Thursday, May 29, 2014

হজ্জের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ

হজ্জের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ

হজ্জের সামর্থ এসে গেলে সর্বপ্রথম মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আর তখন থেকেই হজ্জ সংক্রান্ত যাবতীয় মাসয়ালা মাসায়েল শেখা আরম্ভ করতে হবে। হজ্জের প্রতিটি আমল, পবিত্র মক্কা মোকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারার আদব, সফরের আদব, অন্যান্য হাজীদের সাথে উত্তম ব্যবহার শিখে নেয়া একান্ত আবশ্যক। ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজনদের মায়া-মমতা কাটিয়ে আল্লাহ ও তার প্রিয়নবীর (দঃ) প্রতি আকর্ষণ, কা’বা ঘরের আকর্ষণ মনে লালন করবেন।

সরকার যখন হজ্জের কার্যক্রম শুরু করবে তখন আপনাকে হয়তো সরকার নতুবা কোন একটি এজেন্সীর সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। এক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আপনার এ সিদ্ধান্ত বা এজেন্সী নির্বাচন এর উপর পুরো হজ্জের যাবতীয় বিষয় নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে একজন বিজ্ঞ অভিজ্ঞ হাক্কানী আলেমকে বেঝে নিতে পারলে একটি মাক্ববুল হজ্জ অর্জন করা সহজ হবে। কেননা একনজ হাক্কানী আলেম যত দরদ দিয়ে আপনার যাবতীয় ইবাদত তদারকী, থাকা, খাওয়া, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও অন্যান্য ব্যবস্থা করবেন অন্য কারো কাছে তা আশা করা যায় না। বর্তমানে অনেক অজ্ঞলোক ও বহুমতাদর্শী আলেম হজ্জ এজেন্সীর সাথে জড়িত। এক্ষেত্রে একজন হানাফী মাযহাবের তরীক্বতপন্থী আলেম বেছে নেয়াই আপনারে হজ্জের পূর্ণ স্বাদ আস্বাদনের সঠিক উপায় হবে। হজ্জে গমনের সময় ঘনিয়ে আসলে তখন মানুষের সাথে লেনদেন মিটিয়ে ফেলা উচিত। আপনি চাকুরীজীবি হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে প্রয়োজনীয় ছুটি নিবেন। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্ড়শী, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের থেকে মাফ চেয়ে নিবেন। আপনার অনুপস্থিতিতে পরিবার যেন কোন রকম সংকটে না পড়ে সে দিকে সাধ্যানুযায়ী ব্যবস্থা করে যাবেন।

প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র হজ্জের সফরে নিম্নবর্ণিত জিনিসগুলো আপনার সাথে নিবেন-
১। ইহরামের পোষাক ২ সেট (৩ গজ দৈর্ঘ্যের চার পিছ) সাথে ইহরাম বাঁধার কোমর বেল্ট (চামড়ার অথবা কাপড়ের)
২।চিকন ফিতাওয়ালা স্যান্ডেল ২ জোড়া (ইহরাম অবস্থায় পায়ে দেয়ার জন্য)। চামড়ার স্যান্ডেল বা পাম্প সু ১ জোড়া।
৩।ট্রলি বা বড় ব্যাগ (চাকা ওয়ালা) ১টি
৪।ট্যুরিষ্ট ব্যাগ ১টি। প্রয়োজনীয় কাপ., নামাযের মোছল্লা, ঔষধপত্র, বইপুস্তক সাথে রাখার জন্য।
৫।লুঙ্গী, পাজামা, পাঞ্জাবী, গেঞ্জি, কমপক্ষে ২টি করে।
৬।টুপি, রুমাল, মোজা, গামছা/তোয়ালে, আন্ডারওয়্যার প্রয়োজনমত।
৭।মহিলাদের থ্রিপিছ (ওড়না বড় হবে) অথবা শাড়ী, পেডিকোট, বোরকা পড়ে অভ্যন্ত থাকলে বোরকা নিবেন।
৮।বিছানার চাদর ১টি, পাম্পিং বালিশ ১টি, আরাফাতের ব্যাগ ১টি।
৯।আয়না, চিরুনি, টুথ ব্রাশ, টুথপেষ্ট / মেছওয়াক, ছোট কাচি, সেফটি রেজার ১টি করে ও প্রয়োজনমত ব্লেড।
১০।তৈল/ভেসলিন, ফেসক্রীম, লিপজেল প্রয়োজনমত।
১১।প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র। যারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিক, উচ্চরক্ত চাপ, শ্বাসকষ্টের ঔষধ সেবন করেন তারা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনসহ কমপক্ষে ৪৫ দিনের ঔষধ সাথে নিয়ে যাবেন। আর প্রত্যেকেই সতর্কতামূলক সর্দি, কাশি, জ্বর ব্যাথআ গ্যাসের ঔষধ ও স্যালাইন নিয়ে যেতে পারেন।
১২।মেলামাইনের থালা, গ্লাস, বাটি, চামচ ও ফল কাটার ছুরি ১টি করে।
১৩।টয়লেট পেপার, টিস্যু পেপার, সাবান, নীল।
১৪।সুই, সুতা, কাগজ, কলম, টেপ, মার্কার পেন।
১৫।মহিলাদের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র।
১৬।বিশেষ পছন্দের শুকনো খাবার, আচার।
১৭।কাপড় টানানোর রশি। তদুপরি ভুলে কোন কিছু না নিলে চিন্তার কারণ নেই কেননা মক্কা-মদীনায় প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাওয়া যায়। মাক্ববুল হজ্জ লাভের উপায় হজ্জ মু’মিন এর দীর্ঘ জীবনের প্রত্যাশিত ও প্রতীক্ষিত একটি মহান ইবাদত। মন চাইলেই হজ্জ করা যাো না, অনেকের জীবনেই এই সৌভাগ্য হয়না। যাদের হজ্জ আদায়ের সুযোগ হয় তাদের ক্ষেত্রে ও মহান এ ইবাদতটি একবারই ফরজ। বহু টাকা পয়সা ব্যয় ও অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে এই হজ্জ আদায় করতে হয়, এটি যদি মাবরুর অর্থাৎ মাক্ববুল না হয় তাহলে এত কিছু ত্যাগের সার্থকতা কোথায়?

একজন হাজী তার হজ্জটিকে মাবরুর করার বিষয়টি সাধনা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি মূহূর্তে সজাগ থাকতে হবে শয়তানের প্ররোচনায় বা নফছের প্রতারণায় এমন কাজ যেন করে না বসে যাতে তার হজ্জ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একটি মাক্ববুল হজ্জ লাভের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন লৌকিকতামুক্ত কেবলমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার বিশুদ্ধ নিয়্যত। অতঃপর হজ্জের সফরে যাবতীয় অন্যায়, অশ্লীলতা, পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে হজ্জ এর কাজগুলোর বিশুদ্ধরূপে আদায় করা। ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, কাম-ক্রোধ, আত্মপ্রচারণা, অহংকার, আত্মম্ভরিতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি হজ্জের নিয়্যত করে সে যেন স্ত্রী মিলন, তৎসম্পর্কিত আলোচনা, কোন ধরনের পাপ ও ঝগড়ার লিপ্ত না হয়। (সুরা বাকারা-১৯৭) যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ, গোনাহ থেকে হাজী শুধু হজ্জের সফরেই মুক্ত থাকবেন না বরং যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এ সাধনা অব্যাহত রাখবেন। এ ধরনের গুনাহমুক্ত হাজীর হজ্জই হজ্জে মাবরুরন বা মাক্ববুল হজ্জ যার বিনিময়ে রয়েছে আল্লাহর জান্নাত। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী (রহঃ) বলেন- যে হজ্জের পর দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি জন্মে এবং আখেরাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তাই হজ্জে মাবরুর বা মাক্ববুল হজ্জ। হজ্জে গেলেন বটে লোভ-ক্রোধ সংবরণ করতে পারলেন না, মিথ্যা, পরনিন্দা, পাপ ছাড়তে পারলেন না বা হজ্জের সফরে অনেক কষ্টে এসব থেকে মুক্ত রইলেন ঠিকই কিন্তু ফিরে এসেই সুদ, ঘুষ, অন্যায়-অনাচার, বেপর্দা, বেলেল্লাপনা পুনরায় শুরু করলেন এমন ব্যক্তির হজ্জ কবুল হযনি মনে করতে হবে। হজ্জের ইহরাম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় কবীরা গোনাহ থেকে মুক্ত থাকার সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হবে আর সর্বদা মহান আল্লাহর দরবারে বিনায়ানবত চিত্তে সাহায্য চাইতে হবে তাহলেই একটি মাক্ববুল হজ্জ নছীব হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে মাক্ববুল হজ্জ মঞ্জুর করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment