Wednesday, May 21, 2014

ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী

 ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী


ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী ইসলামপূর্ব আরবে নারী ছিল উপেক্ষিত। পরিবারে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণকে তারা নিজেদের জন্য অপমানের বিষয় মনে করত। নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের তারা জীবন্ত মাটিচাপা দিত। কোনো মানুষ মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পদের সঙ্গে স্ত্রীরাও বণ্টিত হতো। মৃত ব্যক্তিদের স্ত্রীরা ছেলেদের স্ত্রী হিসেবে পরিগণিত হতো। পায়ের জুতার চেয়েও নারীদের তুচ্ছ মনে করা হতো। এমনকি নারীদের বৈধ কথা মানাকেও তারা পৌরুষের পরিপন্থী মনে করত।
সেই আরবের মাটিতে আল্লাহর প্রিয়তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিলেন- 'হে লোক সকল! কন্যারূপ নারী তোমার সম্ভ্রম। বোনরূপী নারী তোমার সম্মান। স্ত্রীরূপী নারী তোমার জীবনের সঙ্গী। আর সেই নারী যদি হয় তোমার মা, তবে তার পায়ের নিচে তোমার জান্নাত।'
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো জানিয়ে দিলেন, 'যার ঘরে দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করল, মা-বাবা তাদের উন্নত শিক্ষা দিল, উত্তম দীক্ষা দিল এবং তাদের ব্যাপারে অর্পিত দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করল, সে জান্নাতে আমার সাথি হবে। সে আমার সঙ্গে এমনভাবে থাকবে, যেমন দুটি আঙুল পাশাপাশি থাকে। অর্থাৎ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় সুসংবাদ দিলেন, যার ঘরে কন্যাসন্তান জন্ম নিল, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে গেল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো সুসংবাদ দিলেন- যে ব্যক্তিই নেক আমল করবে, সে পুরুষ হোক কিংবা নারী, সে যদি ইমানদার হয়। সে অবশ্যই পবিত্র জীবনের অধিকারী হবে। অর্থাৎ পুরুষরা যেমন নেক কাজ করে এবং ইবাদত করে আল্লাহর ওলি হতে পারে, তাঁর প্রিয় বান্দা হতে পারে, তেমনি নারীরাও নেক কাজ করে এবং ইবাদত করে আল্লাহর ওলি হতে পারে। তাঁর প্রিয় বান্দি হতে পারে। ওলি হওয়ার দুয়ার তাদের জন্যও উন্মুক্ত। মোটকথা, ইসলাম নারীদের এমন মর্যাদা দান করেছে, যা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম দিতে পারেনি।
বর্তমান ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো অদ্ভুত সব অপপ্রচার শুরু করেছে। ইসলাম নারীদের প্রতি অনেক বেশি পাবন্দি এবং বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে বলে তারা মুসলমান নারীদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর আমাদের সমাজের কিছু নারীও এসব অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। তারা মনে করছে, ইসলাম সত্যিই হয়তো তাদেরকে তাদের বৈধ প্রাপ্তি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ বাস্তবতা এমন নয়।
সর্বপ্রথম যে বিষয়টি বলা হয় সেটি হলো, ইসলাম নারীকে পর্দায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। পক্ষান্তরে অমুসলিম সমাজে নারীরা পর্দাহীন চলাফেরা করে। এ বিষয়টি বোঝা খুব সহজ, নারী পর্দায় থাকলে তার নিজের জন্যও উপকার, পুরুষের জন্যও উপকার। পক্ষান্তরে পর্দাহীনতার কলুষতা সমাজকে কিভাবে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিয়ে যায়, ইউরোপের সমাজচিত্র তার জীবন্ত প্রমাণ।
সুইডেন ব্রিটেনের অতি নিকটের ইউরোপের একটি ধনী রাষ্ট্র। আমাদের দেশগুলোতে বাজেটে ঘাটতি থাকে আর ওই দেশে থাকে উদ্বৃত্ত। আমরা ভাবি টাকা আসবে কোথায় থেকে, আর তারা ভাবে টাকা খরচ করবে কোথায়। দেশটি এত ধনী যে পুরো দেশের নারী পুরুষ, ছোট বড়, কিশোর বৃদ্ধ সবাই যদি কাজ বাদ দিয়ে শুধু খায় আর আনন্দ-ফূর্তি করে, তাহলে গোটা জাতি লাগাতার ছয় বছর খরচ করতে পারবে, ফুরাবে না। ওই দেশে কারো চাকরির ব্যবস্থা না হলে রাষ্ট্রপতি মাসে ২০ হাজার করে টাকা দেয়। বাসা-বাড়ি না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাসা দেয়। অসুস্থ হলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, লাখ টাকা লাগুক আর কোটি টাকা লাগুক রাষ্ট্র দেয়। মোটকথা সব কিছুর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রই সব কিছু ব্যবস্থা করে। তাদের আহার, বস্ত্র, বাসস্থান কোনো কিছুরই পেরেশানি নেই। থাকল শুধু জৈবিক চাহিদা পূরণের বিষয়টি। এদিক থেকেও তারা স্বাধীন। রাষ্ট্রটি অবাধ যৌনতায় বিশ্বাসী। পশুর মতো নারী পুরুষও যখন যেখানে ইচ্ছা একজন আরেকজনের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। কোনো বাধা-নিষেধ নেই। লক্ষ করার বিষয় হলো, যাদের আহার, বস্ত্র, বাসস্থান চিন্তা নেই, যৌন চাহিদা পূরণ করতেও কোনো বাধা-নিষেধ নেই, যখন যার সঙ্গে ইচ্ছা যৌন চাহিদা মিটাতে পারছে, তাদের দুশ্চিন্তা করার তো কিছু নেই। কিন্তু দুটি বিষয় বড়ই আশ্চর্যের। প্রথম বিষয় হলো, তাদের সমাজে তালাকের হার ৭০ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭০ জনের অধিক পরিবারে তালাক ও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। দ্বিতীয় হলো, গোটা পৃথিবীতে সুইডেনেই আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। সুইডেনে যে পরিমাণ মানুষ আত্মহত্যা করে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে তা করে না। পর্দাহীনতার কারণে তাদের অন্তরে শান্তি নেই। পুরুষ সব সময় উত্তম থেকে উত্তমের সন্ধান করে ফিরছে, নারীও উন্নত থেকে উন্নততর বস্তুর সন্ধানে বিভোর। ফলে শান্তির জীবন কারো কপালেই জুটছে না। যে সমাজে ৭৯ জনের অধিক নারী তালাকপ্রাপ্ত হয়, সেখানে কার মনে সুখ থাকবে? ফলে আজ তারা Depression তথা মানসিক অশান্তিতে জীবনযাপন করে।
ইসলাম আমাদের পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়েছে। এর উপকারও আমরাই ভোগ করি। বাসস্থানেরও সংকট রয়েছে। এতদসত্ত্বেও আমাদের দেশে ০.৭ শতাংশ জনও তালাকপ্রাপ্ত হয় না। আমরা এমন সুখের জীবন কোথায় পেলাম? এমন শান্তির জীবন কিভাবে লাভ করলাম? এর কারণ আমাদের দেশ ও সমাজে এখনো যৎসামান্য হলেও ইসলামের বিধিনিষেধ অব্যাহত আছে। পর্দার ব্যবস্থা রয়েছে। যার সুফল আমরা নিজেরাই ভোগ করছি।
অমুসলিম সমাজে পর্দাপ্রথা নেই বলে তারা স্বাধীন, আমাদের মুসলিম নারীদের এমন ভাবনা ইউরোপের একটি ফ্যাক্টরিতে দেখেছি, ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরাও ভারী ভারী বোঝা কোমরে বহন করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। আমি ফ্যাক্টরির ম্যানেজারকে বললাম, এ আপনার কেমন কাণ্ড! মেয়েদের দ্বারাও এসব কাজ করাচ্ছেন? উত্তরে সে বলল, কাজ না করলে খাবে কি? এ হলো নারীর স্বাধীনতা। কুলিদের মতো অমানবিকভাবে বোঝা টানছে। ফ্যাক্টরিতে কাজ করছে। এর নামই কি স্বাধীনতা?
ইসলাম নারীকে তার জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই জীবিকা নির্বাহের দায়িত্ব দেয়নি।
কন্যার দায়িত্ব পিতার। পিতা কন্যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করবে।
বোনের দায়িত্ব ভাইয়ের। ভাই তার বোনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করবে।
স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীর। স্বামী তার স্ত্রীর সব ধরনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করবে।
আর মায়ের দায়িত্ব সন্তানের। সন্তান তার মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করবে।
মোটকথা, ইসলাম নারীকে তার জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই কামাই করার এবং নিজের জীবিকা নির্বাহের দায়িত্ব দেয়নি। বরং ইসলাম নারীর কাছে মাহরাম পুরুষদের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছে। ইসলাম বলে, নারীরা ঘরের রানি। পুরুষরা ঘাম ঝরিয়ে কামাই করে তাদের পৌঁছে দেবে, নারীরা শুধু সন্তান লালন-পালন করবে। ঘরোয়া বিষয়াদি সামলাবে। আপনারা নিজেরাই ফায়সালা করুন, নারীদের প্রকৃত মর্যাদা কে দিয়েছে? ইসলাম নাকি ইউরোপের পাশ্চাত্য সমাজ?
গভীরভাবে লক্ষ করলে স্পষ্ট দেখতে পারেন, ইসলাম নারীদের প্রতি কোমল আচরণ করেছে। পুরুষদের আল্লাহ তায়ালা শক্তি দিয়েছেন। পক্ষান্তরে নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল। কোমল এ জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাদের শারীরিক ক্ষমতা অনুপাতে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের বলেছেন, তোমরা নিজ ঘরে আরামে থাক, আনন্দ করো। আর পুরুষদের দিয়েছেন শারীরিক ক্ষমতা অনুপাতে দায়িত্ব। পুরুষদের বলেছেন, তোমরা চাকরি করো, ব্যবসা করো, চাষাবাদ করো। এর মাধ্যমে জীবন নির্বাহের ব্যবস্থা করো।
মোট কথা, ইসলাম নারীকে তার জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই জীবিকা নির্বাহের দায়িত্ব দেয়নি। ইসলামে নারী হলো সম্মান, সম্ভ্রম আর ভালোবাসার প্রতীক। তারা হলো শান্তি প্রেরণা এবং সঞ্জীবনী শক্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে তারা হলো ঘরের রানি। তারা ঘরে বসে থাকবে, পুরুষ ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করে এনে তাদের খাওয়াবে।
সারকথা, নারীর প্রকৃত মর্যাদা ইসলামই দান করেছে। পাশ্চাত্য সমাজ দেয়নি। পাশ্চাত্য সমাজ যা দিয়েছে, তাকে লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। পাশ্চাত্যের 'স্বাধীনতা' নারীকে ভোগ করার হাতিয়ার। যারা এই সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে, তারাই শান্তিতে রয়েছে। তারাই ভালো রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।

অনুবাদ : মাওলানা আবুজারীর আবদুল ওয়াদুদ - See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/dhormo/2014/03/07/59274#sthash.erLlTzjU.dpuf
ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী
ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী

No comments:

Post a Comment