَرْفٍ اَلْفاً اَلْفاً
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আলিহি ওয়া ছাহবিহি ওয়া ছাল্লিম বি আদাদি মাফি জামিয়িল কুরআনই হারফান্ হারফাও ওয়া বি আদাদি কুল্লি হারফিন আল্ফান আল্ফান)
ফযিলত: যিনি কোরআন তেলাওয়াতের পর এই দুরূদ শরীফ পাঠ করবেন তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপদ থাকবেন।
১৬. এক লক্ষ দুরূদ শরীফের ছাওয়াব:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدِنِ النُّوْرِ الذَّاتِي السَّارِئ فِي جَمِيْعِ الْاۤثَارِ وَاْلاَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ وَعَلىٰ اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ وَسَلِّمْ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদি নিন্ নূরিয্ যাতিস্ সারি ফি জামিইল আছারি ওয়াস ছিফাতি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া ছাহ্বিহি ওয়া সাল্লিম)
ফযিলত: এ দুরূদ শরীফ ১বার পাঠ করলে এক লক্ষ দুরূদ শরীফের ছাওয়াব পাবে। ৫০০ বার পড়লে যে কোন নেক হাজাত পূর্ণ হবে। ইনশা আল্লাহ
১৭. ছয় লক্ষ দুরূদ শরীফ পড়ার ছাওয়াব:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلانَا مُحَمَّدٍ عَدَدَ مَا فِي عِلْمِ اللهِ صَلَوٰةً دائمةً ۭبِدَوَامِ مُلْكِ اللهِ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন আদাদা মা ফি ইলমিল্লাহি ছালাতান্ দায়িমাতাম বিদাওয়ামি মুলকিল্লাহ)
ফযিলত: শায়খুদ দালাইল সৈয়দ আলী বিন ইউসুফ মাদানী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি আল্লামা জালালুদ্দিন সু’য়ূতি থেকে বর্ণনা করেন এ দুরূদ শরীফ ১বার পড়লে ছয় লক্ষ দুরূদ শরীফের ছাওয়াব মিলবে। যিনি ১০০০ বার পড়বে দুনিয়া ও আখিরাতে নেক্ বখ্ত হবে।
১৮. এগার হাজার দুরূদ শরীফ পড়ার ছাওয়াব:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّ عَلىٰ اٰلِهٖ صَلَوٰةً اَنْتَ لَهَا اَهْلٌ وَّهُوَ لَهَا اَهْلٌ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলিহি ছালাতান আনতা লাহা আহলুও ওয়া হুয়া লাহা আহলুন)
ফযিলত: হাফিজ আল্লামা সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত এই দুরূদ শরীফ ১বার পড়লে এগার হাজার বার পড়ার ছাওয়াব মিলবে।
১৯. চৌদ্দ হাজার দুরূদ শরীফ পড়ার ছাওয়াব:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَّسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلىٰ اٰلِهٖ عَدَدَ كَاَ لِ اللهِ وَكَاَا يَلِيْقُ بِكَمَالِهٖ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলিহি আদাদা কামালিল্লাহি ওয়া কামা ইয়ালিকু বি কামালিহি)
ফযিলত: এই দুরূদ শরীফ শুধু ১বার পড়লে ১৪ হাজার দরূদে পাকের ছাওয়াব মিলবে।
২০. মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلىٰ النَّبِيِّ الطَّاهِرِ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম আলান নবিয়্যিত ত্বাহিরি)
ফযিলত: এক নিশ্বাসে ১১বার এই দুরূদ শরীফ পাঠ করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
২১. বৃষ্টির সময় এই দুরূদ শরীফ পড়া উত্তম:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَّسَلِّمْ عَلىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَّ علىٰ اٰلِهٖ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ بِعَدَدِ قَطْرَاتِ الْأَمْطَارِ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা সাইয়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলিহি সাইয়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন্ বি আদাদি ক্বাতরাতিল আমতার)
ফযিলত: বৃষ্টি আসার সময় এই দুরূদ শরীফ পাঠ করলে যতগুলো ফোটা মাটিতে পড়ে ততগুলো ছাওয়াব পাওয়া যাবে।
২২.অন্তরকে আলোকিত করার উপায়:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ نُوْرِ اْلاَنْوَارِ وَسِرِّ اْلاَسْرَارِ وَسَيِّدِ اْلاَبْرَارِ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন নূরীল আনওয়ারি ওয়া র্সিরিল আসরারি ওয়া সইয়্যিদিল আবরার)
ফযিলত: এ দুরূদ শরীফ নিয়ামিত পাঠ করলে নিজ ক্বলবে নূর পয়দা হবে।
২৩. আশি বছরের গুনাহ মাফ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدِنِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلىٰ اٰلِهٖ وَسَلِّمْ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিই ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিম)
ফযিলত: রাসূলে পাক ইরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি জুমার দিন আছরের পর ৮০বার এই দুরূদ শরীফ পড়বে আল্লাহ তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।
২৪. মাগফিরাতের দুরূদ শরীফ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَلىٰ اٰلِهٖ وَسَلِّمْ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিম)
ফযিলত: তাজেদারে মদীনা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি এই দুরূদ শরীফ পড়বে যদি দাঁড়ানো থাকে তবে বসার পূর্বে এবং বসা থাকলে দাঁড়ানোর পূর্বেই তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
২৫. সারাদিন দুরূদ শরীফ পড়ার ছাওয়াব:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدَنَا مُحَمَّدٍ فِي اَوَّلِ كَاَيمِنَا اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ فِي اَوْسَطِ كَاَ مِنَا اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ فِي اۤخِرِ كَاَ مِنَا
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফি আউয়ালি কালামিনা। আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফি আওসাতি কালামিনা। আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ফি আখিরি কালামিনা।)
ফযিলত: যে ব্যক্তি এই দুরূদ শরীফ দিনে ৩বার এবং রাতে ৩বার পাঠ করবে সে যেন দিন-রাত দুরূদ শরীফ পড়ার ছাওয়াব পবে।
২৬. দরূদে মাহী:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ خَيْرِ الْخَلَائِقِ اَفْضَلِ الْبَشَرِ شَفِيْعِ اْلاُمَّةِ يَوْمِ الْحَشَرِ وَالنَّشَرِسَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ بِعَدَدِ كُلِّ مَعْلُوْمِ لَّكَ وَصَلِّ عَليٰ جَمِيْعِ اْلاَنْۭبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ وَالْمَلۤائِكَةِ الْمُقَرَّبِيْنَ وَعَليٰ عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ وَارْحَمْنَا مَعَهُمْ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ-
(আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিন খাইরিল খালায়িক্বি আফদ্বালিল বাশারি শাফীয়িল উম্মাতি ইয়াওমাল হশারি ওয়ান্নাশরি সইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিম্ বিআদাদি কুল্লি মা’লুমিল্লাকা ওয়া সাল্লি আ’লা জমীয়িল আম্বিয়ায়ি ওয়াল মুরসালীনা ওয়াল মালায়িকাতিল মুর্ক্বারাবীনা ওয়া আ’লা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীনা ওয়ারহাম্না মাআ’হুম বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমীনা।)
ফযিলত: * খুব কঠিন বিপদে কিংবা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে ক্রমবৃদ্ধি করে ২১ দিন বা ৪১ দিনে সোয়া লক্ষ বার এই দুরূদ শরীফ পড়িলে সাথে সাথে ফল পাওয়া যায়।
*প্রত্যেক ফজরের নামাযের পর ৭বার পড়লে স্বাস্থ্য অটুট থাকে, দেহশ্রী লাবণ্যময় থাকে এবং বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকবে।
২৭. দরূদে তুনাজ্জিনা:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَليٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلوٰةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَاْلآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّاٰتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ اَعْليٰ الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا اَقْصىٰ الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاتِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ- اِنَّكَ عَليٰ كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আ-লি সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন সালাতান তুনাজ্জিনা বিহা মিন জামীয়িল আহ্ওয়ালি ওয়াল আফাত, ওয়া ত্বাক্দি লানা মিন জামীয়িল হাজাত। ওয়া তুতাহ্হিনরুনা বিহা মিন জামীয়িস্ সাইয়্যিআত। ওয়া তারফউনা বিহা ইন্দাকা আ’লাদ্দারাজাত। ওয়া তুবাল্লিগুনা বিহা আকসাল গায়াত মিন জামীয়িল খাইরাত ফিল হয়াতি ওয়া বা’দাল মামাত। ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর; বিরহমাতিকা ইয়া আরহার্মা রহিমীন।)
ফযিলত: * পাক সাফ স্থানে বসে ১হাজার বার পাঠ করলে গুরুতর মোকাদ্দামায় ও আশ্চর্য সুফল পাওয়া যায়। ** প্রত্যহ ফজর ও মাগরিবের পর ১১বার এই দুরূদ শরীফ পাঠ করলে কখনো চাকরি যাবেনা ও রিযিক বন্ধ হবেনা।*** এই দুরূদ শরীফ ৩বার টাঠ করে ১মুষ্টি মাটির উপর ৩বার ফুঁক দিয়ে কবরের উপর ছিটিয়ে দিলে শিয়াল কুকুর দ্বারা ঐ কবরের লাশ নষ্ট হবেনা।
২৮. দরূদে খাইর:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا وَنَبِيِّنَا وَشَفِيْعِنَا وَمَوْلَآنَا مُحَمَّدٍ صَلَّي اللهَ عَلَيْهِ وَعَليٰ اٰلِهٖ وَاَصْحَابِهِ وَاَزْوَاجِهِ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ
(আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা সইয়্যিদিনা ওয়া নাবিয়্যিনা ওয়া শাফীয়িনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।)
ফযিলত: যিনি সর্বদা এই দুরূদ শরীফ আমল করবেন- তিনি অবশ্যই দেশের সর্দার হবেন। যদি তা না হয়, তবে অন্তত স্বীয় বংশের সর্দার রূপে বা শ্রেষ্ঠ ধনী রূপে ইজ্জত পাবেন। প্রত্যহ চাশ্ত নামাযের পর ২১বার পড়লে ইন্শাআল্লাহ ধনী হয়ে যাবে।
২৯.দরূদে ফুতুহাত:-
بِسْمِ اللهِ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا وَعَلٰي اٰلِهٖ بِعَدَدِ اَنْوَاعِ الرِّزْقِ وَالْفُتُوْحَاتِ يَابَاسِطَ الَّذِيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ- اُبْسُطْ عَلَيْنَا رِزْقًاوَاسِعًا مِنْ كُلِّ جِهَةٍ مِّنْ خَزَائِنِ غَيْبِكَ بِغَيْرِ مِنَّةٍ مَّخْلُوْقٍ ِبۢمَحْضٍ فَضْلِكَ وَكَرَمِكَ بِغَيْرِ حِسَابٍ-
(বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা ওয়া আ’লা আলিহি বি আদাদি আনওয়াইর রিজক্বি ওয়াল ফুতুহাতি ইয়া বা-সিতাল্লাযী ইয়াব্সুতুর রিয্কা লিমাঁই ইয়াশাউ বিগাইরি হিসাব।উসবুত আলাইনা রিয্কাঁও ওয়াসিআম্ মিন কুল্লি জিহাতিম মিন খাযায়িনি গাইবিকা বিগাইরি মান্নাতিম্ মাখলুক্বিম বিমাহ্দি ফাদ্লি কা ওয়া কারামিকা বিগাইরি হিসাব)
ফযিলত: এই দুরূদ শরীফ ৩বার পাঠ করলে জীবনে কখনো অবনতি ঘটবে না ও ধনে-জনে সমৃদ্ধ শালী থাকবে।
২৯. দরূদে রু’ইয়াতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম):-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍنِ النَّبِيِّ اْلاُمِيِّ
(আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিনি ন্নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি)
ফযিলত: হযরত শেখ আব্দুল কাদের জিলানী (রা:) বা বড় পীর (রা:) ‘গুনিয়াতুত্তালিবীন’ এ লিখেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার রাতে দুই রাকাত নফল নামাজ এই নিয়্যতে পড়ে যে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১বার আয়াতুল কুরসী ও ১৫বার সূরা ইখলাস এবং নামাজ শেষে এই দুরূদ শরীফ ১০০০ বার পড়বে অবশ্যই সে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখতে পাবে। যদি ঐ রাতে না দেখে তবে ২য় শুক্রবার আসার পূর্বে দেখতে পাবে। এবং তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৩০. সাইয়্যেদা ফাতিমা (রা:) রচিত দুরূদ শরীফ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مَنْ رُوْحُهُ مِحْرَابُ الْأَرْوَاحِ وَالْمَلٰئِكَةِ وَالْكَوْنِ- اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مَنْ هُوَ اِمَامُ اْلاَنْبِيَاءِ وَالُمُرْسَلِيْنَ- اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ مَنْ هُوَ اِمَامُ اَهْلِ الْجَنَّةِ عِبَادَ اللهِ الْمُؤْمِنِيْنَ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মান রুহুহু মিহরাবুল আরওয়াহি ওয়াল মলাইকাতি ওয়াল কাউনি। আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মানহুয়া ইমামুল আম্বিয়ায়ি ওয়াল মুরসালীনা। আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মানহুয়া ইমামু আহ্লিল জান্নাতি ইবাদিল্লাহিল মু’মিনীন।)
৩১. দরূদে নারিয়া বা সালাতে নারিয়া:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ صَلٰوةً كَامِلَةً وَسَلِّمْ سَلَامًا تَامًّا عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدِنِ الَّذِيْ تَنْحَلُّ بِهِ الْعُقَدُ وَتَنْفَرِجُ بِهِ الْكُرَبُ وَتُقْضىٰ بِهِ الْحَوَائِجُ وَتُنَالُ بِهِ الرَّغَائِبُ وَحُسْنُ الْخَوَاتِمِ وَيُسْتَسْقَي الْغَمَامُ بِوَجْهِهٖ الْكَرِيْمِ وَعَليٰ اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ فِي كُلِّ لَمْحَةٍ وَّنَفَسٍ بِعَدَدِ كُلِّ مَعْلُوْمٍ لَكَ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি ছালাতান কামিলাতান ওয়া সাল্লিম সালামান তাম্মান আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিল্লাযী তানহাল্লু বিহীল উক্বাদু ওয়া তানফারিজু বিহীল কুরাবু ওয়া তুক্বদ-বিহীল হাওয়ায়িজু ওয়া তুনালু বিহীর রাগাইবু ওয়া হুসনুল খওয়াতিমু ওয়া ইউস্ তাস্কাল গামামু বিওয়াজ হিহিল কারীম, ওয়া আ’লা আলিহী ওয়া ছাহবিহী ফী কুল্লি লাম্হাতিন ওয়া নাফাসিম বিআদাদি কুল্লি মা’লুমল্লাক্)
ফযিলত: দুরারোগ্য, বালা-মুছিবত, চাকুরী লাভে, ব্যবসার উন্নতি ও যে কোন আশা পূরণে এবং বিবাহ হওয়ার জন্য ৪৪৪৪ বার পাঠ করলে নিশ্চয়ই সফল হবে।
৩২. দুনিয়াতে জান্নাত দেখার দুরূদ শরীফ:-
صَلَّى اللهُ عَليٰ حَبِيْبِهٖ مُحَمَّدٍ وَاٰلِهٖ وَسلَّمَ
(ছাল্লাল্লাহু আলা হাবীবিহী মুহাম্মাদিন ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লিম।
ফযিলত: যে ব্যক্তি এই দুরূদ শরীফ একাধারে এক হাজার বার পাঠ করবে, তার মৃত্যুর পূর্বে সে অবশ্যই জান্নাতে তার স্থান ও জান্নাতের ঘর দেখতে পাবে।
৩৩. দোজখের আযাব মাফ হওয়ার দুরূদ শরীফ:-
اَللّٰهُمَّ اِنِّي اَصْبَحْتُ اَشْهَدُكَ وَاَشْهَدُ حَمَلَةِ عَرْشِكَ وَمَلٰئِكَتِكَ وَجَمِيْعِ خَلْقِكَ اِنَّكَ اَنْتَ اللهُ لَااِلَهَ اِلاَّ اَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ وَاَنَّ مُحَمَّدً عَبْدَكَ وَرَسُوْلُكَ-
(আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্বাহতু আশহাদুকা ওয়া আশহাদু হামালাতি আরশিকা, ওয়া মলাইকাতিকা, ওয়া জামী-’ই খলক্বিকা ইন্নাকা আন্তাল্লাহু লা- ইলাহা ইল্লা আন্তা, ওয়াহ্দাকা লা-শারীকালাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসূলুকা)
ফযিলত: হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (দ:) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এই দুরূদ শরীফ সকালে বা সন্ধ্যায় ১বার পাঠ করবে, আল্লাহ তার এক চতুর্থাংশ দোজখের আজাব মাফ করবেন এবং দুইবার পাঠ করলে অর্ধেক আজাব মাফ করবেন এবং তিনবার পাঠ করলে তিন চতুর্থাংশ এবং ৪বার পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলা তাকে সম্পূর্ণ দোযখের আযাব থেকে রেহাই দেবেন।
৩৪. দরূদে ফাতিহ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ اَلْفَاتِحِ لِمَا اَغْلَقَ وَالْخَاتِمِ لِمَا سَبَقَ وَالنَّاصِرِ الْحَقِّ بِا لْحَقِّ وَالْهَادِيْ اِلىٰ صِرَاطِكَ الْمُسْتَقِيْمِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَعَلىٰ اٰلِهٖ وَاَصْحَابِهِ حَقَّ قَدْرِهٖ وَمُقَدَّرِهٖ العَظِيْمِ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়াসাল্লিম ওয়া বারিক আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন, আল ফাতিহি লিমা আগ্লাক্বা ওয়াল খাতিমি লিমা সাবাক্বা, ওয়ান্ না-ছিরিল হাক্কি বিল হাক্কি ওয়াল হাদী ইলা সিরাতিক্বাল্ মুসতাক্বীম। সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া আছহাবিহী হাক্কা ক্বাদরিহী ওয়া মিক্বদারিহিল আযীম)
ফযিলত: এই দুরূদ শরীফ জীবনে একবার পড়লে তান জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার রাতে ১০০ বার পড়লে ৪০০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। ভীষণ মুছিবতে পডলে ৫ওয়াক্ত নামাজ বা’দ এই দুরূদ শরীফ ১০০ বার এবং ‘ইয়া লাত্বীফু’ ১০০ বার পাঠ করলে ইন্শাআল্লাহ যত বড় বিপদই হোক বিপদ মুক্ত হবে। একবার এই দুরূদ শরীফ পড়লে ৬ লক্ষ দুরূদ পড়ার ছাওয়াব পাওয়া যাবে। সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হজ্জ- ওমরাহ যিয়ারতে গিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফে ১ বার পাঠ করেন তবেÑ আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে ৬০ হাজার কোটি, নেকী পাওয়া যাবে ৬০ হাজার কোটি, বেহেশতের মর্তবা পাবে ৬০ হাজার কোটি, গুনাহ মাফ হবে ৬০ হাজার কোটি, ৬০ হাজার কোটি গোলাম আযাদের সম পরিমান সাওয়াব পাবে, এবং ১২০ হাজার কোটি অর্জন হবে। “সুবহানাল্লাহ”। আর মদীনা শরীফে পড়ার সাওয়াব লিখা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। (আমলে আলো ৫ম খন্ড)
৩৫. দরূদে জাওহারূল কামাল:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَليٰ عَيْنِ الرَّحْمَةِ الرَّبَّانِيَّةِ وَالْيَاقُوْتَةِ المُتَحَقِّقَةِ الْحَائِطَةِ بِمَرْكَزِ الْفُهُوْمِ وَالْمَعَانِيُّ نُوْرِ الْاَكْوَانِ الْمُتَكَوِّنَةِ الْأَدَمِيِّ صَاحِبُ الْحَقِّ الرَّبَّانِيِّ الْبَرْقُ الْاَسْطَحُ بِمَزْنِ الْاَرْيَاحِ الْمَائِلَةِ لِكُلِّ مُتَعَرِّضٍ مِّنَ الْبُحُوْرِ وَالْاَوَانِىْ نُوْرِكَ اللَّامِعُ الَّذِيْ مَلَائَةِ الْمَكَانِ- اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّم عَليٰ عَيْنِ الْحَقِّ الَّتِي تَتَجَلىّٰ مِنْهَا عُرُوْسُ الْحَقَائِقِ عَيْنِ الْمَعَارِفِ الْاَقْدَمِ صِرَاطُكَ التَّامُّ اَقْوَمُ-اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلىٰ طَلَعَةِ الْحَقِّ بِالْحَقِّ الْكَنْزِ الْاَعْظَمِ اَفَاضَتْكَ مِنْكَ اِلَيْكَ اَحَاطَةَ النُّوْرِ الْمُسْطَلَمِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَعَلىٰ اٰلِهٖ صَلَاةَ تَعْرِفُنَا بِهَا اِيَّاهُ-
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়াসাল্লিম আলা আইনির রাহমাতির রাব্বানিয়াতি। ওয়াল ইয়াকু-তাতিল মুতাহাক্বাক্বাতিল হা-য়িত্বাতি বিমারকাজিল ফুহুমি ওয়াল মা’আনী, নূরিল আকওয়ানিল মুতাকাওয়ানাতিল আদিমি সাহিবিল হাক্কির রাব্বানী। আল বারক্বুল আস্ত্বাহি বিমান্যিল আরইয়াহিল মায়িলাতি লিকুল্লি মুতাআররিদ্বিম মিনাল বুহুরি ওয়াল আওয়ানি নুরিকাল ল্লামিউ ল্লাযী মালাআত্ বিহি কাওনুকাল হায়িত্বু বিআম্কানাতিল মাকান।
আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়াসাল্লিম আলা আইনিল হাক্কিল্লাতী তাতাজাল্লামিনহা উরুসূল হাক্বায়িক্বি আইনুল মাআরিফিল আক্বদামি সিরাত্বুক্বাত্ তাম্মু আক্বওয়াম।
আল্লাহুম্মা ছাল্লি ওয়াসাল্লিম আলা ত্বালআতিল হাক্কি বিল হাক্কিল্ কানাযিল আ’যমি আফাদ্বাতক্বা মিনক্বা ইলাইকা ইহাতাতিন্ নূরিল মুত্বালসামি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লা আলিহী ছালাতান তা’রিফুনা বিহা ইয়্যাহু।
ফযিলত: যে ব্যাক্তি এই দুরূদ শরীফ অন্তঃকরণে ৭ বার পাঠ করবে, পাঠ কালীন অধিকাংশ সময় তার নিকট স্বয়ং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বিশিষ্ট চার সাহাবী রূহানি ভাবে উপস্থিত থাকবেন। এবং যে ব্যক্তি ৭ বারের অধিক পাঠ করবেন তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাস ভাবে মহব্বত করবেন। আউলিয়ার দরজা লাভ করে দুনিয়া থেকে যাবেন। এবং যে নিদ্রার পূর্বে ৭ বার পড়ে পাক বিছানায় ঘুমাবে সে স্বপ্নে পেয়ারা নবীর দীদার নসীব হবে। “সুবহানাল্লাহ”
৩৬.দরূদে ইব্রাহীমী:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلىٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَاَِ صَلَّيْتَ عَلىٰ سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيْمَ وَعَلىٰ اٰلِ سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلىٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَاَِ بَارَكْتَ عَلىٰ سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيْمَ وَعَلىٰ اٰلِ سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আ-লি সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আ’লা সাইয়্যিদিনা ইব্রাহীমা ওয়ালা আ-লি সয়্যিদিনা ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আ-লি সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন কামা বারাক্তা আ’লা সাইয়্যিদিনা ইব্রাহীমা ওয়ালা আ-লি সয়্যিদিনা ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
৩৭. বরকতময় দুরূদ শরীফ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلىٰ اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلٰوةً دَائِمَةً مَّقْبُوْلَةً تُوَدِّيْ بِهَا اَنَّ حَقَّهُ الْعَظِيْمِ
(আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ছালাতান্ দায়িমাতান মাক্ববুলাতান তুওয়াদ্দী বিহা আন্না হাক্কাহুল আযীম)
৩৮.দরূদে তাজ:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ صَاحِبِ التَّاجِ وَالْمِعْرَاجِ وَالْبُرَاقِ وَالْعَلَمِ دَافِعِ الْبَلَاءِ وَالْوَبَاءِ وَالْقَحَطِ وَالْمَرَضِ وَالاَلَمِ اِسْمُهُ مَكْتُوْبٌ مَرْفُوْعٌ مَشْفُوْعٌ مَنْقُوْشٌ فِي اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ سَيِّدِ الْعَرَبِ وَالْعَجَمِ جِسْمُهُ مُقَدَّسٌ مُعَطَّرٌ مُطَهَّرٌ مُنَوَّرٌ فِي الْبَيْتِ وَالْحَرَمِ شَمْسِ الضُّحىٰ بَدْرِ الدَّجىٰ صَدْرِ الْعُلىٰ نُوْرِ الْهُدٰى كَهْفِ الْوَرٰى مِصْبَاحِ الظُّلَمِ جَمِيْلِ الشِّيَمِ شَفِيْعِ الْاُمَمِ صَاحِبِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَاللهُ عَاصِمُهُ وَجِبْرِيْلُ خَادِمُهُ وَالْبُرَاقُ مَرْكَبُهُ وَالْمِعْرَاجُ سَفَرُهُ وَسِدْرَةُ الْمُنْتَهٰى مَقَامُهُ وَقَابَ قَوْسَيْنِ مَطْلُوْبُهُ وَالْمَطْلُوْبُ مَقْصُوْدُهُ وَالْمَقْصُوْدُ مَوْجُوْدُهُ سَيِّدِ الْمُرْسَلِيْنَ خَاتَمِ النَّبِيّيْنَ شَفِيْعِ الْمُذْنَبِيْنَ اَنِيْسِ الْغَرِيْبِيْنَ رَحْمَةً لِلْعٰلَمِيْنَ رَاحَةً الْعَاشِقِيْنَ مُرَادِ الْمُشْتَاقِيْنَ شَمْسِ الْعَارِفِيْنَ سِرَاجِ السَّالِكِيْنَ مِصْبَاحِ الْمُقَرَّبِيْنَ مُحِبِّ الْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنَ سَيِّدِ الثَّقْلَيْنِ نَبِيِّ الْحَرَمَيْنِ اِمَامِ الْقِبْلَتَيْنِ وَسِيْلَتِنَا فِي الدَّارَيْنِ صَاحِبِ قَابَ قَوْسَيْنِ مَحْبُوْبِ رَبِّ الْمَشْرِقَيْنِ وَالْمَغْرِبَيْنِ جَدِّ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ مَوْلَانَا وَمَوْلىٰ الثَّقْلَيْنِ اَبِى الْقَاسِمِ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ نُوْرٍ مِنْ نُوْرِ اللهِ يَا اَيُّهَا الْمُشْتَاقُوْنَ بِنُوْرِ جَمَالِهٖ صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيْمًا
(আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন, সাহিবিত্ তাজি ওয়াল মি’রাজি ওয়াল বুরাক্বি ওয়াল আলাম। দা-ফিয়িল বালায়ি, ওয়াল ওবায়ি, ওয়াল ক্বাহাতি, ওয়াল মারাদ্বি, ওয়াল আলাম। ইসমুহু মাক্বতুবুন, মারফুউন, মাশফুউন, মানকূশুন, ফিল-লাওহি ওয়াল ক্বালাম। সায়্যিদিল আরাবি ওয়াল আজম। জিসমুহু মুক্বাদ্দাসুন, মুয়াত্তারুন, মতাহ্হারুন, মুনাও-ওয়ারুন, ফিল বাইতি ওয়াল হারাম। শাসছিদ্দুহা, বদরিদ্দুজা, সাদরিল-উলা, নু-রিল হুদা, কাহফিল ওয়ারা, মিসবাহিয্ যুলাম। জামীলিশ্ শিয়ামি শাফিয়িল উমামি, সা-হিবিল জু-দি ওয়াল কারাম। ওয়াল্লাহু আছিমুহু, ওয়া জিব্রীলু খাদিমুহু, ওয়াল বুরাক্বু মারকাবুহু, ওয়াল মি’রাজু ছাফারুহু, ওয়া সিদরাতুল মুন্তাহা মাক্বামুহু ওয়া ক্বাবা ক্বাওসাইনি, মাতলুবুহু ওয়াল মাতলুবু, মাক্বসুদহু ওয়াল মাক্বসুদু মাওজুদুহু, সায়্যিদিল মুরসালীনা, খা-তামিন নাবিইয়্যীনা, শাফিয়িল মুযনিবীনা, আনীছিল গারীবীনা রহ্মাতাল-লিল আ’লামীনা, রহাতিল আ-শিক্বীনা, মুরাদিল মুশ্তাক্বীনা, শামছিল আ-রিফীনা, সিরাজিছ্ ছা-লিকিনা, মিছবাহিল্ মুর্ক্বারাবীনা, মুহিব্বিল্ ফোক্বারায়ি ওয়াল গোরাবায়ি, ওয়াল মাছাকীনা, সয়্যিদিছ্ ছাক্বলায়নি, নাবিয়্যিল হারামায়নি, ইমামিল ক্বিবলাতাইনি, ওয়াসীলাতিনা ফিদ্দারায়নি, ছাহিবি ক্বা-বা ক্বাওছাইনি, মাহ্বূবি রাব্বিল মাশরিকায়নি ওয়াল মাগরিবাইনি, জাদ্দিল হাসানি ওয়াল হুসাইনি (রাদ্বিআল্লাহু আন্হুমা) মাওলানা ওয়া মাওলাছ্ সাক্বলাইনি, আবিল ক্বাছিম মুহাম্মদ বিন আব্দিল্লাহি নূরিম মিন নূরিল্লাহ। ইয়া আয়য়ূহাল মুশতাকুনা বিনূরি জামালিহী সাল্লু আলায়হি ওয়া সাল্লিামূ তাসলীমা)
ফযিলত:মনের পবিত্রতা লাভের জন্য ফজরের নামাযের পর ৭বার, আছরের নামাযের পর ৩বার, ইশার নামাযের পর ৩ বার পড়তে হয়। এই দুরূদ শরীফ সর্বদা পড়লে মনের বাসনা পূর্ণ হয়। জুমআর রাতে এ’শার নামায শেষে এই দুরূদ শরীফ ১৮০ বার পাঠ কওে শুলে ইন্শাআল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর জিয়ারত নসীব হবে। ১১ দিন এই আমল করলে মনের আশা পূর্ণ হবে।
৩৯. হযরত আলী (রাঃ) এর দুরূদ শরীফ:
صَلَوَاتُ اللهِ وَمَلَائِكَتِهٖ وَأَنْبِيَائِهٖ وَرَسُلِهٖ وَجَمِيْعِ خَلْقِهٖ عَلىٰ مُحَمَّدٍ وَاٰلِ مُحَمَّدٍ وَعَلَيْهِ وَعَلَيْهِمْ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ-
(সালাওয়াতুল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহি ওয়া আম্বিয়ায়িহি ওয়া রাসূলিহি ওয়া জামীয়-ই খলকিহি আ’লা মুহাম্মাদিন্ ওয়া আলায়হি ওয়া আলায়হিম আস্সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।)
৪০.হযরত মুসা আলায়হিস সালামের দুরূদ শরীফ:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ خَاتِمِ الْأَنْبِيَاءِ وَمَعْدَنِ الْأَسْرَارِ وَمَنْۢبَعِ الْأَنْوَارِ وَجَمَالِ الْكَوْنَيْنِ وَشَرَفَ الدَّارَيْنِ وَسَيِّدَ الثَّقْلَيْنِ الْمَخْصُوْصِ بِقَابَ قَوْسَيْنِ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন খাতামুল্ আম্বিয়া-ই ওয়া মা’দানিল আসরারি ওয়া মানবাইল আনওয়ারি ওয়া জামালিল কাওনায়নি ওয়া শরাফাদ্ দা-রায়নি ওয়া সায়য়াদাস্ সাক্বলায়নিল মাখসুসি বিক্বাবা কাওসায়নি।)
৪১.হাউজে কাউসারের পানি পান করার দুরূদ শরীফ:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلىٰ اٰلِهٖ وَاَصْحَابِهٖ وَاَوْلَادِهٖ وَاَزْوَاجِهٖ وَذُرِّيَّتِهٖ وَاَهْلِ بَيْتِهٖ وَاَصْحَارِهٖ وَاَنْصَارِهٖ وَاَشْيَاعِهٖ وَمُحِبِّهٖ وَاُمَّتِهِ وَعَلَيْنَا مَعَهُمْ اَجْمٰعِيْنَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
(আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মাদিন ওয়া আ’লা আ-লিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া আওলাদিহি ওয়া আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি ওয়া আহলি বায়তিহি ওয়া আসহারিহি ওয়া আরসারিহি ওয়া আশইয়ায়িহি ওয়া মুহিব্বিহি ওয়া উম্মাতিহি ওয়া আলায়না মা’আহুম আজমাঈন ইয়া আরহামার রাহিমীন।)
ফযিলত: হযরত হাসান বসরী (রাঃ) বলেন, আল্লাহর যে বান্দা এবং রাসূলের যে উম্মত হাউযে কাউসারের পানি পরিতৃপ্ত সহকারে পান করতে চায়, সে যেন এই দুরূদ শরীফটি পাঠ করে।