Wednesday, May 21, 2014

সমাজ ও দেশ উন্নয়নে ইসলামী শিক্ষার অপরিহার্যতা

 সমাজ ও দেশ উন্নয়নে ইসলামী শিক্ষার অপরিহার্যতা

ড. মোঃ নূরুল্লাহ
ইসলামী শিক্ষার পরিচয় তুলে ধরার পূর্বে শিক্ষার পরিচয় তুলে ধরা প্রয়োজন। শিক্ষা শব্দটির উৎপত্তি মূলত সংস্কৃত ‘শাস’ ধাতু থেকে । যার অর্থ, শাসন করা, নিয়ন্ত্রণ করা, নির্দেশ দেয়া, পরামর্শ দেয়া ইত্যাদি। আধুনিক বাংলা অভিধানে শিক্ষার অর্থ করা হয়েছে : অভ্যাস, চর্চা , ইয়াদ প্রভৃতি দ্বারা আয়ত্তকরণ; বিদ্যাচর্চা করা, জ্ঞানার্জন, বিদ্যার্জন, শেখা, অধ্যয়ন, শিক্খা।
শিক্ষা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ঊফঁপধঃরড়হ  আর আরবীতে বলেتربية  ,تعليم, تأديب, معرفة  ইত্যাদি । ইংরেজি শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ঊফঁপধৎব থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ হলো, লাভ করা, প্রতিকার করা, পরিচর্যা করা। অবশ্য ভিন্ন একটি মতে ঊফঁপধঃরড়হ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ঊফঁপবৎব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। যার অর্থ হলো, নিষ্কাশন করা বা কোন বস্তুকে ভিতর থেকে বাইরে নিয়ে আসা।   ইংরেজি ভাষায় ঊফঁপধঃরড়হ শব্দের অর্থ হলো, অ ঢ়ৎড়পবংং ড়ভ ঃবধপযরহম, ঃৎধরহরহম ধহফ ষবধৎহরহম.  
শাব্দিকভাবে যে অর্থসমূহ ইতঃপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে তার অন্তর্নিহিত অর্থ হলো -
জাগিয়ে তোলা, উত্থিত করা, উজ্জীবিত করা, উন্নত করা, উঁচু করা, অগ্রসর করা, লালন-পালন করা,
শিক্ষাদান করা, অন্তর্নিহিত শক্তি বিকশিত করা, সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করা, পথ-প্রদর্শন করা, পথ নির্দেশনা দান করা, সঠিক পথের সন্ধান দেয়া, উন্নত নৈতিক আচরণ শিক্ষা দেয়া, সন্ধান দেয়া, সংবাদ দেয়া, তথ্য প্রদান করা, ভদ্র, নম্্র, বিনয়ী ও অমায়িক আচরণ শেখানো, উদ্ভাবন করা, মানসিক, নৈতিক ও শারীরিক ধাতু পরিগঠন করা, প্রেরণা দেয়া, উৎসাহ প্রদান করা ইত্যাদি। 
পারিভাষিক অর্থে শিক্ষাকে বিভিন্ন জন  বিভিন্ন অর্থে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন, জন মিল্টন বলেন - ঊফঁপধঃরড়হ রং যধৎসড়হরড়ঁং ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ নড়ফু সরহফ ধহফ ংড়ঁষ. “শরীর, মন ও আত্মার সমন্বিত বিকাশ সাধনের নামই শিক্ষা।”
কোন কোন গবেষক শিক্ষার পরিচয় তুলে ধরে বলেন,
”إن التربية هي  إعداد المرء ليحيا حياة كاملة, ويعيش سعيدا محبا لوطنه, قويا في جسمه, كاملا في خلقه, منظما في تفكيره, رقيقا في شعوره, ماهرا في علمه, متعاونا مع غيره, يحسن التعبير بقلبه و لسانه, ويجيد العمل بيده.“
“শিক্ষা বলতে এমন বিষয়কে বুঝায় যা একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন গঠনে সহায়তা করে, সে হয় সুখী, দেশপ্রেমিক, শারীরিকভাবে শক্তিশালী, পরিপূর্ণ চরিত্রের অধিকারী, সুশৃংখল চিন্তাশীল, সূক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন, কাজে দক্ষ, অন্যের সহযোগী, মত প্রকাশে (মনে ও মুখে) সক্ষম এবং কাজে দক্ষ।”  এসব বক্তব্যের মূল কথা হলো :
মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে বিরাজমান দ’ুটি সত্তা রয়েছে যার একটি হলো নৈতিক সত্তা আর অন্যটি হলো পাশবিক সত্তা। নৈতিক সত্তার বিকাশ আর পাশবিক সত্তার দমনে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনার নাম শিক্ষা। এর মধ্য দিয়ে একজন মানুষকে সত্যিকারের মানুষে পরিণত করা সম্ভব। এরই মাধ্যমে একজন মানুষকে মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব।
এসব সংজ্ঞা কোন বিশেষ দর্শন বা ধর্ম শিক্ষার প্রতি বিশেষ কোন নির্দেশ করে না। এক্ষেত্রে শিক্ষাবিদগণ উদারতা দেখিয়েছেন। বিষয়টি আপেক্ষিক হওয়ায় তা অবস্থা ও বাস্তবতার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, যেসব বিষয় শেখার মাধ্যমে মানুষের নৈতিক উন্নয়ন হয় না, তার দক্ষতার বিকাশ হয় না, তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয় না, তাকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার মত যোগ্য করে না তাকে শিক্ষা বলা যাবে না।
 ইসলামী শিক্ষার পরিচয়
ইসলামী শিক্ষার সংজ্ঞায়নে ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন বক্তব্য পেশ করেছেন।  যেমন,

শায়খ আবদুর রহমান আননাহলাভী বলেন,
“ইসলামী শিক্ষা হলো মানুষের সামাজিক ও আত্মিক এমন বিন্যাসের নাম যা তার ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আদর্শ প্রতিপালনে ধাবিত করে।” 
 ড. সেকেন্দার আলী ইব্রাহিমী বলেন, “ওহভধপঃ বফঁপধঃরড়হ রং ধ ঢ়যুংরপধষ, সবহঃধষ, ধহফ সড়ৎধষ, ঃৎধরহরহম যিরপয ঢ়ৎড়ফঁপবং রহ ঃযব ংড়পরবঃু যরমযষু পঁষঃঁৎবফ সধহ ধহফ ডড়সধহ ঃড় ফরংপযধৎমব ঃযবরৎ ফঁঃরবং ধহফ ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃরবং রহ ধষষ ঃযব ংঢ়যবৎবং ড়ভ ংধপৎরভরপব ঃযবরৎ ষরাবং ভড়ৎ পবপঁৎরঃরহম ঃযব ঢ়ষবধংঁৎব ড়ভ যরস.”
 আত তারবিয়্যাহ ওয়া ইলমুন নাফসি গ্রন্থের প্রণেতার মতে,
“মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তার চিন্তার উন্নয়ন এবং ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে চরিত্র গঠন করার নাম ইসলামী শিক্ষা।”
ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষা জাতির মেরুদ-। শিক্ষা মানুষের পাশবিক সত্তার দমন  আর নৈতিক সত্তার উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। শিক্ষা না থাকলে মানুষ কখনও কখনও পশুত্ব চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট রূপ ধারণ করে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
 لهم قلوب لا يفقهون بها  و لهم أعين لا يبصرون بها ولهم أذان لا يسمعون بها أولئك كالأنعام بل هم أضل , أولئك هم الغافلون. 
“তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তদ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে তদ্বারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা শোনে না; তারা পশুর ন্যায়, বরং তারা অধিক বিভ্রান্ত। তারাই গাফিল।” 
অতএব মানুষকে পশুর চরিত্র থেকে উদ্ধার করে মানুষ হিসেবে গঠন করতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সাধারণ শিক্ষায় পার্থিব জগতকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষকে মানুষ তৈরীর কাজের আঞ্জাম দিয়ে থাকে। আর ইসলামী শিক্ষাও মানুষকে সত্যিকারের মানুষ তৈরীর কাজই করে তবে সে শিক্ষা বৈষয়িক দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষকে আখিরাতমুখী করে। অতএব বিভিন্ন বিবেচনায় ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে কতিপয় দিক তুলে ধরা  হলো।
ইসলামী শিক্ষা আল্লাহভীরু মানুষ তৈরী করে : ইসলামী শিক্ষা মানুষের মাঝে আল্লাহভীতি জাগ্রত করে। মানুষের সকল কাজের মধ্যে আল্লাহকে স্মরণ করানো ইসলামী শিক্ষার মূল স্পিরিড। শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে মানুষ জ্ঞানের যে শাখায়ই বিচরণ করুক না কেন ইসলামী শিক্ষা তাকে আল্লাহমুখী হতে তাকিদ দেয়। এজন্যে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সর্বপ্রথম নাযিলকৃত অহীতে আল্লাহ তা’আলা আল্লাহর নামে পড়তে নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন, اقرأ باسم ربك الذي خلق. “পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।”  যার অর্থ এই হতে পারে যে, জ্ঞান অর্জনের জন্য মানুষ যেখানেই বিচরণ করুক না কেন আল্লাহকে মনে রাখতেই হবে। 
ইসলামী শিক্ষা তাকওয়া বা আল্লাহভীতি জাগ্রত করায় মানুষ মুত্তাকী হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধিবিধান মেনে চলা তার জন্য সহজ হয়। আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হতে সহায়তা করে। আর আল্লাহর নিকট একমাত্র মুত্তাকী ব্যক্তিই মর্যাদাসম্পন্ন। ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমেই কেবল এই মহামর্যাদা সম্পন্ন মানুষ হওয়া সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,   إن أكرمكم عند الله أتقاكم.  “তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।” 
জ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণের তাকিদ : ইসলামী শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানের সকল স্তরে বিচরণ করতে তাকিদ দেয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, যুদ্ধ, শান্তি, দুনিয়া, আখিরাত ইত্যাদির এমন একটি দিক ও বিভাগ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ব্যাপারে ইসলামী শিক্ষা সঠিক এবং বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী সমাধান পেশ করে নাই। তাই ইসলামী শিক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামী শিক্ষা কিভাবে জ্ঞানের সকল বিভাগে কল্যাণকর পথ নির্দেশ করে তা পরবর্তী পরিচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা শেষে প্রমাণ করার চেষ্টা করব।
সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ও চরিত্রবান মানুষ তৈরী করে : ইসলামী শিক্ষা মানুষের মাঝে সুস্থ বিবেক জাগ্রত করে। তাকে চরিত্রবান ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে তৈরী করে। মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর আদর্শ হযরত মুহাম্মদ (সা) এর চারিত্রিক মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে বলেন, وإنك لعلى خلق عظيم. “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।” 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলেন, بعثت لأتمم مكارم الأخلاق  “আমি সচ্চরিত্রের পূর্ণতাদানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।
মানুষকে পরিশুদ্ধ করে : ইসলামী শিক্ষা মানুষের মনে শুদ্ধ চিন্তার বিকাশ ঘটায়। তাকে পরিশুদ্ধ করে। মানুষের মনকে প্রশান্ত মনে পরিণত করে। আর যিনি নিজেকে এ শিক্ষার মাধ্যমে মনকে পরিশুদ্ধ করতে পারে মহান আল্লাহর কাছে তিনিই সফল ব্যক্তি। মহান আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا . وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا “সেই সফলকাম হবে যে নিজেকে পবিত্র করবে আর সে-ই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।”  আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِنْكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ
“আমি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট তিলাওয়াত করে, তোমাদিগকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয় আর তোমরা যা জানতে না তা শিক্ষা দেয়।” 
ইসলামী শিক্ষা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করতে উৎসাহিত করে : ইসলামী শিক্ষা দক্ষ মানবসম্পদ হতে তাকিদ দেয়। তাকে কর্মমুখী করে গড়ে তোলে। এ কারণে দেখা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা ঈমান গ্রহণের পরই কাজ করতে বলেছেন। কাজ না করলে আল্লাহ তাকে ভাল প্রতিদান দিবেন না । এ কথা আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন। সূরা আল বুরূজে আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِير.
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। ইহাই মহা সাফল্য।”
মানুষকে অপরাধ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে : ইসলামী শিক্ষা মানুষকে অপরাধ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। তাকে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ করে গড়ে তোলে। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَر
“সালাত অবশ্যই বিরত রাখে মন্দ ও অশ্লীল কর্ম হতে।” 
অন্য এক আয়াতে অন্যায় প্রতিরোধে মুসলমানের দায়বদ্ধতা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُون
“তোমাদের মধ্যে এমন একদল হোক যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎ কাজের আদেশ দিবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে। এরাই সফলকাম।”
সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ মানুষ তৈরী করে : ইসলামী শিক্ষা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ একদল মানুষ তৈরীর তাকিদ দেয়। মহান আল্লাহর বাণী, وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
“আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক।”
নিয়মানুবর্তী হতে তাকিদ দেয় : ইসলামী শিক্ষা মানুষকে নিয়মানুবর্তী হিসেবে তৈরী করে। তাকে নেতৃত্বের আনুগত্য করতে বাধ্য করে। সালাত, সাওম, হাজ্জ ইত্যাদি ইবাদতসমূহ যার জীবন্ত সাক্ষী। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময়মত আদায় করা বাধ্যতামূলক। মহান আল্লাহ বলেন,
“নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।”  
এমনিভাবে সিয়াম পালন করার জন্যও সময়ানুবর্তী হতে হয়। নির্ধারিত সময়ের পূর্বে সাহরী খেতে হয় আবার নির্ধারিত সময়ে ইফতার করতে হয়। আল্লাহ বলেন,
“আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালোরেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রকাশিত না হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত তোমরা সিয়াম পূর্ণ কর ।”   
এ ধরনের অনেক ইবাদত সময়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মুসলমানগণ ইবাদত পালনের মাধ্যমে সময়ানুবর্তী হয়ে ওঠে।
মানুষকে পরিশ্রমী ও কর্মমুখী হতে শেখায় :  ইসলামী শিক্ষা মানুষকে পরিশ্রমী এবং কর্মমুখী করে তুলতে প্রেরণা যোগায়। প্রচ- শীতে যেমন তাকে ইবাদত করতে হয় আবার প্রচ- গরমেও সে ইবাদত করে। মুসলিমের জন্য হালাল পন্থায় রোজগার করা বাধ্যতামূলক। এই হালাল রোজগারের জন্য তাকে হতে হয় ব্যাপক পরিশ্রমী। অলসতাকে ইসলাম মোটেই প্রশ্রয় দেয় না। রাসূল (সা) বলেছেন,
“পাঁচটি বিষয় আগমনের পূর্বে অন্য পাঁচটি বিষয় কাজে লাগাও। বৃদ্ধ হবার পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থ হবার পূর্বে সুস্থতাকে, দরিদ্রতার পূর্বে স্বচ্ছলতাকে, ব্যস্ত হয়ে যাবার পূর্বে অবসর সময়কে এবং মৃত্যুবরণ করার পূর্বে জীবনকে।”
এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, ইসলামী শিক্ষা মানুষকে তার প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষ তৈরী করে : ইসলামী শিক্ষা মানুষকে অন্যায় অবিচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে তাকিদ প্রদান করে। মহান আল্লাহ বলেন,
“তোমাদের কী হলো যে, তোমারা সংগ্রাম করবে না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নরনারী এবং শিশুগণের জন্য, যারা বলে হে আমাদের প্রতিপালক! এই জনপদ, যার অধিবাসী যালিম, তা হতে আমাদিগকে অন্যত্র নিয়ে যাও; তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের সহায় কর ।”
সুস্থ ও সুন্দর জীবন গঠনে তাকিদ দেয় : ইসলামী শিক্ষা সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় যে, সকল নবীরা ছিল সুস্থ ও সুঠাম দেহের অধিকারী। তাদের স্বাস্থ্য ও ইলমী যোগ্যতার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন,
“নবী বলল, আল্লাহ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন।” 
ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ অর্জনের নির্দেশ করে : ইসলামী শিক্ষা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের কথা বলে। পূর্ণাঙ্গ জীবনের কথা বলে ইসলামী শিক্ষা।
মহান আল্লাহ বলেন, رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদের আগুনের হাত হতে রক্ষা কর।”
ইসলামী শিক্ষা মানুষকে সত্যিকারের মানুষে পারণত করে। শিক্ষার যেসব উদ্দেশ্যের কথা বিশ্বের সকল শিক্ষাবিদগণ বলেন তার সম্পূর্ণ দিক পাওয়া যায় ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে । অতএব, ইসলামী শিক্ষা মানব জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহারে বলা যায় যে, শিক্ষা মানুষকে উন্নত করে। তাকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করে। তবে পাশবিকতার দমনে শিক্ষার  যে ভূমিকা থাকা দরকার ছিল বাস্তবে  তা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। এই শূণ্যতা পুরণে ইসলামী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য তা আরো বেশী গুরুত্বের দাবী রাখে। তাহলে আমাদের সমাজ ও দেশ হতে পারে আরো অগ্রসর ও উন্নত। নৈতিকতার উন্নয়ন ছাড়া কখনওই আমাদের সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব হবে না। ইসলামী শিক্ষাই হলো  নৈতক শিক্ষার কেন্দ্রস্থল।

Source: http://www.nibrasbd.com/index.php?option=com_content&view=article&id=90&catid=35&Itemid=94

No comments:

Post a Comment