হযরত উমর ফারুক (রাঃ)
মূল ঊর্দুঃ মজিদ আ. মিয়া
খিলাফত কালঃ ৬৩৪-৬৪৪ খ্রীস্টাব্দ
একথায়তিনি শান্ত হলেন এবং তাদেরকে কুরআনের কিছু অংশপড়ে শুনাতে বললেন। তিনি কুরআনের আয়াত শুনে এতই বিচলিত হলেন যে তাঁর চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। তিনি সোজা মহানবী (সাঃ) এর নিকট গেলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন। যেহেতু তিনি মক্কার একজন বলবান, ভীতিহীন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, সেহেতু তিনি মুসলমানদের জন্য উদ্যমের উৎস প্রতিপন্ন হলেন। হযরতউমরের এই অলৌকিক পরিবর্তনবস্তুত হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর দোয়ার ফলশ্রুতি ছিলো।
হযরত উমর (রাঃ) মহানবী (সাঃ) এর দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন। তার খিলাফতকালে, মুসলমানদেরকে ইরান, ইরাক, সিরিয়া এবং মিশরের বিরূদ্ধে অনেক গুলো যুদ্ধকরতে হয়। যার ফলশ্রুতিতে এসব দেশের ব্যাপক এলাকা মুসলিম শাসনাধীনে চলে আসে। যখন ১৭হিজরীতে মুসলমানদের দ্বারা জেরূযালেম বিজিত হলো, তখন রোমানদের অনুরোধে তিনি সেই শহর পরিদর্শন করেন এবং মুসলমান ও জেরূযালেমের অধিবাসীদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। হযরত উমর (রাঃ) ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য এক চমৎকার প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করেন। এক্ষেত্রে তাঁর প্রধান কিছু কৃতিত্ব হলোঃ
মজলিশে শূরা প্রতিষ্ঠা, যা খলিফাকে পরামর্শ দানকারী একটি মন্ত্রণা পরিষদ।
পুরো ইসলামী রাষ্ট্রকে প্রশাসনের সুবিধার্থে প্রদেশে বিভক্তিকরণ।
অর্থ বিভাগের প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে স্কুল এবং মসজিদ নির্মাণ।
ইসলামী হিজরী বর্ষপঞ্জীর প্রতিষ্ঠা।
হযরত উমর (রাঃ) তাঁর অধীনস্থ লোকদের মঙ্গলচিন্তায় এতটা উদ্বিগ্ন থাকতেন যে, তিনি রাতে ছদ্মবেশে মদীনা শহরেবেরিয়ে পড়তেন, নিজ চোখে এটা দেখার জন্য যে কার কোনসাহায্যের প্রয়োজন কিনা। একদা, রাতে প্রদক্ষিণের সময়, তিনি লক্ষ্য করলেন একমহিলা একটি পাত্রে কিছু পাকাচ্ছিলেন যখন তার বাচ্চারা তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদ ছিল। তিনি মহিলা থেকে জানতে পারলেন যে, বাচ্চারা দু’দিন যাবত ক্ষুধার্ত রয়েছে এবং পাত্র আগুনের উপড় রাখা হয়েছে কেবল তাদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য। তিনি তৎক্ষণাৎ রাষ্ট্রীয় খাঞ্চাজিখানা/ ধনাগারে চলে যান এবং নিজে স্বয়ং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বহন করে নিয়েআসেন। পথিমধ্যে, তাঁর একজন ভৃত্য তাঁর নিকট থেকে সেই বোঝা নিতে চাইলে তিনি তাকে বাধা দিয়ে বলেনঃ “বিচারের দিনে তো তুমি আমার বোঝা বহন করতে পারবে না।”
মহিলাটি, যে পূর্বে হযরত উমর (রাঃ) কে দেখেনি, এতই সন্তুষ্ট হলেন যে, তিনি উচ্চস্বরে এই বলে তাঁর জন্য দোয়া করেন, “আল্লাহতা’লা উমরের পরিবর্তে আপনাকে খলিফা বানান”। এই কথা শুনে হযরত উমর (রাঃ) কাদঁতে শুরু করেন এবং কিছু না বলে সে স্থান ত্যাগ করেন।
৬৪৪ খ্রীস্টাব্দে, হযরত উমর (রাঃ) মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় এক পার্শী ভৃত্য দ্বারা ছুরিকাহত হন। এটা মারাত্নক প্রতিপন্ন হয় এবং এভাবে তিনি ৬৩ বছর বয়সে ২৬শে জুলহাজ্জ্ব, ২৩শে হিজরী সালে পরলোক গমন করেন।
তিনি প্রকৃতই একজন মহান খলিফা ছিলেন, তাঁর খিলাফতকাল নিঃসন্দেহে ইসলামের ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায়।
তিনি সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সাঃ) যাঁদের বেহেস্তের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।
বাংলা অনুবাদঃ মুহাম্মদ সেলিম খান
No comments:
Post a Comment