Thursday, May 29, 2014

‘হুদায়বিয়া’

‘হুদায়বিয়া’

হুদাইবিয়াতে হযরত আবু বকর সিদ্দিক ও হযরত মুগীরা রদিয়াল্লহু আ’নহুমা এর আচরণ ও সাধারণ সাহাবীদের কর্মধারা

হিজরী ৬ষ্ঠ সনে যিলকদ মাসে হুদাইবিয়ার প্রসিদ্ধ যুদ্ধ সংঘটিত হয় যখন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম উমরা পালনের উদ্দেশ্যে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের এক বিরাট জামাত লইয়া রওয়ানা হইয়াছিলেন। মক্কার কাফেরদের নিকট যখন এই সংবাদ পৌঁছিল তখন তাহারা নিজেদের মধ্যে পরমর্শ করিয়া এই সিদ্ধান্ত করিল যে, মুসলমানদের মক্কার প্রবেশে বাধা দিতে হইবে। এই জন্য তাহারা বিরাট আকারে প্রস্তুতি গ্রহণ করিল এবং মক্কার বাহিরের লোকদিগকেও তাহাদের সহিত শরীক হওয়ার জন্য দাওয়াত দিল এবং বিরাট দল লইয়া মুকাবেলার জন্য প্রস্তুত হইল। যুল হুলাইফা নামক স্থান হইতে এক ব্যক্তিকে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম খবর লওয়র জন্য পাঠাইলেন যিনি মক্কা হইতে বিস্তারিত অবস্থা জানিয়া উসফান নামক স্থানে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সহিত সাক্ষাত করিলেন। তিনি বলিলেন যে, মক্কাবাসীরা বিরাট আকারে মুকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়াছে এবং তাহাদের সাহায্যের জন্য বাহির হইতেও বহু লোক সংগ্রহ করিয়া রাখিয়াছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের সহিত পরমর্শ করিলেন যে, এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত। এক পন্থা হইতে পারে, যে সমস্ত লোক বাহির হইতে সাহায্য করার জন্য গিয়াছে তাহাদের ঘরবাড়ির উপর হামলা করা, যখন তাহারা এই সংবাদ পাইবে মক্কা হইতে ফিরিয়া আসিবে। অন্যপন্থা হইল সোজা সামনের দিকে চলা। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদিয়াল্লহু আ’নহু বলিলেন, ইয়া রসুলুল্লহ! এই মুহুর্তে আপনি বাইতুল্লহর উদ্দেশ্যে আসিয়াছেন যুদ্ধ করার উদ্দেশ্য তো ছিলই না। তাই সামনের দিকে অগ্রসর হউন। তাহারা যদি আমাদিগকে বাধা দেয় তবে মুকাবিলা করিব, নতুবা নহে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই পরমর্শ গ্রহণ করিলেন এবং সামনের দিকে অগ্রসর হইলেন।
হুদাইবিয়া নামক জায়গায় পৌঁছিলে বুদাইল ইবনে ওরাকা খুযায়ী একদল লোকসহ আসিল এবং রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট জানাইল যে, কাফেররা কিছুতেই রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে মক্কায় প্রবেশ করিতে দিবে না। তাহারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইয়া আছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন যে, আমরা যুদ্ধ করিতে আসি নাই। আমাদের উদ্দেশ্য কেবল উমরা করা। তাছাড়া দৈনন্দিন যুদ্ধ-বিগ্রহ কুরাইশদের বহু ক্ষতিগ্রস্থ করিয়াছে, সম্পূর্ণ ধ্বংস করিয়া দিয়াছে। তাহারা সম্মত হইলে আমি তাহাদের সহিত সন্ধি করিতে প্রস্তুত আছি। আমাদের ও তাহাদের মধ্যে এই বিষয়ে চুক্তি হইয়া যাক যে, তাহারা আমাদের পিছনে পড়িবে না আমিও তাহাদের পিছনে পড়িব না এবং আমাদের অন্যের সহিত বুঝাপড়া করিবার সু্যোগ দিক। আর যদি তাহারা কিছুতেই রাজী না হয়, তবে ঐ যাতের কসম যাহার হাতে আমার প্রাণ, আমি ততক্ষন পর্যন্ত তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিব যতক্ষন পর্যন্ত ইসলাম বিজয়ী না হইবে অথবা আমার গর্দান বিছিন্ন না হইবে। বুদাইল বলিল আচ্ছা আমি আপনার এই পয়গাম তাহাদের নিকট পৌঁছাইয়া দিতেছি। সে ফিরিয়া গেল এবং যাইয়া পয়গাম পৌঁছাইল। কিন্তু কাফেররা রাজী হইল না। এমনিভাবে উভয় পক্ষ হইতে আসা যাওয়া চলিতে থাকিল। তন্মধ্যে একবার ওরওয়া ইবনে মাসঊ’দ সাকাফী কাফেরদের পক্ষ হইতে আসিলেন। তিনি তখনও মুসলমান হইয়াছিলেন না, পরে হইয়াছেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাহার সহিতও একই আলোচনা করিলেন যাহা বুদাইলের সহিত করিয়াছিলেন। ওরওয়া বলিলেন, মুহা’ম্মাদ, (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি যদি আরবদিগকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করিয়া দিতে চান তবে ইহা সম্ভব নহে। আপনি কি কখনও শুনিয়াছেন যে, আপনার পূর্বে এমন কোন ব্যক্তি অতীত হইয়াছে যে কিনা আরবদিগকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করিয়া দিয়াছে? আর যদি বিপরীত অবস্থা হয়, অর্থাৎ তাহারা যদি আপনার উপর বিজয়ী হয় তবে মনে রাখুন, আমি আপনার সহিত ভদ্র শ্রেণীর লোকজন দেখিতেছি না। এদিক সেদিকের নিম্নশ্রেণীর লোকজন আপনার সহিত আছে। বিপদের সময় সকলেই পালাইয়া যাইবে। হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু পাশে দাঁড়ানো ছিলেন। তিনি এই বাক্য শুনিয়া ক্রোধান্বিত হইলেন এবং বলিলেন, তুই গিয়া তোর মাবুদ লাতের লজ্জাস্থান চাট। আমরা কি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হইতে পালাইয়া যাইব? এবং তাঁহাকে একা ছাড়িয়া দিব? ওরওয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এই ব্যক্তি কে? রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ব্ললিনে, আবু বকর। তিনি আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু কে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, তোমার অতীত একটি অনুগ্রহ আমার উপর রহিয়াছে যাহার প্রতিদান আমি তোমাকে দিতে পারি নাই। যদি ইহা না হইত তবে তোমার এই গালির জবাব দিতাম। এই বলিয়া ওরওয়া পুনরায় রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সহিত কথাবার্তায় মশগুল হইয়া গেলেন এবং আরবদের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কথাবার্তার সময় রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাড়ি মুবারকের দিকে হাত বাড়াইতেন। কেননা খোশামোদ করার সময় দাড়িতে হাত বুলাইয়া কথা বলা হইয়া থাকে। কিন্তু সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম ইহা কিভাবে সহ্য করিতে পারেন! ওরওয়ার ভাতিজা মুগীরা ইবনে শু’বা রদিয়াল্লহু আ’নহু মাথায় লৌহ শিরস্ত্রাণ করিয়া অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় পাশে দন্ডায়মান ছিলেন। তিনি তরবারীর বাট দ্বারা ওরওয়ার হাতে আঘাত করিয়া বুলিলেন, হাত দূরে রাখ। ওরওয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এই লোকটি কে? রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, মুগীরাওরওয়া বলিলেন, হে গাদ্দার! তোর গাদ্দারীর ফল আমি এখন পর্যন্ত ভুগিতেছি আর তোর এই ব্যবহার? (হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা রদিয়াল্লহু আ’নহু ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কয়েকজন কাফেরকে হত্যা করিয়া ছিলেন। উহার রক্তপণ ওরওয়া আদায় করিয়া ছিলেন। তিনি ঐ দিকে ইঙ্গিত করিলেন।) মোটকথা দীর্ঘ সময় রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সহিত কথাবার্তা বলিতে থাকিলেন এবং সকলের দৃষ্টির অগোচরে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের অবস্থাও পর্যবেক্ষন করিতে থাকিলেন।
অতঃপর ফিরিয়া গিয়া কাফেরদের নিকট বলিলেন, হে কুরইশ! আমি বড় বড় রাজা বাদশার দরবারে গিয়াছি। কিসরা, কাইসার ও নাজ্জাশীর দরবারেও গিয়াছি। তাহাদের রীতিনীতি দেখিয়াছি। আল্লহর কসম! আমি কোন বাদশাকে দেখি নাই যে, তাহার লোকেরা তাহার এইরূপ সম্মান করে, যেইরূপ সম্মান মুহা’ম্মাদ (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর লোকেরা তাঁহার সম্মান করে। যদি তিনি থুথু ফেলেন যাহার হাতে পড়িয়া যায়, সে উহা শরীরে ও চেহারায় মাখিয়া লয়। যে কথা মুহা’ম্মাদ (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখ হইতে বাহির হয় উহা পালন করার জন্য সকলেই ঝাঁপাইয়া পড়ে। তাঁহার অযুর পানি পরস্পর কাড়াকাড়ি করিয়া বন্টন করিয়া লয়, মাটিতে পড়িতে দেয় না। যদি কেহ পানির ফোঁটা না পায় তবে অন্যের ভিজা হাতে হাত মলিয়া নিজের মুখে মাখিয়া লয়। তাঁহার সামনে অত্যন্ত নিচু আওয়াজে কথা বলে, উচ্চ আওয়াজে কথা বলে না। আদবের কারণে তাঁহার দিকে চক্ষু উঠাইয়া দেখে না। যদি তাঁহার কোন দাঁড়ি বা চুল ঝরিয়া পড়ে তবে বরকতের জন্য উহা উঠাইয়া লয় এবং সম্মান করে। মোটকথা আমি কোন দলকেই আপন মনিবের সহিত এত মুহাব্বাত করিতে দেখি নাই, যত মুহাব্বাত মুহা’ম্মাদ (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর লোকজন তাঁহার করিয়া থাকে।
এই অবস্থা চলাকালে মুহা’ম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু কে নিজের পক্ষ হইতে দূত হিসাবে মক্কার সরদারদের নিকট পাঠাইলেন। হযরত উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মক্কায় তাঁহার যথেষ্ট সম্মান ছিল এবং তাঁহার ব্যাপারে তেমন আশংকা ছিল না। এই কারণে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁহাকে নির্বাচন করিয়াছিলেন। তিনি মক্কা গেলেন। সাহাবীদের (রদিয়াল্লহু আ’নহুম) ঈর্ষা হইল যে, উ’সমান তো আনন্দের সহিত কা’বাঘর তাওয়াফ করিতেছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, আমি আশা করি না যে, সে আমাকে ছাড়া তাওয়াফ করিবে। সুতরাং হযরত উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু যখন মক্কায় পৌঁছিলেন তখন আবান ইবনে সাঈ’দ তাঁহাকে নিরাপত্তা দিল এবং বলিল যে, যেখানে ইচ্ছা চলাফেরা করিতে পার, তোমাকে কেহ বাধা দিতে পারিবে না। হযরত উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু আবু সুফিয়ান ও মক্কার অন্যান্য সরদারদের সহিত সাক্ষাত করিতে থাকিলেন এবং রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পয়গাম পৌঁছাইতে থাকিলেন। যখন ফিরিয়া আসিতে লাগিলেন তখন কাফিররা নিজেরাই অনুরোধ করিল যে, তুমি মক্কায় আসিয়াছ সুতরাং তাওয়াফ করিয়া যাও। তিনি জবাব দিলেন যে, ইহা আমার দ্বারা সম্ভব নয় যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে বাধা দেওয়া হইয়াছে আর আমি তাওয়াফ করিব। কুরইশরা এই উত্তর শুনিয়া ক্ষিপ্ত হইয়া উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু কে আটক করিয়া রাখিল। মুসলমানদের নিকট এই সংবাদ পৌঁছিল যে, উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু কে শহীদ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। ইহার উপর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের নিকট হইতে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করিয়া যাওয়ার বাইয়াত গ্রহণ করিলেন। কাফেররা এই সংবাদ শুনিয়া ঘাবড়াইয়া গেল এবং উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু কে সঙ্গে সঙ্গে ছাড়িয়া দিল। (খামীস)
ফায়দাঃ এই ঘটনায় হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু এর উক্তি, হযরত মুগীরা রদিয়াল্লহু আ’নহু কতৃক আঘাত করা, সামগ্রিক ভাবে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের আচরণ যাহা ওরওয়া গভীর ভাবে লক্ষ্য করিয়াছে, হযরত উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু কতৃক তাওয়াফ করিতে অস্বীকার করা–প্রত্যেকটি বিষয় রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুদের  অকৃত্রিম ও পরম ভালবাসার পরিচয় দেয়। উল্লিখিত ঘটনায় যে বাইয়াতের কথা আলোচিত হইয়াছে উহাকে ‘বায়াতুশ-শাজারা’ বলা হয়। কুরআন পাকেও উহার উল্লেখ রহিয়াছে। আল্লহ তায়া’লা সূরা ফাতহের لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ-الاية ইহা উল্লেখ করিয়াছেন। পূর্ণ আয়াত তরজমাসহ পরিশিষ্টে আসিবে।
ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৫৪-৮৫৮

সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের সহিত ব্যবহার ও তাঁহাদের সংক্ষিপ্ত গুণাবলী

সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের কয়েকটি ঘটনা নমুনা স্বরূপ লেখা হইয়াছে, নতুবা তাঁহাদের অবস্থা বড় বড় কিতাবেও সংকুলান হইবে না। উর্দুতে এই বিষয়ের উপর যথেষ্ট কিতাবাদী পাওয়া যায়। কয়েকটি মাস হইল এই কিতাবটি লিখিতে শুরু করিয়াছিলাম, কিন্তু মাদ্রাসার ব্যস্ততার এবং অন্যান্য সাময়িক অসুবিধার কারণে বাধাগ্রস্থ হইয়াছি। এখন এই কয়েকটি পৃষ্ঠা লিখিয়াই শেষ করিতেছি, যেন যাহা লেখা হইয়াছে তাহা উপকারী হয়।
পরিশেষে একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করা জরুরী মনে করিতেছি। আর তাহা এই যে, এই উচ্ছৃঙ্খলতার যুগে যেই ক্ষেত্রে আমাদের মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনের অন্যান্য বহু বিষয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং উপেক্ষা পরিলক্ষিত হইতেছে সেইক্ষেত্রে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের হক এবং তাঁহাদের আদাব এহতেরামের ব্যাপারেও সীমাহীন ত্রুটি হইতেছে। বরং ইহা অপেক্ষাও মারাত্মক হইল দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন কিছু লোক তো তাঁহাদের শানে বেয়াদবী পর্যন্ত করিয়া বসে। অথচ সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম হইলেন দ্বীনের বুনিয়াদ। সর্বপ্রথম তাঁহারাই দ্বীনের প্রচার-প্রসার করিয়াছেন। সারা জীবন চেষ্টা করিয়াও আমরা তাহাদের হক আদায় করিতে পারিব না। আল্লহ তায়া’লা আপন অনুগ্রহে তাঁহাদের প্রতি লাখো রহমত নাযিল করুন। কেননা তাঁহার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে দ্বীন হাসিল করিয়া আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাইয়াছেন। তাই এই কিতাবে কাযী ইয়ায রহমাতুল্লহ আ’লাইহি এর শিফা নামক কিতাবের একটি পরিচ্ছেদের সংক্ষিপ্ত তরজমা যাহা এই ক্ষেত্রে উপযোগী, উল্লেখ করিতেছি এবং ইহার উপরেই এই পুস্তিকা সমাপ্ত করিতেছি।
তিনি বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শনেরই অন্তর্ভূক্ত হইতেছে তাঁহার সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুমগণের সম্মান করা, তাঁহাদের হক জানা, তাঁহাদের অনুসরণ করা, তাঁহাদের প্রশংসা করা, তাঁহাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করা, তাঁহাদের পারস্পরিক মতানৈক্য সম্পর্কে আলোচনা না করা। ঐতিহাসিক, শিয়া, বিদয়াতী এবং জাহেল বর্ণনাকারীদের ঐ সমস্ত বর্ণনার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা, যাহা তাঁহাদের সম্পর্কে অবমাননাকর। যদি এই ধরণের কোন বর্ণনা কানে আসে তবে উহার কোন ভাল ব্যাখ্যা করিবে এবং কোন ভাল অর্থ নির্ধারণ করিবে যাহা তাঁহাদের শানের উপযোগী হয়। তাঁহাদের কোন দোষ বর্ণনা করিবে না। বরং তাঁহাদের গুণাবলী বর্ণনা করিবে এবং দোষনীয় বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করিবে। যেমন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, যখন আমার সাহাবীদের (মন্দ) আলোচনা হয় তখন চুপ থাক।
সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের মর্যাদার কথা কুরআন ও হাদিসে অধিক পরিমাণে বর্ণিত হইয়াছে। আল্লহ তায়া’লা এরশাদ করেন–
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّـهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّـهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ۗ وَعَدَ اللَّـهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
অর্থঃ মুহাম্মাদ আল্লহর রসূল আর যাহারা তাঁহার সঙ্গে আছে তাহারা কাফিরদের মোকাবেলায় অত্যন্ত কঠোর আর পরস্পরে সদয়। হে শ্রোতা! তুমি তাহাদিগকে দেখিতে পাইবে তাহারা কখনও রুকু অবস্থায় আছে কখনও সিজদারত আছে এবং আল্লহ তায়া’লার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির তালাশে লিপ্ত রহিয়াছে। তাহাদের বন্দেগীর আলামত তাঁহাদের চেহারার উপর সিজদার কারণে পরিস্ফুট হইয়া আছে। তাঁহাদের এই সবগুণ তাওরাতে রহিয়াছে আর ইঞ্জিলে তাঁহাদের এই দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হইয়াছে, যেমন শস্য যাহা প্রথমে আপন অঙ্কুর বাহির করিল, অতঃপর উহা আপন অঙ্কুরকে শক্তিশালী করিল, অর্থাৎ উক্ত শস্য মোটা তাজা হইল। তারপর উহা আরও মোটা-তাজা হইল অতঃপর আপন কান্ডের উপর সোজা দাঁড়াইয়া গেল, ফলে কৃষকের আনন্দবোধ হইতে লাগিল। (তদ্রূপ সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের মধ্যে প্রথমে দুর্বলতা ছিল, অতঃপর দিন দিন তাঁহাদের শক্তি বৃদ্ধি পাইল। আল্লহ তায়া’লা সাহাবাহদের এইরূপ ক্রমোন্নতি দান করিলেন) যেন কাফেরদিগকে হিংসার আগুনে বিদগ্ধ করেন। আর আখেরাতে আল্লহ তায়া’লা ঐ সকল ব্যক্তিদের সহিত যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং নেক আমাল করিতেছে ক্ষমা এবং বিরাট প্রতিদানের ওয়াদা করিয়া করিয়াছেন। (সূরা ফাতহঃ ২৯)
তাওরাত শব্দের উপর যদি আয়াত শেষ হয় তবে এরূপ তরজমা হইবে যাহা উপরে করা হইয়াছে।আর আয়াতের পার্থক্যের কারণে অর্থেও পার্থক্য হইয়া যাইবে, যাহা তাফসীরের কিতাব সমূহ হইতে বুঝা যাইতে পারে। উক্ত সূরারই অপর জায়গায় এরশাদ হইয়াছে–
لَّقَدْ رَضِيَ اللَّـهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লহ তায়া’লা ঐ সকল মুসলমানদের প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছেন (যাহারা আপনার সফর সঙ্গী), যখন তাঁহারা আপনার সহিত গাছের নিচে অঙ্গীকার করিতেছিল এবং তাঁহাদের অন্তরে যাহা কিছু (ইখলাস ও মজবুতি) ছিল উহাও আল্লহ তায়া’লার জানা ছিল, আর আল্লহ তায়া’লা তাঁহাদের অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করিয়া দিয়াছিলেন এবং তাহাদিগকে একটি নিকটবর্তী বিজয় দান করিলেন। (ইহা দ্বারা খায়বরের বিজয় কে বুঝানো হইয়াছে, যাহা উহার একেবারে নিকটবর্তী সময়ে হইয়াছে) আর প্রচুর গনিমতও দান করিলেন। আল্লহ তায়া’লা বড় যবরদস্ত হিকমাতওয়ালা। (সূরা ফাতহঃ ১৮)
সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের ব্যাপারে আল্লহ তায়া’লা এরশাদ করেন–
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّـهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا
অর্থঃ ঐ সকল মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক এমন রহিয়াছে যাহারা আল্লহর সহিত যে ওয়াদা করিয়াছিল উহাতে সত্য প্রমানিত হইয়াছে। অতঃপর তাহাদের মধ্যে কিছু লোক এমন রহিয়াছে যাহারা আপন মানত পূর্ণ করিয়াছে (অর্থাৎ শহীদ হইয়া গিয়াছে।) আর কিছু তাহাদের মধ্য হইতে উহার জন্য আগ্রহী এবং অপেক্ষায় আছে (এখনও শহীদ হয় নাই) এবং নিজেদের ইচ্ছার মধ্যে  কোনরূপ পরিবর্তন ও রদ-বদল ঘটায় নাই। (সূরা আহযাবঃ ২৩)
এক জায়গায় আল্লহ তায়া’লা এরশাদ করিয়াছেন–
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّـهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থঃ যে সমস্ত মুহাজির এবং আনসারগণ (ঈমান আনয়নের ক্ষেত্রে সকল উম্মত হইতে) অগ্রবর্তী আর যে সকল লোক ইখলাসের সহিত তাঁহাদের অনুগামী হইয়াছে, আল্লহ তায়া’লা তাহাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছেন আর তাহারা সকলে আল্লহ তায়া’লার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছে আর আল্লহ তায়া’লা এমন বাগান সমূহ তৈয়ার করিয়া রাখিয়াছেন যেইগুলির তলদেশ দিয়া নহর প্রবাহিত হইবে যাহাতে তাহারা চিরকাল থাকিবে এবং ইহা বড় কামিয়াবী। (সূরা তওবাহঃ ১০০)
উল্লেখিত আয়াতসমূহে আল্লহ তায়া’লা সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের প্রশংসা এবং তাঁহাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করিয়াছেন।
অনুরূপ ভাবে বিভিন্ন হাদীসেও অত্যধিক পরিমাণে তাঁহাদের গুণাবলী বর্ণিত হইয়াছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমাইয়াছেন আমার পর আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহুউ’মার রদিয়াল্লহু আ’নহু এর অনুসরণ করিও। এক হাদীসে এরশাদ করিয়াছেন, আমার সাহবাহগণ তারকার ন্যায়, তোমরা যাহারই অনুসরণ করিবে হেদায়াত প্রাপ্ত হইবে।
উল্লেখিত হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণে আপত্তি রহিয়াছে। এইজন্যই কাযী ইয়ায রহমাতুল্লহ আ’লাইহি উক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন বলিয়া তাঁহার উপর প্রশ্ন তোলা হইয়াছে। তবে মোল্লা আ’লী ক্বারী রহমাতুল্লহ আ’লাইহি লিখিয়াছেন, হইতে পারে একাধিক সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হওয়ার কারণে উক্ত হাদীস তাঁহার নিকট নির্ভরযোগ্য অথবা ফযীলত ও মর্যাদার সম্পর্কিত হওয়ার কারণে তিনি উল্লেখ করিয়াছেন। (কেননা ফযীলতের হাদীস সামান্য দুর্বলতা সত্ত্বেও উল্লেখ করা হইয়া থাকে।)
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমাইয়াছেন, আমার সাহাবীদের দৃষ্টান্ত হইল খাদ্যের মধ্যে লবনের ন্যায় যেমন খাদ্য লবন ব্যতীত সুস্বাদু হইতে পারে না।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইহাও এরশাদ করিয়াছেন, আমার সাহাবীগনের ব্যাপারে আল্লহ কে ভয় কর। তাঁহাদিগকে সমালোচনার পাত্র বানাইও না। যে ব্যক্তি তাঁহাদের প্রতি মুহাব্বাত রাখে, আমার মুহাব্বাতের কারণেই তাঁহাদের প্রতি মুহাব্বাত রাখে। আর যে ব্যক্তি তাঁহাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে যে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণের কারণেই তাঁহাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যে তাঁহাদিগকে কষ্ট দিল সে আমাকে কষ্ট দিল, আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লহকে কষ্ট দিল। আর যে আল্লহকে কষ্ট দেয় সে অতিসত্বর পাকড়াও হবে।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইহাও এরশাদ করিয়াছেন যে, আমার সাহাবীগণকে গালি দিও না। তোমাদের কেহ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ খরচ করে তবে উহা সওয়াবের দিক হইতে সাহাবাদের এক মুদ বা আধা মুদের সমান হইতে পারে না। (এক মুদ প্রায় এক সেরের সমান)
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন যে ব্যক্তি সাহাবাহদিগকে গালি দিবে তাহার উপর আল্লহ তায়া’লার লানত, ফেরেশতাদের লানত এবং সমস্ত মানুষের লানত। তাহার না ফরয কবুল হইবে না নফল।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, আল্লহ তায়া’লা নবীগণ ব্যতীত অন্য সমস্ত মানুষ হইতে আমার সাহাবীদিগকে বাছাই করিয়াছেন। তাঁহাদের মধ্য হইতে চারজনকে স্বাতন্ত্র্য দান করিয়াছেন–আবু বকর, উ’মার, উ’সমান, আ’লী রদিয়াল্লহু আ’নহুম। তাঁহাদিগকে আমার সাহাবীগণের মধ্যে শেষ্ঠ সাব্যস্ত করিয়াছেন।
আইয়ূব সাখতিয়ানী রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলেন, যে ব্যক্তি আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু কে ভালবাসিল সে দ্বীনকে সোজা করিল, যে ব্যক্তি উ’মার রদিয়াল্লহু আ’নহু কে ভালবাসিল সে দ্বীনের সুস্পষ্ট রাস্তা পাইল, যে উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু কে ভালবাসিল সে আল্লহ তায়া’লার নূর দ্বারা আলোকিত হইল আর যে আ’লী রদিয়াল্লহু আ’নহু কে ভালবাসিল সে দ্বীনের মজবুত রশি ধারণ করিল। যে সাহাবাহ দের প্রশংসা করিল সে মুনাফিকী হইতে মুক্ত আর যে সাহাবাহ দের সহিত বেয়াদবী করে সে বিদয়াতী, মুনাফিক ও সুন্নত বিরোধী। আমার আশংকা হয় যে তাহার কোন আমাল কবুল হইবে না, যে পর্যন্ত তাঁহাদের সকলের প্রতি মুহাব্বাত না রাখিবে এবং তাঁহাদের সম্পর্কে দিল সাফ না হইবে।
এক হাদীসে আছে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, হে লোকেরা! আমি আবু বকরের প্রতি সন্তুষ্ট তোমরা তাঁহার মর্যাদা বুঝিও। আমি উ’মার, আ’লী, উ’সমান, তলহা, যুবাইর, সা’দ, সাঈ’দ, আবদুর রহমান ইবনে আওফ এবং আবু উ’বাইদাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম এর প্রতি সন্তুষ্ট তোমরা তাঁহাদের মর্যাদা বুঝিও। হে লোকেরা! আল্লহ তায়া’লা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদিগকে এবং হুদায়বিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদিগকে ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন। তোমরা আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আমার প্রতি লক্ষ্য রাখিবে আর ঐ সমস্ত লোকদের ব্যাপারে যাহাদের কন্যারা আমার বিবাহের মধ্যে আছে এবং আমার কন্যারা যাহাদের বিবাহের মধ্যে আছে। এমন যেন না হয় যে, তাঁহারা তোমাদের বিরুদ্ধে কিয়ামাতের দিন জুলুমের অভিযোগ করিয়া বসে। কেননা উহা মাফ করা হইবে না।
এক জায়গায় এরশাদ করিয়াছেন, আমার সাহাবী এবং আমার জামাতাদের ব্যাপারে আমার দিকে খেয়াল রাখিও। যে ব্যক্তি তাঁহাদের ব্যাপারে আমার প্রতি খেয়াল করিবে আল্লহ তায়া’লা তাহাকে দুনিয়া আখেরাতে হিফাযত করিবেন আর যে ব্যক্তি তাঁহাদের ব্যাপারে আমার প্রতি খেয়াল করিবে না আল্লহ তায়া’লা তাহার দায়িত্ব হইতে মুক্ত, অসম্ভব নয় যে সে কোন আযাবে পাকড়াও হইয়া যাইবে।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হইতে ইহাও বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি সাহাবীদের ব্যাপারে আমার খেয়াল করিবে কিয়ামাতের দিন আমি তাহার হিফাযতকারী হইব।
এক জায়গায় এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আমার খেয়াল করিবে সে আমার নিকট হাউজে কাউসারে পৌঁছিতে পারিবে আর যে আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আমার খেয়াল করিবে না সে আমার নিকট হাউজ পর্যন্ত পৌঁছিতে পারিবে না এবং দূর হইতে শুধু দেখিতে হইবে।
সাহল ইবনে আ’ব্দুল্লহ রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলেন, যে ব্যক্তি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের সম্মান করে না সে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমানই আনে নাই।
আল্লহ তায়া’লা আপন অনুগ্রহে তাঁহার শাস্তি এবং আপন মাহবুবের অসন্তুষ্টি হইতে আমাকে, আমার বন্ধু-বান্ধবকে, আমার হিতাকাঙ্খীদেরকে, আমার সহিত সাক্ষাতকারীদেরকে, আমার শাইখ ও ছাত্রদিগকে ও সমস্ত মুমিনে-মুসলমানদিগকে রক্ষা করুন এবং আমাদের অন্তরসমূহকে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের মুহাব্বাত দ্বারা পরিপূর্ণ করিয়া দিন—আমীন।
যাকারিয়া উফিয়া আ’নহু
মুকীম, মাদ্রাসা মাযাহেরে উলুম, সাহারানপুর
১২ই শাওয়াল, ১৩৫৭ হিঃ, সোমবার।
ফাযায়েলে আমাল (দারুল কিতাব, অক্টোবর ২০০১) পৃষ্ঠা ৮৭১-৮৭৬

No comments:

Post a Comment