সমাজ বিনির্মাণে মুহাম্মদ (স.) এর ভূমিকা
।। মু. মহসিন কবির মুরাদ ।।
ভূমিকা : ইসলাম মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। মানুষের ইহজীবনের শান্তি ও কল্যাণের এবং পরজীবনের মুক্তি ও সাফল্যের রাজপথ হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহ তা’য়ালা ওহীর মাধ্যমে এই জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছেন। আর জীবন ব্যবস্থার মহান শিক্ষক ও মডেল হিসেবে আগমন ঘটেছে মুহাম্মদ (সাঃ) এর। তিনি এ জীবন ব্যবস্থা প্রচার করেছেন, শিক্ষাদান করেছেন, নিজে এর অনুসরণ ও প্রয়োগ করে নমুনা স্থাপন করেছেন। সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তি, কল্যাণ, নিরাপত্তা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একমাত্র অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ রেখে গেছেন যা কেয়ামত পর্যন্ত চিরভাস্বর ও অমলিন থাকবে। এক্ষেত্রে আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআনে ঘোষণা করেছেন- ‘‘ওয়া ইন্নাকা লা-আলা খুলুকিন আযিম’’ অর্থাৎ ‘‘হে নবী আপনি নীতি-নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্রের সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত’’। আর মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেছেন- ‘‘লাক্বাদ কানা লাকুম ফি রাসূলিল্লাহি উস্ওয়াতুন হাসানা’’ অর্থাৎ ‘‘আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ’’।
রাসূল (সাঃ) এর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সর্বযুগের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ একটি মানবকল্যাণমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন যার গোড়াপত্তনের ভূমিকায় ছিলেন তাঁর হাতে গড়া একদল ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্রের অধিকারী মানুষ।
যে সমাজে রাসূল (সা.) এর আগমন :
রাসূল (সা.) এর জীবন চরিত থেকে স্পষ্ট হয় যে যখন আরব সমাজ চরম অবস্থায় লিপ্ত ছিল। হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, রাহাজানি, নারী নির্যাতন, অশস্নীলতা-বেহায়াপনা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দ্বন্দ-সংঘাত ও হানাহানি-রেশারেশিতে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল সমাজ ব্যবস্থা। শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করায় পিতা অপমান বোধ করে জীবিতাবস্থায় মাটিতে পুঁতে রাখত। শির্ক ও পৌত্তিলকতার অভিশাপে সর্বনাশ হচ্ছিল সভ্য জীবনের। মিসর, ভারত, ব্যাবিলন, গ্রীস ও চীনে সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। একমাত্র রোম ও পারস্য সভ্যতার উড্ডয়মান পতাকার ঝাঁকজমকে চোখ ঝলসে দিত। অথচ সে সব নয়নাভিরাম প্রাসাদের অভ্যন্তরে চলত লোমহর্ষক যুলুম ও নির্যাতন। জীবনের ক্ষতস্থান থেকে বের হতো উৎকট দুর্গন্ধ। রাজা ও সম্রা্টগণ খোদা হয়ে জেঁকে বসেছিল। তাদের সাথে আঁতাত করে জনগণের উপর প্রভুত্ব চালাত ভূমি মালিক ও ধর্মযাজক শ্রেণী। জনগণের নিকট থেকে মোটা অংকের কর, খাজনা, ঘুষ ও নজরানা আদায় করত। উপরন্তু পশুর মতো খাটনি খাটতে বাধ্য করা হতো। মক্কা ও তায়েফের মহাজনরা সুদী ব্যবসার জাল পেতে রেখেছিল। দাস ব্যবসার অভিশপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মহা ধুমধামের সাথে চলছিল। মোটকথা মানুষ প্রবৃত্তির গোলামির সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে গিয়ে হিংস্র হায়েনা ও চতুস্পদ জন্তু-জানোরের মত জীবন-যাপন করছিল। শক্তিধররা দুর্বলদেরকে ছাগল ও ভেড়ার পালের মত নাকে রশি দিয়ে ঘোরাত, আর দুর্বলেরা শক্তিমানদের পদতলে লুটিয়ে থাকত। এহেন পরিস্থিতিতে ৫৭০ খ্রিঃ ১২ রবিউল আউয়ালে সমাজ সংস্কার ও আমূল পরিবর্তনের শেস্নাগান নিয়ে মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) এর আগমন ঘটেছিল।
সমাজ সংস্কারে রাসূল (সা.) এর লক্ষ্য :
রাসূল (সা.) এর জীবনী থেকে যথার্থ উপকারিতা অর্জনের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব জানা জরুরি তা হলো রাসূল (সাঃ) এর সামনে ইস্পিত পরিবর্তনের পরিধি কতদূর? তাঁর কাজের মানদন্ড কি ছিল? সমাজ ব্যবস্থায় তিনি কি আংশিক পরিবর্তন চাইতেন না সর্বাত্মক? তাঁর দাওয়াত কি নিছক ধর্মীয় ও নৈতিকতার সঙ্গে জড়িত ছিল না সার্বিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য ছিল? সামাজিক পরিমন্ডলে তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্য কি ছিল? এর জবাব আল-কুরআনে সূরা হাদীদের ২৫ নং আয়াতে আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেছেন- ‘‘আমি আমার রাসূলকে (সাঃ) এই উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছি এবং তার উপর কিতাব ও মানদন্ড নাযিল করেছি যাতে মানবজাতি ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়’’। সূরা আস্সফ এর ৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘‘আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে (সাঃ) হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ সত্য দ্বীনকে অন্য সমস্ত ধর্ম মত ও জীবন ব্যবস্থার উপর বিজয়ী করে দিতে পারেন। মুশরিকরা তা পছন্দ করুক আর নাই করুক’’। তাহলে বোঝা গেল ইসলামের দাওয়াতের একমাত্র উদ্দেশ্য হল মানবজীবনকে ইনসাফ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গড়ে তোলা এবং সমাজ ব্যবস্থায় কার্যকরভাবে ভারসাম্য ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা। কুরাইশ ও আরবের অন্যান্য মুশরিকরাতো নিজেদের জাহেলী জীবন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেই। যে কোন ভাল সেস্নাগান বা ভাল কার্যক্রমই হোক যদি জাহেলিয়াতের ধারক বাহকদের স্বার্থের পরিপন্থী হয় তাহলে বিরোধিতা আসবেই। কিন্তু এই সব বিরোধিতা বা পছন্দ অপছন্দের তোয়াক্কা না করে সকল ধর্মান্ধতা ও জাহেলিয়াতের উপর দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার কাজ সুসম্পন্ন করতেই হবে। আর ইসলামের দাওয়াতের উদ্দেশ্য যদি এটাই না হতো তাহলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, জেহাদ ও হিজরতের অবকাশতো থাকতো না। জান ও মালের কোরবানীর আহবানতো জানানো হতো না।
তাহলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পৌঁছা যায় মুহাম্মদ (সাঃ) শুধুমাত্র নিছক ধর্মের কথা নয় বরং ঘুণে ধরা একটি সমাজকে ভেঙে নতুন আরেকটি সমাজ কায়েমের নিরলস চেষ্টা করেছিলেন যে এই সমাজে শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, নেতৃত্ব তৈরি ও বিচার ব্যবস্থা সবই হবে মানবতার জন্য দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি।
শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নে রাসুল (সা.) :
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। স্বয়ং সর্বময় জ্ঞানের মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা একান্ত নিবিড় তত্ত্বাবধানে তাঁকে শিক্ষাদান করেছেন এবং মানবতার মহান শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সূরা জুমুআর ২নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘‘আল্লাহ নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন, শিক্ষা দেন জ্ঞান ও বিজ্ঞান, যদিও এর আগে তারা ছিল স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে’’। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি তাঁর সুমহান শিক্ষার আলো বিকীর্ণ করে পৃথিবীর সর্বাধিক অসভ্য, অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত, পশ্চাৎপদ, হিংস্র ও পাশবিক জাতিকে এমনভাবে গঠন করেছিলেন যে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সভ্যতা, পার্থিব ও পরলৌকিক উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ আসন অলঙ্কিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
মুহাম্মদ (সা.) মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসাবে সফলতা লাভের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হলো তার অনন্য শিক্ষাদান পদ্ধতি। জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীর মনোযোগ সৃষ্টি, চুপচাপ বসে শ্রবণের নির্দেশনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রবণ-দৃষ্টির যুগপৎ সম্পৃক্ততা, কৃত্রিমতা ও অপ্রাসঙ্গিকতা বর্জন, প্রয়োজনে কণ্ঠস্বর উঁচু নিচু করা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রায়োগিক পদ্ধতির ব্যবহার, শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তার প্রতি লক্ষ্য রেখে উপস্থাপন, সংলাপ ও যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যয় প্রতিপাদন করা, বাস্তব ঘটনা ও উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষাদান, অঙ্গ-প্রতঙ্গের ভঙ্গিমার মাধ্যমে শিক্ষাদান, নক্শা ও রেখা চিত্রের মাধ্যমে, শপথের মাধ্যমে, লিপিবদ্ধকরণ পদ্ধতির অনুসরণ, শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা ও বিশেষ প্রয়োজনে শাস্তি প্রদান। সঠিক শিক্ষানীতি, পাঠ্যক্রম, বিষয়বস্ত্ত ও পাঠদান প্রক্রিয়া - পদ্ধতি নির্ণয়ে মহানবীর (সাঃ) শিক্ষাদান পদ্ধতি সর্বোৎকৃষ্ট যার প্রয়োগের মাধ্যমে মানবতা সঠিক শিক্ষা পাওয়া সম্ভব।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রারূল (সা.) এর পৃষ্ঠপোষকতা :
মহানবী (সাঃ) শালীন কবিতাকে সমর্থন করতেন, সত্যভাষী কবিদেরকে উৎসাহ দিতেন। তিনি ছিলেন একজন কাব্য ও সাহিত্যামোদি, একজন সমঝদার কাব্যবোদ্ধা। কবিদের পৃষ্ঠপোষকতা, কবি ও কবিতা সম্পর্কে তাঁর সামগ্রিক মূল্যায়ন তাই প্রমাণ করে। তিনি বলেছেন- আমি হাছান বিন সাবিতকে কবিতা লিখতে বললাম তার কবিতা আমাকে তৃপ্ত করেছে, আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছে এতে করে তাকে একজন সাহিত্যিক হতে সহযোগিতা করা উচিত। সাংস্কৃতিক চর্চাকেও তিনি উৎসাহিত করেছেন। তাঁর আগমণ উপলক্ষে মদিনার শিশুরা গান গেয়েছিল-
‘‘ত্বলায়াল বাদরু আলাইনা মিনছানি ইয়াতিল বিদায়ি,
ওয়াযাবাশ্ শুকরু আলাইনা মাদায়া লিল্লাহি দায়ি’’।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে মহানবী (সা.) :
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য রাসূল (সা.) বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। সকল সম্পদ যেন একশ্রেণীর হাতে পুঞ্জীভূত না হয়ে পড়ে সে জন্য তিনি যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য কায়েম করেন। উত্তরাধিকার আইন দ্বারা নারী-পুরুষদের সম্পদের অংশীদারিত্ব নির্দিষ্ট করেন। সুদ, ঘুষ, কালোবাজারিকে হারাম ঘোষণা করে অর্থ উপার্জনের সকল অনৈতিক পথ রুদ্ধ করে দেন। অপরদিকে ব্যবসাকে হালাল করে ব্যবসাতে রিয্কের ৯০% ঘোষণা করেছেন। আজকের সমাজে পশ্চিমারা ইসলামী অর্থ ব্যবস্থাকে বিভিন্ন ভাবে কটুক্তি করলেও একথা সত্য যে রাসূল (সা.) যে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা কায়েম করেছেন তার বিকল্প পূর্ণাঙ্গ অর্থ ব্যবস্থা কোন মানব সমাজ দেখাতে পারেনি। সমাজতন্ত্র শ্রেণীহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করে বিশ্ববাসীকে হঠাৎ চমকে দিলেও প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশাল সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে খান খান হতে হয়েছে। পুঁজিবাদীদের ব্যর্থতার কথাও সকলের অজানা নয়।
রাসূল (সা.) এর রাজনীতি : আল্লাহ রাববুল আলামীন রাসূল (সাঃ) কে যে উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছিলেন তা হলো আল্লাহর খলিফা হিসেবে সমাজের সকল দিক ও বিভাগকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধি মোতাবেক পরিচালনার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন। সমাজ ভাঙার এবং গড়ার অন্যতম বৃহত্তম মাধ্যম হচ্ছে রাজনীতি। সে ক্ষেত্রেও ইসলামের একটি রীতি-পদ্ধতি বিদ্যমান। মহানবী (সাঃ) মাক্কী জীবনের ১৩ বছরে উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি গঠন করে মাদানী জীবনে সেই যোগ্যতম ব্যক্তিদের সংগঠিত করে ইসলামী আন্দোলন করেন এবং জনসমর্থন লাভ করেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। এর পরই প্রকৃত পক্ষে ইসলামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের নেতা থেকে শুরু করে একজন কর্মচারী পর্যন্ত আল্লাহ ভীতির ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ছিলেন। কোন পার্থিব লাভের স্বার্থে নয় বরং পরকালের মুক্তির প্রত্যাশায় নিয়ন্ত্রিত হত তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড। কিন্তু এই পরিবেশ কায়েম করতে তাকে হতে হয়েছে সমাজপতিদের দ্বারা অনেক বাধার সম্মুখীন।
উপসংহার : তিনভাগের দু’ ভাগ জল ও একভাগ স্থল ধারণকারী পৃথিবী নামক এই গ্রহটির বুকে রয়েছে অঢেল সম্পদ রাজি, মানুষের জন্য সুখ ও শান্তির অনুপম আশ্রয়। কিন্তু এগুলো যদি মানবতার কল্যাণে ব্যয়িত না হয় তবে বিশ্বের ৫০০ কোটি অসহায় মানুষ যাবে কোথায়? সৌরজগতে বসতি গড়ার পৃথিবীর বিকল্প কোন গ্রহ তো নেই। তাই পৃথিবীকে শান্তির আবাস হিসেবে গড়ে তুলতে আকাঙ্ক্ষী প্রতিটি মানুষ। কিন্তু সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এই অগ্রযাত্রার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। এই অবক্ষয়ের কারণে রাষ্ট্র ও সরকার যন্ত্রের প্রতিটি পর্যায়ে সুদ, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, কালোবাজারী, ব্যবসায় সিন্ডিকেট, অনাচার ও দুর্নীতির মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। পারিবারিক বন্ধনে ভাঙন, নারী-পুরুষের বৈষম্য বৃদ্ধি, খুন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুক, তালাক, নারী-নির্যাতন, ছিনতাই, রাহাজানি, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানাবিধ সমস্যা প্রকট আকারে ধারণ করেছে। অপরদিকে নারীর ব্যক্তিসত্তাকে ভোগ্য পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। নৈতিক শিক্ষার অভাবে তরুণ প্রজন্ম হারাচ্ছে মূল্যবোধ এবং তাদের চরিত্র হননের জন্য সু-কৌশলে নৈতিকতা পরিপন্থী নানাবিধ কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। যার ফলে তৈরি হচ্ছে সন্ত্রাসী, মাদক সেবী ও ইভটেজার। আজ এই সকল সমস্যা উত্তরণের একমাত্র উপায় মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসূল (সা.) এর আনিত বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মানুষকে গঠন করার মাধ্যমে সেই সোনালি সমাজ বিনির্মাণের দিকে অগ্রসর হওয়া।
আজ বাস্তবে রূপ নেওয়ার সময় এসেছে বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শহীদ হাসান আল বান্নার সেই আহবান-
‘‘জাতির হে তরুণেরা যুবকেরা জেগে উঠো, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি ঘোষণা করছে আগামী শতাব্দী ইসলামের শতাব্দী’’।
mohsinlax82@yahoo.com
No comments:
Post a Comment