সৌদি সরকারি ফি বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ উমরাহ পালনকারীরা
প্রায় দু’ সপ্তাহ বন্ধ রাখার পর সৌদি সরকার উমরাহ ভিসা চালু করেছে। তবে, সরকারি ফি বাড়ানো হয়েছে ৩ গুণের বেশি। এতে বাংলাদেশের অনেকে উমরাহ পালনে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল করেছে। আরবি রজব মাসের ১৬ তারিখ থেকে সৌদি সরকার উমরাহ ভিসা ইস্যু বন্ধ রাখে। এর আগে পর্যন্ত উমরাহ পালনের জন্য জনপ্রতি ফি নেয়া হতো ৫০০ সৌদি রিয়াল। ভিসা ইস্যু শুরু হওয়ার পর তা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭১০ রিয়াল। এভাবে সরকারি ফি বৃদ্ধিতে উমরাহ পালনে ইচ্ছুক বাংলাদেশের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ট্রাভেল এজেন্টরা জানান, এভাবে সৌদি সরকার ফি বাড়ানোয় অনেকে তাদের উমরাহ পালনে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল করেছেন। সরকারি এই ফি’র বাইরে রয়েছে বিমান ভাড়া, মক্কা ও মদিনায় হোটেল ভাড়া এবং আরও বিভিন্ন খরচ। মক্কা ও মদিনায় হোটেল ভাড়াও বেড়ে গেছে প্রচুর। মাসখানেক পূর্বে মক্কায় দৈনিক যে হোটেলের জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৪০ রিয়াল, সেটা এখন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯০ রিয়াল। এভাবে বেড়েছে সব ধরনের হোটেল ভাড়া। আর রমজানে হোটেল ভাড়া হবে আরও বেশি। অবশ্য সব হোটেল আগামী দু’মাসের জন্য ব্যবসায়ীরা অগ্রিম বুক করে রেখেছেন। কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্টের কর্মকর্তারা জানান যে সৌদি সরকারের ফি বৃদ্ধি এবং সেখানে হোটেল ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ উমরাহ যাত্রীদের সুবিধার জন্য বিমান ভাড়া হ্রাস করেছে। সে সব দেশে সরকারি এয়ারলাইন কর্তৃক ভাড়া হ্রাসের কারণে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোও ভাড়া হ্রাস করেছে। তবে, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি এবং নেয়ার সম্ভাবনাও নেই। তারা আরও জানান, ভিসা ইস্যু আরম্ভ হওয়ার আগে যারা প্রসেসিংয়ের জন্য পাসপোর্ট দিয়ে রেখেছিলেন তাদের অনেকে তা ফেরত নিয়ে গেছেন সৌদি সরকারি ফি এবং অন্যান্য খরচ প্রচুর বেড়ে যাওয়ার কারণে। এ ধরনের কয়েকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গতকাল দৈনিক পূর্বকোণ প্রতিনিধিকে বলেছেন যে সৌদি সরকার ফি বাড়িয়ে উমরাহ পালনে ইচ্ছুক মুসলমানদের মনে আঘাত দিয়েছে। এখন কেবল বিত্তবানদের পক্ষে উমরাহ পালনে যাওয়া সম্ভব, সাধারণ মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।ট্রাভেল এজেন্সি সূত্রে জানা যায়, এখন উমরাহ পালনের জন্য ভিসা দেয়া হচ্ছে দু’ সপ্তাহের। অর্থাৎ সৌদি আরবে প্রবেশের ১৪ দিনের মধ্যে সফর শেষ করে বের হয়ে যেতে হবে। সৌদি হজ মন্ত্রণালয় উমরাহ ভিসার মেয়াদ দু’ সপ্তাহ করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তারা এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে সাধারণত যারা হজ বা উমরাহ পালনে যান, তারা চান যত বেশি সময় সম্ভব সেখানে কাটাতে।মক্কায় প্রবাসী বাংলাদেশি কয়েকজনের সাথে গতকাল কথা বললে তারা জানান যে বর্তমানে মাতাফ ( তাওয়াফ এলাকা ) এলাকার সম্প্রসারণ কাজ চলছে। সব হোটেল উমরাহ যাত্রীতে ভর্তি। এ কারণে সৌদি সরকার উমরাহ পালনকারীর সংখ্যা সীমিত রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। তা সত্ত্বেও বর্তমানে প্রচুর ভিড় উমরাহ পালনকারীদের। চলতি আরবি বছরে এ পর্যন্ত উমরাহ পালনকারীদের সংখ্যা ৪৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে এক হিসেবে জানা গেছে। রমজানে এবারে অধিকতর ভিড় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এবারও উমরাহ মওসুম শুরু হচ্ছে গ্রীষ্মের ছুটির সাথে। তাই উমরাহ পালনকারীর সংখ্যা বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য মক্কা এবং মদিনাতে দৈনিক উমরাহ পালনকারী বিদেশির সংখ্যা কোনভাবেই যেন ৫ লাখ অতিক্রম না করে সেটা নিশ্চিত করতেই ভিসা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর ভিসার মেয়াদ ১৪ দিন করার কারণ হলো যাতে উমরাহ পালন শেষে দ্রুত মানুষ ফিরে যায় এবং আরও মানুষ উমরাহ পালনের সুযোগ পায়।
No comments:
Post a Comment