Saturday, May 24, 2014

জান্নাতে কি হবে?

জান্নাতে কি হবে? 

Written by ইয়াসিন আহমেদ


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

আল্লাহ তাআলা বলেন,
নিশ্চয় পরহেযগাররা বাস করবে উদ্যান ও প্রস্রবণসমূহে । (তাদেরকে বলা হবে,) তোমরা শান্তি ও নিরাপওার সাথে তাতে প্রবেশ কর। আমি তাদের অন্তরে যে ঈর্ষা থাকবে তা দূর করে দেব; তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে। সেথায় তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেথা হতে বহিষ্কৃতও হবে না। (সূরা হিজর ৪৫-৪৮)

তিনি আরো বলেন,
হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিল এবং আত্মসমর্পনকারী (মুসলিম) ছিলে। তোমরা এবং তোমাদের সহ ধর্মিনীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। স্বর্ণের থালা ও পান পাএ নিয়ে ওদের মাঝে ফিরানো হবে, সেখানে রয়েছে এমন সমস্ত কিছু, যা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। এটাই জান্নাত, তোমরা তোমাদের কর্মের ফলস্বরূপ যার অধিকারী হয়েছ। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ফলমূল, তা থেকে তোমরা আহার করবে। (সূরা যুখরুফ ৬৮-৭৩)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
“নিশ্চয় সাবধানীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে-বাগানসমূহে ও ঝরনারাজিতে, ওরা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমি বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে ওদের; আর আয়াতলোচনা হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। সেখানে তারা নিশ্চিন্তে বিবিধ ফলমূল আনতে বলবে। (ইহকালে) প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। (এ প্রতিদান) তোমরা প্রতিপালকের অনুগ্রহস্বরূপ। এটাই তো মহাসাফল্য।” (সূরা দুখান ৫১-৫৭)
আল্লাহ অন্যএ বলেছেন,
“পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দে। তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখতে থাকবে। তুমি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দের সজীবতা দেখতে পাবে। তাদেরকে মোহর আঁটা বিশদ্ধ মদিরা হতে পান করানো হবে। এর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর। আর তা লাভের জন্যই প্রতিযোগিতারা প্রতিযোগিতা করুক। এর মিশ্রন হবে তাসনীমের (পানির)। এটা একটি প্রস্রবণ, যা হতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করবে। (সূরা মুত্বাফিফীন ২২-২৮)
এ মর্মে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এখানে কিছু হাদীস উল্লেখ করা হল-
১) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জান্নাতবাসীরা জান্নাতের মধ্যে পানাহার করবে; কিন্তু পেশাব-পায়খানা করবে না, তারা নাক ঝরাবে না, পেশাবও করবে না। বরং তাদের ঐ খাবার ঢেকুর ও কস্তুরীবৎ সুগন্ধময় ঘাম (হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যাবে)। তাদের মধ্যে তাসবীহ ও তাকবীর পড়ার স্বয়ংক্রিয় শক্তি প্রক্ষিপ্ত হবে, যেমন শ্বাসক্রিয়ার শক্তি স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে।” (মুসলিম ২৮৩৫, আবূ দাউদ ৪৭৪১)
২) আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেন, “মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ন শ্রবন করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ, “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” (সূরা সাজদাহ ১৭) (সহীহুল বুখারী ৩২৪৪, ৪৭৭৯,৪৭৮০)
৩) উক্ত রাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জান্নাতে প্রথম প্রবেশকারী দলটির আকৃতি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত হবে।তারপর তাদের পরের দলটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জ্যোতির্ময় হবে। তারা জান্নাতে পেশাব করবে না, থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের স্ত্রী হবে আয়াতলোচনা হুরগণ। তারা সকলেই একটি মানব কাঠামো, আদি পিতা আদমের আকৃতিতে হবে (যাদের উচ্চতা হবে) ষাট হাত পর্যন্ত।” (সহীহুল বুখারী ৩২৪৫, ৩২৪৬, ৩২৫৪, ৩৩২৭)
৪) বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে যে, “(জান্নাতে) তাদের পাএ হবে স্বর্ণের, তাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের দরুন মাংস ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না। পারস্পরিক বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর একটি অন্তরের মত হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠে রত থাকবে।”

No comments:

Post a Comment