ঈসা (আ.) এর জননী মহীয়সী মরিয়ম
মুফতি আবদুল হালীম
জেরুজালেমে অবস্থিত মরিয়মের সমাধি। অধিকাংশ গির্জার মতে, এখানেই মরিয়ম শায়িত হয়েছেন
আল্লাহ রাবক্ষুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ৩১টি আয়াতে মহামানবী হজরত মরিয়ম (আ.) এর নাম উল্লেখ করেছেন। এমনকি তার নামে আলাদা একটি সূরাও নাজিল করেছেন। সূরা মরিয়ম ও আলে ইমরানে তার সম্পর্কে বিশদ বিবরণ এসেছে। তিনি ছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.) এর উত্তরসূরি বায়তুল মুকাদ্দাসের সম্মানিত ইমাম ইমরান বিন ইয়াশেমের কন্যা ও ঈসা (আ.) এর মা। আল্লাহপাক তাকে যুগশ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কোরআনে কারিমে এরশাদ হয়েছে, 'হে মরিয়ম! আল্লাহ তোমাকে বাছাই করে নিয়েছেন, পবিত্র-পরিচ্ছন্ন রেখেছেন এবং বিশ্ব নারী সমাজের ওপর তোমাকে মনোনীত করেছেন।' (সূরা আলে ইমরান : ৪২)।
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, "অনেক পুরুষ লোক মহামানব হয়েছেন, আর নারীদের থেকে মহীয়সী হয়েছেন হজরত মরিয়ম বিনতে ইমরান (আ.), ফেরাউন পত্নী আসিয়া। নারীকুলের ওপর আয়েশা (রা.) এর সম্মান এমনই যেমন সব খাদ্যদ্রব্যের ওপর 'সারিদ' (গোশত-রুটির সমন্বয়ে তৈরি খাবার) শ্রেষ্ঠ।" (বোখারি : ৩৭৬৯)।
তিনি আরও এরশাদ করেছেন, 'জান্নাতের শ্রেষ্ঠ নারী মরিয়ম ও খাদিজা (রা.)।' (বোখারি : ৩৮১৫)।
'বিশ্ব নারী সমাজের শ্রেষ্ঠ মানবী হলেন হজরত মরিয়ম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (সা.) এবং ফেরাউন পত্নী আসিয়া (রা.)।' (তিরমিজি : ৩৮৭৮)।
তার মা হান্নাহ ছিলেন প্রাথমিকভাবে নিঃসন্তান। পরে গর্ভসঞ্চার হলে খুশিতে মানত করলেন, 'হে আমার প্রভু! আমার গর্ভে যা রয়েছে তোমার তরে উৎসর্গের মানত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর।' (সূরা আলে ইমরান : ৩৫)।
দয়াময় প্রভু তার আবেদন মঞ্জুর করলেন। তিনি ভেবেছিলেন পুত্র হবে, মসজিদের খেদমত করবে, হলো কন্যা। তাই আল্লাহর দরবারে আফসোস করে বললেন, 'হে আমার প্রভু! আমি একটা কন্যাসন্তান প্রসব করেছি। অথচ আল্লাহ জানেন তার প্রসব করা সম্পর্কে।' আল্লাহ বললেন, 'পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মতো নয়। আমি তার নাম রাখলাম মরিয়ম।' (সূরা আলে ইমরান : ৩৬)।
জন্মের আগেই তিনি পিতাকে হারিয়েছেন। এদিকে দয়াময় প্রভু তার মায়ের আবেদন মঞ্জুর করে রেখেছেন। তাই তাকে লালন-পালনের জন্য অলৌকিকভাবে বহু মানুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত হয়ে তর্কাতর্কি শুরু করল। তারা বর্তমান জর্ডানের একটি নদীতে লটারিস্বরূপ নিজেদের কলম নিক্ষেপ করল। যার কলম ডুববে না, সেই অভিভাবক হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে। এরশাদ হয়েছে, 'হে নবী আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা আপন আপন কলমগুলো পানিতে ফেলল যে, তাদের থেকে কোন ব্যক্তি মরিয়মের দায়িত্ব নেবে?' (সূরা আলে ইমরান : ৪৪)।
'অতঃপর তার প্রভু তাকে উত্তমরূপে গ্রহণ করে নিলেন, তাকে সযত্নে লালন-পালন করলেন এবং তাকে জাকারিয়া (আ.) এর তত্ত্বাবধানে প্রদান করলেন। যখনই তিনি তার কক্ষে প্রবেশ করতেন নতুন জাতের খাদ্যসামগ্রী তার কাছে দেখতে পেয়ে বলতেন, হে মরিয়ম! তুমি এসব কোত্থেকে পাও?' (সূরা আলে ইমরান : ৩৭)। হজরত জাকারিয়া ছিলেন মরিয়মের আপন খালু। যখন প্রাপ্ত বয়সে পেঁৗছলেন, নামাজের হুকুম এলো, 'হে মরিয়ম! তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও, সেজদা করো ও রুকুকারীদের সঙ্গে মিলে রুকু করো।' (সূরা আলে ইমরান : ৪৩)।
তিনি অধিকাংশ সময় নামাজ-রোজায় রত থাকতেন। এমনই একদিন নির্জনে এতেকাফ করছেন, হজরত জিবরাঈল (আ.) একজন মানবরূপে তার কাছে এসে বললেন, 'হে মরিয়ম! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে তার পক্ষ থেকে একটি বাণীর সুসংবাদ দিচ্ছেন যার নাম মরিয়ম পুত্র ঈসা মসিহ, যে হবে দুনিয়া ও আখেরাতে মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্যতম।' (সূরা আলে ইমরান : ৪৫)।
অপরিচিত একজন যুবককে পাশে দেখে তিনি কিছুটা ভীত হলেন। এরশাদ হচ্ছে, 'অতঃপর তিনি তাদের ছেড়ে পর্দা গ্রহণ করলেন। তখন আমি তার কাছে আমার রুহ (জিবরাঈলকে) প্রেরণ করলাম, তিনি তার সামনে সুঠামদেহী মানবাকার ধারণ করলেন। মরিয়ম বললেন, আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় গ্রহণ করছি_ যদি তুমি আল্লাহভীরু হতে! জিবরাঈল বললেন, আমি তোমার রবের প্রেরিত দূত, যেন তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করি। মরিয়ম বললেন, কীভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে, অথচ কোনো মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি কামিনীও নই? উত্তর দিলেন, সেভাবেই হবে যেভাবে তিনি সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তোমার প্রভু বলেছেন, 'এটা আমার পক্ষে একেবারেই সহজ এবং আমি তাকে আমার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন ও রহমত বানাতে চাই। এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে রয়েছে।' (সূরা মরিয়ম : ১৭-২১)।
অতঃপর আল্লাহর আদেশে হজরত জিবরাঈল (আ.) তার জামার হাতায় একটা ফুঁ দিলেন। এতেই গর্ভসঞ্চার হয়ে গেল। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, 'আর সেই নারী যে তার সতীত্ব রক্ষা করেছিল, আমি তার মাঝে আমার পক্ষ থেকে প্রাণ ফুঁকে দিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য নিদর্শন বানালাম।' (সূরা আম্বিয়া : ৯১)।
এতেই সেই চিরকুমারী মরিয়ম গর্ভবতী হলেন। এক পর্যায়ে প্রসব বেদনা শুরু হলো। চতুর্মুখী পেরেশানির কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। আল্লাহপাক তার সেই অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন, 'তারপর তিনি তাকে (ঈসা আ.) কে গর্ভধারণ করলেন এবং তাকে নিয়ে দূরবর্তী স্থানে একাকী হলেন। তখন প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর বৃক্ষমূলে নিয়ে গেল।' তিনি বললেন, 'হায় আমার ভাগ্য! আমি যদি এর আগে মরে যেতাম এবং বিস্মৃত, অবিদিত হতাম!' (সূরা মরিয়ম : ২২)।
তখনই হজরত জিবরাঈল অথবা ঈসা (আ.) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে নিম্নদিক থেকে ডেকে বললেন, 'তুমি চিন্তিত হয়ো না। তোমার প্রভু তোমার নিচে সারি নহর বহমান বানিয়েছেন। আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কা- নাড়া দাও, সেটি তোমার ওপর সুপক্ব খেজুর ফেলবে।' অতএব তুমি আহার করো, পান করো এবং চক্ষু শীতল করো। যদি কোনো মানুষকে দেখতে পাও তবে বলো, আমি দয়াময়ের জন্য রোজা মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই মানবসুলভ কথা বলব না।' (সূরা মরিয়ম : ২৪-২৬)।
এরপর তিনি শিশু ঈসা (আ.) কে কোলে নিয়ে বাড়িতে এলেন। শুরু হলো তিরস্কার। 'তারা বলল, হে মরিয়ম! তুমি কলঙ্কজনক কিছু করে এসেছ। হে হারুনের বোন! তোমার পিতা তো অসৎ মানুষ ছিলেন না, আর তোমার মাও কামিনী ছিলেন না। তখন তিনি তার বাচ্চার প্রতি ইশারা করলেন। তারা বলল, তার সঙ্গে আমরা কীভাবে কথা বলব, যে শিশু অবস্থায় কোলে আছে?' (সূরা মরিয়ম : ২৭-২৯)।
তখনই শিশু ঈসা (আ.) তাদের কথার উত্তর দিয়ে তার মাকে পবিত্র প্রমাণ করেন। এসব অস্বাভাবিক বিষয়াদি ছিল তার বিশেষ মোজেজা। তাকে আকাশে তুলে নেয়ার পাঁচ বছর পর তার মা চিরকুমারী মরিয়ম ৫৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার কবর দামেস্কে অবস্থিত।
লেখক : ইমাম ও খতিব, টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন পুরাতন জামে মসজিদ
জেরুজালেমে অবস্থিত মরিয়মের সমাধি। অধিকাংশ গির্জার মতে, এখানেই মরিয়ম শায়িত হয়েছেন
আল্লাহ রাবক্ষুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ৩১টি আয়াতে মহামানবী হজরত মরিয়ম (আ.) এর নাম উল্লেখ করেছেন। এমনকি তার নামে আলাদা একটি সূরাও নাজিল করেছেন। সূরা মরিয়ম ও আলে ইমরানে তার সম্পর্কে বিশদ বিবরণ এসেছে। তিনি ছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.) এর উত্তরসূরি বায়তুল মুকাদ্দাসের সম্মানিত ইমাম ইমরান বিন ইয়াশেমের কন্যা ও ঈসা (আ.) এর মা। আল্লাহপাক তাকে যুগশ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কোরআনে কারিমে এরশাদ হয়েছে, 'হে মরিয়ম! আল্লাহ তোমাকে বাছাই করে নিয়েছেন, পবিত্র-পরিচ্ছন্ন রেখেছেন এবং বিশ্ব নারী সমাজের ওপর তোমাকে মনোনীত করেছেন।' (সূরা আলে ইমরান : ৪২)।
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, "অনেক পুরুষ লোক মহামানব হয়েছেন, আর নারীদের থেকে মহীয়সী হয়েছেন হজরত মরিয়ম বিনতে ইমরান (আ.), ফেরাউন পত্নী আসিয়া। নারীকুলের ওপর আয়েশা (রা.) এর সম্মান এমনই যেমন সব খাদ্যদ্রব্যের ওপর 'সারিদ' (গোশত-রুটির সমন্বয়ে তৈরি খাবার) শ্রেষ্ঠ।" (বোখারি : ৩৭৬৯)।
তিনি আরও এরশাদ করেছেন, 'জান্নাতের শ্রেষ্ঠ নারী মরিয়ম ও খাদিজা (রা.)।' (বোখারি : ৩৮১৫)।
'বিশ্ব নারী সমাজের শ্রেষ্ঠ মানবী হলেন হজরত মরিয়ম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (সা.) এবং ফেরাউন পত্নী আসিয়া (রা.)।' (তিরমিজি : ৩৮৭৮)।
তার মা হান্নাহ ছিলেন প্রাথমিকভাবে নিঃসন্তান। পরে গর্ভসঞ্চার হলে খুশিতে মানত করলেন, 'হে আমার প্রভু! আমার গর্ভে যা রয়েছে তোমার তরে উৎসর্গের মানত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর।' (সূরা আলে ইমরান : ৩৫)।
দয়াময় প্রভু তার আবেদন মঞ্জুর করলেন। তিনি ভেবেছিলেন পুত্র হবে, মসজিদের খেদমত করবে, হলো কন্যা। তাই আল্লাহর দরবারে আফসোস করে বললেন, 'হে আমার প্রভু! আমি একটা কন্যাসন্তান প্রসব করেছি। অথচ আল্লাহ জানেন তার প্রসব করা সম্পর্কে।' আল্লাহ বললেন, 'পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মতো নয়। আমি তার নাম রাখলাম মরিয়ম।' (সূরা আলে ইমরান : ৩৬)।
জন্মের আগেই তিনি পিতাকে হারিয়েছেন। এদিকে দয়াময় প্রভু তার মায়ের আবেদন মঞ্জুর করে রেখেছেন। তাই তাকে লালন-পালনের জন্য অলৌকিকভাবে বহু মানুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত হয়ে তর্কাতর্কি শুরু করল। তারা বর্তমান জর্ডানের একটি নদীতে লটারিস্বরূপ নিজেদের কলম নিক্ষেপ করল। যার কলম ডুববে না, সেই অভিভাবক হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে। এরশাদ হয়েছে, 'হে নবী আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা আপন আপন কলমগুলো পানিতে ফেলল যে, তাদের থেকে কোন ব্যক্তি মরিয়মের দায়িত্ব নেবে?' (সূরা আলে ইমরান : ৪৪)।
'অতঃপর তার প্রভু তাকে উত্তমরূপে গ্রহণ করে নিলেন, তাকে সযত্নে লালন-পালন করলেন এবং তাকে জাকারিয়া (আ.) এর তত্ত্বাবধানে প্রদান করলেন। যখনই তিনি তার কক্ষে প্রবেশ করতেন নতুন জাতের খাদ্যসামগ্রী তার কাছে দেখতে পেয়ে বলতেন, হে মরিয়ম! তুমি এসব কোত্থেকে পাও?' (সূরা আলে ইমরান : ৩৭)। হজরত জাকারিয়া ছিলেন মরিয়মের আপন খালু। যখন প্রাপ্ত বয়সে পেঁৗছলেন, নামাজের হুকুম এলো, 'হে মরিয়ম! তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও, সেজদা করো ও রুকুকারীদের সঙ্গে মিলে রুকু করো।' (সূরা আলে ইমরান : ৪৩)।
তিনি অধিকাংশ সময় নামাজ-রোজায় রত থাকতেন। এমনই একদিন নির্জনে এতেকাফ করছেন, হজরত জিবরাঈল (আ.) একজন মানবরূপে তার কাছে এসে বললেন, 'হে মরিয়ম! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে তার পক্ষ থেকে একটি বাণীর সুসংবাদ দিচ্ছেন যার নাম মরিয়ম পুত্র ঈসা মসিহ, যে হবে দুনিয়া ও আখেরাতে মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্যতম।' (সূরা আলে ইমরান : ৪৫)।
অপরিচিত একজন যুবককে পাশে দেখে তিনি কিছুটা ভীত হলেন। এরশাদ হচ্ছে, 'অতঃপর তিনি তাদের ছেড়ে পর্দা গ্রহণ করলেন। তখন আমি তার কাছে আমার রুহ (জিবরাঈলকে) প্রেরণ করলাম, তিনি তার সামনে সুঠামদেহী মানবাকার ধারণ করলেন। মরিয়ম বললেন, আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় গ্রহণ করছি_ যদি তুমি আল্লাহভীরু হতে! জিবরাঈল বললেন, আমি তোমার রবের প্রেরিত দূত, যেন তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করি। মরিয়ম বললেন, কীভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে, অথচ কোনো মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি কামিনীও নই? উত্তর দিলেন, সেভাবেই হবে যেভাবে তিনি সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তোমার প্রভু বলেছেন, 'এটা আমার পক্ষে একেবারেই সহজ এবং আমি তাকে আমার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন ও রহমত বানাতে চাই। এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে রয়েছে।' (সূরা মরিয়ম : ১৭-২১)।
অতঃপর আল্লাহর আদেশে হজরত জিবরাঈল (আ.) তার জামার হাতায় একটা ফুঁ দিলেন। এতেই গর্ভসঞ্চার হয়ে গেল। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, 'আর সেই নারী যে তার সতীত্ব রক্ষা করেছিল, আমি তার মাঝে আমার পক্ষ থেকে প্রাণ ফুঁকে দিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য নিদর্শন বানালাম।' (সূরা আম্বিয়া : ৯১)।
এতেই সেই চিরকুমারী মরিয়ম গর্ভবতী হলেন। এক পর্যায়ে প্রসব বেদনা শুরু হলো। চতুর্মুখী পেরেশানির কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। আল্লাহপাক তার সেই অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন, 'তারপর তিনি তাকে (ঈসা আ.) কে গর্ভধারণ করলেন এবং তাকে নিয়ে দূরবর্তী স্থানে একাকী হলেন। তখন প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর বৃক্ষমূলে নিয়ে গেল।' তিনি বললেন, 'হায় আমার ভাগ্য! আমি যদি এর আগে মরে যেতাম এবং বিস্মৃত, অবিদিত হতাম!' (সূরা মরিয়ম : ২২)।
তখনই হজরত জিবরাঈল অথবা ঈসা (আ.) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে নিম্নদিক থেকে ডেকে বললেন, 'তুমি চিন্তিত হয়ো না। তোমার প্রভু তোমার নিচে সারি নহর বহমান বানিয়েছেন। আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কা- নাড়া দাও, সেটি তোমার ওপর সুপক্ব খেজুর ফেলবে।' অতএব তুমি আহার করো, পান করো এবং চক্ষু শীতল করো। যদি কোনো মানুষকে দেখতে পাও তবে বলো, আমি দয়াময়ের জন্য রোজা মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই মানবসুলভ কথা বলব না।' (সূরা মরিয়ম : ২৪-২৬)।
এরপর তিনি শিশু ঈসা (আ.) কে কোলে নিয়ে বাড়িতে এলেন। শুরু হলো তিরস্কার। 'তারা বলল, হে মরিয়ম! তুমি কলঙ্কজনক কিছু করে এসেছ। হে হারুনের বোন! তোমার পিতা তো অসৎ মানুষ ছিলেন না, আর তোমার মাও কামিনী ছিলেন না। তখন তিনি তার বাচ্চার প্রতি ইশারা করলেন। তারা বলল, তার সঙ্গে আমরা কীভাবে কথা বলব, যে শিশু অবস্থায় কোলে আছে?' (সূরা মরিয়ম : ২৭-২৯)।
তখনই শিশু ঈসা (আ.) তাদের কথার উত্তর দিয়ে তার মাকে পবিত্র প্রমাণ করেন। এসব অস্বাভাবিক বিষয়াদি ছিল তার বিশেষ মোজেজা। তাকে আকাশে তুলে নেয়ার পাঁচ বছর পর তার মা চিরকুমারী মরিয়ম ৫৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার কবর দামেস্কে অবস্থিত।
লেখক : ইমাম ও খতিব, টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন পুরাতন জামে মসজিদ
No comments:
Post a Comment