Tuesday, June 3, 2014

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়



।। এইচ.এম.মুশফিকুর রহমান ।।
মানুষ তার স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে এ ধরায় ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গের নৈকট্য বা আস্থা অর্জনে নানাবিধ কাজ করে থাকে। অধিক তোষামোদ, উপহার, উপঢৌকন প্রদান ও মনিবের আদেশের অনুগত হয়ে নিজকে মনিবের নিকট বিশ্বস্থ করে তুলে। ফলে মনিব তার অনুগত ব্যক্তিকে বিশ্বাস করে ধন-সম্পদসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োগ দান করে। যার ফলশ্রুতিতে ব্যক্তি তার স্বার্থ সিদ্ধির সুযোগ লাভ করে। আর দুনিয়ার জীবনকে করে তুলে সুন্দর ও সার্থক। ভুলে যায় তার স্থায়ী পরকালীন জীবনকে। প্রকৃতপক্ষে বিবেকবান ও জ্ঞানী মানুষের উচিত, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের পরিবর্তে পরকালীন স্থায়ী জীবনের সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করতে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ রাববুল আলামীনের নৈকট্য বা সান্নিধ্য লাভের উপায় খোঁজা। কিন্তু প্রশ্ন হলো মানুষের পক্ষে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কি সম্ভব? উত্তরে বলব, হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব। তবে মানুষ এ দুনিয়ায় আসবার মুহূর্তে আল্লাহকে রব বা মুনিব মেনে চলার মাধ্যমে তাঁর খলিফা হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করার অঙ্গীকার করে এসেছে দরকার তার বাস্তবায়ন। চিরশত্রু ইবলিস মানুষের জীবন পথের বাঁকে বাঁকে, চলার পথের মোড়ে মোড়ে নানা বিভ্রান্তির বেড়াজাল সৃষ্টি করে আসছে আবহমান কাল থেকেই। ফলে আল্লাহ রাববুল আলামীনের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হবার কথা ছিল মানুষের পক্ষে সে সম্পর্ক মাঝে মাঝে বজায় রাখা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

মানুষকে যে সুকঠিন দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে এ ধরায়, আর এর বাধা সৃষ্টির চ্যালেঞ্জকারী ইবলিসের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা গাফেল নন। অভিশপ্ত ইবলিসের আক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করতে আল্লাহ তায়ালা নিজেই অভয়বাণী শুনিয়েছেন : ‘‘অতঃপর আমার পক্ষ থেকে হেদায়াত আসবে, যারা সেই হেদাতের অনুসরণ করবে তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। (সূরা বাকারা-৩৮)
মানুষের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুগে যুগে অহির জ্ঞান নাযিল করেছেন, মানুষের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের বাস্তব শিক্ষাও দিয়েছেন নবী-রাসূলদের প্রেরণের মাধ্যমে। সুতরাং আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপন ও নৈকট্য অর্জন কোন দুর্বোধ্য ব্যাপার নয়। নবী-রাসূলদের প্রদর্শিত পথেই আল্লাহর সাথে বান্দার সঠিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে এবং তাদের দেখানো পথে চেষ্টা সাধনায় নিয়োজিত থেকেই এ সম্পর্ক বৃদ্ধি করাও যেতে পারে। মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ হেদায়াত গ্রন্থ আল-কুরআন ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষার আলোকে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির ব্যাপারে তিনটি জিনিস আয়ত্ত করা অপরিহার্য।

১\ আল্লাহ তায়ালার সঠিক মারেফাত বা পরিচয় লাভ করা, ২\ সঠিক অর্থে আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব করা। ৩\ আল্লাহর মনোনীত পথে চলা এবং অমনোনীত পথ বর্জন করা। আল্লাহর সাথে সর্ম্পক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কুরআন ও হাদীসে পাকে আরো অনেক কাজের কথা বলা হয়েছে। হযরত মায়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি একদা নবীজীর সংগে সফরে ছিলাম। সফরকালে একদিন আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে এমন কোন আমল বলে দিন, যার মাধ্যমে আমি বেহেশত লাভ করতে পারি। তিনি বলেছেন, তুমি তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বস্ত্ত প্রার্থনা করেছ। কিন্তু আল্লাহপাক যার জন্যে তা সহজ করে দেন, তার পক্ষে তা লাভ করা অতি সহজ। অতঃপর বললেন, সে আমল এই যে, আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন অংশীদার করবে না। নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রোযা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ শরীফে হজ্জ সম্পন্ন করবে। অতঃপর তিনি বললেন, এসো তোমাকে পুন্য দ্বারের সন্ধান দিয়ে দেই (তাই এই যে) রোযা ঢাল স্বরূপ। (যা শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়) এবং সদকা মানুষের পাপানল নির্বাপিত করে দেয়। (তিরমিযী)

তাহাজ্জুদ নামায আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেন- অর্থাৎ তোমরা তাহাজ্জুদকে আবশ্যক বানিয়ে নাও। কারণ তা তোমাদের পূর্ববর্তী আল্লাহ ওয়ালাগণের নিদর্শন এবং তা তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের মাধ্যম, তোমাদের গুনাহ সমূহের কাফফারা (ক্ষতিপূরণ) এবং তোমাদেরকে গুনাহ হতে নিবৃত্তকারী। (তিরমিযী, মিশকাত)
আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রধানতম কার্যকর উপায় হল জিকির এবং দোয়া। আল্লাহর বানী : ‘‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব।’’ (সূরা বাকারাঃ ১৫২) ‘‘তোমরা আমার কাছে দোয়া কর আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।’’ (সূরা মুমিন : ৬০) মহান আল্লাহ আরো বলেন-‘‘তোমার রবের জিকির কর বেশি বেশি করে আর তার পবিত্রতা ঘোষণা কর সকাল-সন্ধ্যায়।’’ (সূরা ইমরানঃ ৪১)
জিকিরের সুন্নাত তরিকা সম্মত উপায় তিনটি। ১. সালাত, ২. তেলাওয়াতে কুরআন ও ৩. মাসনুন তরিকার জিকিরসমূহ এবং নবী (সাঃ) এর শিখানো দোয়া সমূহ। দোয়ার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম : ‘‘তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দিব। গর্ব অহংকার বশতঃ যে আমার ইবাদত পাশ কাটিয়ে যায়, অতি সত্বর তারা অবশ্য অবশ্যই লাঞ্ছিত অবস্থায় দোযখে যাবে। (সূরা মুমিন : ৬০)
আল্লাহর নৈকট্য লাভের আরো একটি মাধ্যম হল ইস্তেগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনা। রাসূল (সা.) বলেন, ‘‘উত্তম দোয়া হল ইস্তেগফার।’’ (বুখারী)

নবী করীম (সা.) বলেন- ‘‘কোন মানুষ গুনাহের কাজ করার পর যদি অজু করে নামাজ পড়ে এক আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। তাহলে তাকে অবশ্য অবশ্যই মাপ করে থাকেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল কুরআনে থেকে এই অংশটুকু তেলাওয়াত করলেন : (জান্নাতীদের পরিচয়) তারা যখন কোন ফাহেশা কাজ করে ফেলে, অথবা নিজেদের নফসের উপর জুলুম করে বসে,  সাথে সাথেই আল্লাহর কথা স্মরণ করে, অতঃপর তার কাছে তাদের গোনাহের মাফ চায় এরপর এরূপ গোনাহের কাজ তাদের জ্ঞাতসারে বারবার সংগঠিত হয় না। আল্লাহ ছাড়া তো আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।’’ (বুখারী)
এ ইস্তেগফার বা তওবার বিশুদ্ধ ও ধর্তব্য হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। ১. বর্তমানে যে গোনাহে লিপ্ত রয়েছে। তা অবিলম্বে বর্জন করতে হবে। ২. অতীতের গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হতে হবে এবং ৩. ভবিষ্যতে সে গোনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং কোন ফরজ কাজ ছেড়ে থাকলে তা আদায় অথবা কাযা করতে হবে। গোনাহ যদি বান্দার বৈষয়িক হক সম্পর্কিত হয় তবে প্রাপক জীবিত থাকলে তাকে সে ধন-সম্পদ ফেরত দেবে অথবা মাফ করিয়ে নেবে। প্রাপক জীবিত না থাকলে তার ওয়ারিসদেরকে ফেরৎ দেবে। কোন ওয়ারিস না থাকলে বায়তুল মালে জমা দিবে।
সকল তওবার জন্যেই আল্লাহর ওয়াস্তে গোনাহ বর্জন করতে হবে।

মানব আত্মার পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইতিকাফ একটি উত্তম মাধ্যম। দুনিয়ার মানুষকে হাজারও কর্মব্যস্ততা ও ঝামেলার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। শয়তান মানুষের পিছে অবিরাম লেগে থাকে এবং প্রতিটি কাজে সে মানুষকে ধোকা দিতে চেষ্টা করে। ইতিকাফ দুনিয়ার সমস্ত ঝামেলা থেকে মানুষকে মুক্ত করে আল্লাহ নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। ‘‘আর যখন তোমরা ইতিকাফে থাক তখন স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দের্র্র্শাবলী সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেন যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে।’’ (বাকারা : ১৮৭) এ ছাড়া পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন ও সর্বোপরি পিতা-মাতার হক বা অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব।

আল্লাহ বাণী : ‘‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সঙ্গে কোন বস্ত্তকে শরীক করো না এবং পিতা-মাতার প্রতি উত্তম আচরণ কর । (নিসা : ৩৬)
আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরের হক বা অধিকার সম্পর্কে আল্লাহর বানী : সুতরাং আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য হক প্রদান কর এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের প্রাপ্য হক দাও) উহা ঐ সমস্ত লোকের জন্য উত্তম যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। আর এরূপ লোকেরাই সফলতা লাভ করবে। (সূরা রূম : ৩৮)
নবী করীম (সা.) বলেছেন, রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়তা (রহমানের সাথে মিলিত) ঢাল স্বরূপ। যে ব্যক্তি এর সাথে সম্পর্ক জুড়ে রাখে আমি তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে রাখি। আর যে লোকে এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমি এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। (বুখারী)

আলস্নহর নৈকট্য অর্জনকারীদের জন্যে কিছু করণীয় আল্লাহ তায়ালা কুরআন পাকে বর্ণনা করেছেন। ‘‘যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা সত্য, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে অন্ধ? তারাই বুঝে যারা বোধশক্তিসম্পন্ন। এরা এমন লোক যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। এবং যারা বজায় রাখে ঐ সম্পর্ক, যা বজায় রাখতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন এবং স্বীয় পালনকর্তাকে ভয় করে এর কঠোর হিসেবের আশঙ্কা রাখে। এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ।’’ (সূরা রা’দ ২০-৩০)

উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় নয়টি বিষয়ের আলোকপাত করা হয়েছে। ১\ আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করা, ২\ কোন অঙ্গীকার ভঙ্গ না করা, ৩\ আল্লাহ তায়ালা যেসব সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন সেগুলো বজায় রাখা, ৪\ আল্লাহকে ভয় করা, ৫\ কঠোর ও পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাবকে ভয় করা, ৬\ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় অকৃত্রিমভাবে ধৈর্য ধারণ করা, ৭\ নামায কায়েম করা, ৮\ আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক থেকে কিছু আল্লাহর নামে ব্যয় করা, ৯\ মন্দকে ভাল দ্বারা, শত্রুতাকে বন্ধুত্ব দ্বারা এবং অন্যায় ও জুলুমকে ক্ষমা ও মার্জনা দ্বারা প্রতিহত করা।
আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাদের বিশেষ গুণাবলী সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘‘রহমান এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে এবং যারা বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ। বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা। এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।
কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। এবং যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়। এবং যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না। এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা আমাদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শ স্বরূপ কর। (সূরা আল ফুরকান : ৬৪-৭৫)

আল্লাহর বিশেষ ও প্রিয় বান্দাদের তেরটি গুণ ও আলামত উপরোক্ত আয়াতসমূহে আলোকপাত করা হয়েছে। ১. বান্দার সমস্ত ইচ্ছা ও ক্রিয়াকর্ম প্রভূর আদেশ ও মর্জির উপর নির্ভরশীল হওয়া। ২. পৃথিবীতে নম্রতা সহাকারে চলাফেরা করা। ৩. অজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সাথে নিরাপত্তার সহিত কথা বলা। ৪. পালনকর্তার সামনে সেজদা ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি যাপন করা। ৫. সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে আখেরাতের চিন্তায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা, ৬. অপব্যয় বা কৃপণতা না করে মধ্যবর্তী অবস্থায় ব্যয় করা। ৭. ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করা। ৮. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা ও ব্যভিচারের নিকটবর্তী না যাওয়া। ৯. পাপ করার পর তওবা করা। ১০. মিথ্যা, বাতিল ও পাপ কর্ম সাধিত হয় এমন মজলিসে যোগদান না করা। ১১. অনর্থক ও বাজে মজলিস পরিত্যাগ করা, কখনও যদি এরূপ মজলিসের মুখোমুখী হতে হয় তাহলে গাম্ভীর্য় ও ভদ্রতা সহকারে চলে যাওয়া। ১২. শ্রবণশক্তি ও অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের ন্যায় কুরআন শ্রবণ ও পাঠ করে তদনুযায়ী আমল করা। ১৩. নিজ সন্তান-সন্তুতি, স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের জন্যে আল্লাহর নিকট দোয়া করা।
উপরোক্ত বিষয়গুলো আমলের মাধ্যমে আল্লাহ রাববুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন সম্ভব। আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর নৈকট্য হাসিলের লক্ষ্যে এ সকল কাজ যথাযথ ভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

No comments:

Post a Comment