Saturday, June 28, 2014

কুরআন পাঠের ফজিলত

কুরআন পাঠের ফজিলত


 আজ সব থেকে বেশী প্রয়োজন কুরআন বুঝার। কুরআন জুযদান কিংবা তা সংরক্ষণের বস্তু নয়। কুরআনের স্থান হৃদয়। সে-দিন সাহাবায়ে কিরাম বিশ্বে বরেণ্য হয়েছিল কুরআনের মর্ম বুঝে ছিলেন এবং সে অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের কাছে রাসূলের জীবন ও কুরআন ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আজও বিশ্ব কুরআনের মুখাপেক্ষী। কুরআনকে সহজ-সরল পন্থায় বুঝার ব্যবস্থা করা গেলে মানুষ কুরআন থেকে নিজেরাই যা করণীয়, যা বর্জনীয় বেছে নিবে। যাতে তারা আল্লাহ্‌র কথা আল্লাহ্‌র কুরআন দিয়ে বুঝতে পারে সে ব্যবস্থার প্রয়োজন।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত মু’মীন হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার প্রবৃত্তি আমার আনীত হিদায়াৎ ও শিক্ষার অনুগত না হয়।– মিশকাতুল মাসাবিহ।
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দীসগণ বলেন, এই হাদীসের বার্তা ও দাবী হচ্ছে, প্রকৃত মু’মীন সেই ব্যক্তি যার অন্তর, মস্তিষ্ক, প্রবৃত্তি ও প্রবণতাসমূহ রাসূল (সা.)-এঁর আনীত হিদায়াৎ ও শিক্ষা (কিতাব ও সুন্নাত)-এর অনুগত হয়ে যাবে। এটা রাসূল (স.)-এঁর প্রতি ঈমান গ্রহণ ও তাঁকে আল্লাহ্‌র রাসূল মেনে নেওয়ার অপরিহার্য ও যৌক্তিক চাহিদা। যদি কারো এরূপ অবস্থা না হয় তবে বুঝতে হবে, তখনো পর্যন্ত তার সত্যিকার সৌভাগ্য হয় নি যে নিজেকে এই চিন্তা ও এই মানদণ্ডের ওপর স্থাপন করবে।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যেভাবেই হোক আমাদের কাছে কুরআনের পয়লা দাবী— তাকে বোঝার এবং বোঝার মতো পাঠই বেশী প্রয়োজন। এই পর্যায়ে আমরা কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় বর্ণনার খাতিরে নুজুলে কুরআন, কুরআন সংরক্ষণ ও একত্রকরণ, মাসহাফ তৈরী ও প্রচার, রুমুজে কুরআন, আসমা ও আওসাফে কুরআন সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
নুজুল : আল-কুরআন আল্লাহ্‌র কালাম। জিব্রাইল (আ.)-এঁর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তায়ালা তা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এঁর প্রতি নাজীল করেন। মক্কার কাফিররা নুজুলে কুরআন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল : সমগ্র কুরআন তাঁর কাছে একবারে নাজীল করা হল না কেন? উত্তরে বলা হয়েছে, 'এভাবে নাজীল করেছি আপনার হৃদয়ে তা দিয়ে মজবুত করার জন্য এবং তা আমি ক্রমে ক্রমে স্পষ্টভাবে আবৃত্তি করেছি।' কুরআন ও নুজুলে কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন, ‘... আমি তো আপনাকে কেবল সু-সংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খণ্ড-খণ্ডভাবে যাতে আপনি তা মানুষের কাছে ক্রমে ক্রমে পাঠ করতে পারেন এবং আমি তা ক্রমশ অবতীর্ণ করেছি। আপনি বলুন, তোমরা এতে বিশ্বাস কর বা বিশ্বাস না কর, এর পূর্বে যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে; এবং বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হয়েই থাকে আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’
পৃথিবীতে মানুষের কাছে আজ যে কুরআন বিদ্যমান তা অবিকল এরূপই রাসূল (সা.) তাঁর সাহাবীদের কাছে রেখে গেছেন। আল্লাহ্‌র নির্দেশে তিনি আয়াত, রুকু ও সুরার বিন্যাস করেছেন। কোনো কোনো সুরা একবারে নাজীল হয়েছে এবং কোনো কোনো সুরা খণ্ড-খণ্ডভাবে নাজীল হয়েছে। কোন্ আয়াত কোন্ সুরার কোন্‌ স্থানে স্থাপন করতে হবে তা তিনি বলে দিতেন এবং তদানুযায়ী তা রুকু ও সুরার অন্তর্ভূক্ত করা হত। এ জন্য কোনো কোনো মক্কী সুরায় কিছু মাদানী আয়াত এবং মাদানী সুরায কিছু মক্কী আয়াত সন্নিবিষ্ট হয়েছে। সুরার বিন্যাসের ক্ষেত্রেও মক্কী ও মাদানী সংমিশ্রণ লক্ষ্যণীয়। যেমন মাসহাফের প্রথম সুরা আল-ফাতিহা মক্কী কিন্তু তার পরবর্তী ৪টি সুরা মাদানী, তারপর ২টি সুরা মক্কী ও ২টি মাদানী। এইরূপ কুরআন মক্কী ও মাদানী সুরার সংমিশ্রণে বিন্যস্ত।


মক্কী ও মাদানী সুরার বৈশিষ্ট :
ক) মক্কী সুরায় যেখানে মহান আল্লাহ্‌র প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের কথা বিবৃত, মাদানী সুরায় সেখানে উক্ত বিশ্বাস কাজে পরিণত করার কথা বর্ণিত।
খ) মক্কী সুরায় যেখানে আমলে সালেহ তথা ভালো কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, মাদানী সুরায় সেখানে আল্লাহ্‌র উপর ঈমানের ভিত্তিতে উক্ত কাজ সম্পাদনের নিয়ম, নীতি, বিধি বিধান বর্ণিত হয়েছে।
গ) মক্কী সুরায় যেখানে ভবিষ্যৎ-বাণী রয়েছে, মাদানী সুরায় সেখানে তা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
ঘ) মক্কী সুরায় যেখানে মহান আল্লাহ্‌র সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সম্মিলনের কথা বলা হয়েছে মাদানী সুরায় সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের আচরণ কীরূপে কল্যাণ ও শান্তি নিশ্চিত করতে পারে তা বর্ণিত হয়েছে।
ঙ) মানুষের সুপ্ত বিবেক ও অনুভূতিকে তাড়িত করার জন্য, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ উজ্জীবিত করার জন্য এবং আখিরাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য মক্কী সুরায় যেখানে ভাষার সম্মোহনী ব্যঞ্জনা পরিদৃষ্ট, মাদানী সুরায় সেখানে রাষ্ট্র ও সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি জীবন সম্পর্কিত নির্দেশমালার পারিভাষিক অভিব্যক্তি লক্ষণীয়।
আল-কুরআনের বিন্যাস অত্যন্ত অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। নুজুলের ক্রমধারায় আল-কুরআনকে বিন্যস্ত না করে সংমিশ্রিতভাবে বিন্যস্ত করার মধ্যে অবিভাজ্য জীবনের প্রতি ইংগিত বিদ্যমান। ঈমানের সঙ্গে আমলের, বিশ্বাসের সঙ্গে কর্মের, ভবিষ্যৎ-বাণীর সঙ্গে তা বাস্তবায়নের, আখিরাতের কল্যাণের সঙ্গে দুনিয়ার কল্যাণের এবং আল্লাহ্‌র সঙ্গে সাক্ষাতের সাথে বান্দার সঙ্গে সুসম্পর্কের অভিব্যক্তি এর মধ্যে নিহিত।
কুরআন সংরক্ষণ ও একত্রকরণ : নুজুলের শুরু থেকেই আল-কুরআন লিখিতভাবে ও মুখস্থ করনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। মক্কা ও মদীনায় তখন কতক লোক ছিল যারা লিখতে পড়তে পারত। এমন কতক লোক সব সময় রাসূল (সা.)-এঁর সান্নিধ্যে থাকত এবং লিখার প্রয়োজনীয় উপকরণও তিনি সাথে রাখতেন। চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় যখন তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করছিলেন, তখন অন্যতম কাতিবে অহী হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-কে এবং দোয়াত, কলম ও অন্যান্য লিখার সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে ছিলেন। ৬ষ্ঠ হিজরীতে হুদায়বিয়ার যে সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা লিখিত হয়েছিল রাসূল (সা.)-এঁর সঙ্গে নেওয়া লিখার উপকরণ দিয়ে। শুধু আরবী লিখার ব্যবস্থা ছিল তা-ই নয়, হিব্রু, গ্রীক, পাহলভী প্রভৃতি ভাষায় পত্রযোগাযোগ করার ব্যবস্থাও রাসূলের দরবারে ছিল। যখন লিখন ছিল বিরল ব্যাপার তখন এমন ব্যক্তির মাধ্যমে, যিনি নিজে লিখতে পড়তে পারতেন না, আল-কুরআনকে নিখুঁতভাবে লিপিবদ্ধ করিয়ে মহান আল্লাহ্‌ চিরস্থায়ী বিশুদ্ধতার ব্যবস্থা করলেন। এ হল আল-কুরআনের অন্যতম অলৌকিকতা।

মেইলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম/নীল
- See more at: http://www.mailbd24.com/report/details/33320#sthash.K5BUPGYi.dpuf

No comments:

Post a Comment