Saturday, June 28, 2014

শুকরের গোশত হারাম কেন ?

শুকরের গোশত হারাম কেন ?


ইসলাম কেন শুকরের গোশ্ত হারাম করেছে, শুকর কি আল্লহর সৃষ্টি নয়? এ প্রশ্নের উত্তরে বলব

১. আল্লাহ তাআলা অকাট্যভাবে শুকরের গোশত হারাম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ বল, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর উপর কোনো হারাম পাই না, যা সে আহার করে। তবে যদি মৃত কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোশ্ত হয়, কারণ, নিশ্চয় তা অপবিত্র।’ (সুরা আল আনআম, আয়াত : ১৪৫)

আর এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত ও সহজিকরণ যে, তিনি আমাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলো হালাল করেছেন, পক্ষান্তরে যা অপবিত্র তা করেছেন হারাম। ইরশাদ হয়েছে, আর তাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলো হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তুগুলো হারাম করেন।’ (সুরা আল আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

এ বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, শুকর একটি নিকৃষ্ট-অপবিত্র প্রাণী। এ নিকৃষ্ট প্রাণীর গোশ্ত খাওয়া মানুষের জন্য ক্ষতিকর। উপরন্তু, শুকর ময়লা আবর্জনায় জীবনযাপন করে। সুস্থ মেজাজের যে কোনো মানুষ এ বিষয়টিকে ঘৃণা করবে নিঃসন্দেহে এবং প্রত্যাখ্যান করবে খাদ্য হিসেবে শুকর গোশ্ত গ্রহণ করতে। কেননা এর দ্বারা মানুষের সুস্থ প্রকৃতি বিকারগ্রস্ত হয়।

২. শুকরের গোশত ভক্ষণে মানুষের শরীর-স্বাস্থ্য কী ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান তা খুব স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে, নিম্নে এ জাতীয় কিছু তথ্য উল্লেখ করা হল-

ক. অন্যান্য পশুর গোশ্তের তুলনায় শুকরের গোশ্তে কোলেষ্টেরল অধিকমাত্রায় থাকে। আর মানুষের শরীরে কোলেষ্টেরল বেড়ে গেলে মানবদেহের শিরাগুলো শক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শুকরের গোশ্তের গঠন-প্রকৃতি খুবই ব্যতিক্রমধর্মী, অন্যান্য খাবারে তেলজাত এসিড থেকে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে কারণে তা সহজেই শুষণযোগ্য অন্যান্য খাবারের তুলনায়। ফলে রক্তে কোলেষ্টেরল বেড়ে যায়।

খ. শুকরের গোশত কোলোন, স্তন,ব্লাড ইত্যাদির ক্যান্সার ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা পালন করে।

গ. শুকরের গোশত ও তার চর্বি শরীরের মেদ বাড়িয়ে দেয় এবং এমন রোগের আমাদানি করে যা সারিযে তোলা দুষ্কর।

ঘ. শুকরের গোশ্ত ভক্ষণ চুলকানি, এলার্জি, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়।

ঙ. শুকরের গোশ্ত ভক্ষণ ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা কৃমি, ফুসফুসের কৃমি ও ফুসফুসের মাইক্রোবিক প্রদাহ থেকে জন্ম নেয়।

চ. শুকরের গোশ্তের মারাত্মক ক্ষতিকর একটি দিক হল- এতে একপ্রকার কৃমি থাকে যা টিনিয়াসলিন নামে খ্যাত, এ কৃমিটি দৈর্ঘে দুই থেকে তিন মিটার। এ কৃমির ডিম্বগুলোর প্রবৃদ্ধির পরবর্তী ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, মানুষ পাগল হয়ে যায়, হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হয় যদি মস্তিষ্কের এলাকায় এগুলোর প্রবৃদ্ধি ঘটে। হৃৎপিণ্ডের এলাকায় এগুলোর প্রবর্ধন হলে ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যায় এবং হার্ট এ্যটাকের ঘটনা ঘটে। শুকরের গোশ্তে অন্যান্য আরও যে, ওর্ম থাকে তার মধ্যে একটি হল, লোমতুল্য শঙ্খাকৃতির ত্রিকানিলা ওর্ম রন্ধক্রিয়াকে যা প্রতিরোধ করে। আর শরীরে এটার বর্ধন পোলিও এবং চর্ম-এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

এ বিষয়ে চিকিৎসকগণ বলেন, টেইপ ওর্ম যা শুকরের গোশ্ত থেকে জন্ম নেয়, মানুষের শরীরের জন্য খুবই মারাত্মক। এ ওর্ম মানুষের সূক্ষ্ণ পরিপাকতন্ত্রে পরিবর্ধিত হয়, এবং কয়েক মাসের মধ্যে তা দৃষ্টিগ্রায্য আকৃতিতে পৌঁছে যায়, এবং পূর্ণবয়ষ্ক ওর্মের আকৃতি ধারণ করে। এ ওর্মের শরীর প্রায় এক হাজার টুকরো দিয়ে গঠিত এবং তা লম্বায় ৪-১০ মিটার। এ ওর্মটি আক্রান্ত মানুষের পাকস্থলীতে একাই বসবাস করে এবং তার ডিমগুলো পায়খানার সঙ্গে বের হয়ে যায়। এই ওর্মটি মানুষের শরীরকে দুর্বল করে তোলে, ভিটামিন বি ১২- এর ঘাটতি সৃষ্টি করে, যার ফলে একপ্রকার রক্তশুন্যতা সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো বরং স্নায়ুবিক সমস্যাও সৃষ্টি করে, যেমন স্নায়ুর প্রদাহ ইত্যাদি। আবার কখনো এর প্রভাব ব্রেইন পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এবং ব্রেইন অস্থিরতার কারণ হয়, অথবা তা ব্রেইনে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে মাথাব্যথা, প্রচণ্ড বেদনা, এমনকী পেরালাইসেস হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

ছ. খুব ভাল করে সিদ্ধ না করা শুকরের গোশ্ত খাওয়ার ফলে চুলাকৃতির কৃমির জন্ম নেয়, যখন এগুলো সূক্ষ্ণ পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে তখন চার-পাঁচদিন পর বহুল পরিমাণ লার্ভ বের হয় যা পরিপাকতন্ত্রের দেয়ালে এঁটে যায়। সেখান থেকে রক্তে ও শরীরের অন্যান্য তন্ত্রে। অতঃপর সেখানে সৃষ্টি হয় বহু টাক্ট। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচণ্ড ধরনের আঙ্গিক ব্যথায় ভোগতে শুরু করে। কখনো কখনো এটা মেনিনজাইটিস প্রদাহ সৃষ্টি করে, মস্তিষ্কের প্রদাহ সৃষ্টি করে, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের প্রদাহ সৃষ্টি করে, কিডনি ও স্নায়ুকেও আক্রান্ত করে, এমনকী কখনো কখনো মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জ. কিছু কিছু রোগ আছে, যেগুলো শুধু মানুষেরই হয়ে থাকে, এ রোগে শুকর ব্যতীত অন্য কোনো প্রাণী মানুষের শরিক নয়। যেমন : রোমাটিজম ও জয়েন্ট পেইন। আল্লাহ তাআলা কত সত্যই না বলেছেন, ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের গোশ্ত এবং যা গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা হয়েছে, সুতরাং যে বাধ্য হয়ে, অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, (ভক্ষণ করে) তাহলে তার কোনো পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)

এগুলো হল- শুকরের গোশ্ত ভক্ষণের কিছু ক্ষতিকারক দিক। শুকরের গোশ্ত কেন হারাম করা হয়েছে? আমার ধারণা এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

সঠিক দ্বীনের পথ পাওয়ার জন্য এটি আপনার প্রথম পদক্ষেপ হবে। অতঃপর ভেবে দেখুন, চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগান, বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই করে দেখুন, সত্যকে আবিষ্কারের জন্য নিজেকে মুক্ত করুন। সত্যকে ধারণ করুন। যা দুনিয়া-আখিরাতে কল্যাণবহ তা যাতে লাভ করতে পারেন সে জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।

আরেকটি কথা না বললেই নয়, আর তা হল, আমরা যদি শুকরের গোশ্ত খাওয়ার ক্ষতিকারক দিক কী কী তা যদি নাও জানতাম। তা হলেও শুকর হারাম হওয়ার ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাসে কোনো চিড় ধরত না।

মেইলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম/নীল
- See more at: http://www.mailbd24.com/report/details/32691#sthash.j5CSlBmZ.dpuf

No comments:

Post a Comment