Saturday, May 31, 2014

মাংস হালাল-হারাম হওয়ার ব্যাপারে কতিপয় বিধিবিধান

মাংস হালাল-হারাম হওয়ার ব্যাপারে কতিপয় বিধিবিধান

Maolana.Hoshen.Ali's picture

৩. হুর্রিমাত 'আলাইকুমুল মাইতাতু ওয়াদ্দামু ওয়া লাহ্মুল খিন্যীরি ওয়া মা উহিল্লা লিগাইরিল্লাহি বিহি ওয়াল মুন্খানিক্বাতু ওয়াল মাওক্বূযাতু ওয়াল মুতারাদ্দিইয়াতু ওয়ান্নাত্বীহাতু ওয়া মা আকালাস সাবু'উ ইল্লা মা যাক্কাইতুম; ওয়া মা যুবিহা 'আলান নুসুবি ওয়া আন তাস্তাক্বসিমূ বিল আঝ্লামি; যালিকুম ফিস্ক্বুন; আল-ইয়াওমা ইয়ায়িসাল্লাযীনা কাফারূ মিন দীনিকুম ফালা তাখ্শাওহুম ওয়াখ্শাওনি; আল-ইয়াওমা আক্মাল্তু লাকুম দীনাকুম ওয়া আত্মাম্তু 'আলাইকুম নি'মাতী ওয়া রাদ্বীতু লাকুমুল ইসলামা দীনা। ফামানিদ্ব্তুর্রা ফী মাখ্মাসাতিন গাইরা মুতাজানিফিল লি-ইছ্মিন ফাইন্নাল্লাহা গাফূরুর রাহীম। [সুরা : আল-মায়িদা, আয়াত : ৩]

অনুবাদ : ৩. তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা হয়েছে। এ ছাড়া শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরা, আঘাত পেয়ে মরা, ওপর থেকে পড়ে মরা, শিংয়ের আঘাতে মরা এবং হিংস্র জন্তুর খাওয়া প্রাণী_এগুলোও হারাম। তবে তোমরা যদি তা জীবিত অবস্থায় পেয়ে জবাই করে থাকো, তাহলে ভিন্নকথা। পূজার বেদিতে বলি দেওয়া জন্তু হারাম, জুয়ার তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্যনির্ণয় করা জন্তু হারাম_এসবই বড় গুনাহ্র কাজ। এখন কাফিররা তোমাদের ধর্মের মূলোৎপাটন সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তাদের ভয় করো না, বরং আমাকেই (আল্লাহকেই) ভয় করো। আজ আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকেই আমি ধর্ম হিসেবে পছন্দ করে নিলাম। যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষুধার তাড়নায় হালাল নয় এমন খাদ্য গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, কিন্তু সে কোনো পাপের দিকে ঝুঁকে পড়তে চায় না, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

ব্যাখ্যা : এই আয়াতের মাধ্যমে খাদ্যে হালাল-হারাম সম্পর্কিত কিছু বিধিবিধান জারি করা হয়েছে। শুরুতেই চার ধরনের বস্তুকে হারাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস এবং আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি এমন জন্তু। মুসলিম ব্যক্তি যখন কোনো জন্তু জবাই করে, তখন আল্লাহর নাম স্পষ্টভাবে উচ্চারণ না করলেও তা আল্লাহর নামে জবাই করা হয়েছে বলেই বিবেচিত হবে। কারণ, মুসলমানদের অন্তরে আল্লাহ আছেন। এরপর আরো কয়েক ধরনের বস্তুকে হারাম হিসেবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যাওয়া কোনো প্রাণী, আঘাত পেয়ে মারা যাওয়া কোনো প্রাণী, ওপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া কোনো প্রাণী, শিংয়ের আঘাতে মারা যাওয়া প্রাণী এবং হিংস্র জন্তুর শিকার করা ও আংশিক খেয়ে ফেলা কোনো প্রাণী। এ ধরনের মরা কোনো প্রাণী এবং সর্বোপরি মরা কোনো প্রাণী হারাম। তবে উপরোক্ত অবস্থায় নিপতিত হয়ে যে প্রাণীটি মারা যায়নি, বরং জীবিত অবস্থায় একে জবাই করা গেছে, সেটা হালাল হবে। এ ছাড়া পূজার বেদিতে বলি দেওয়া জন্তু হারাম এবং জুয়ার তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্যনির্ণয় করা জন্তু হারাম। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রাক-ইসলাম যুগে পশু জবাইসংক্রান্ত একটি খেলা প্রচলিত ছিল। তা হলো_কয়েকজন মিলে একটি পশু কিনে জবাই করত, তবে প্রত্যেকের দেওয়া টাকা অনুযায়ী মাংস বণ্টন করা হতো না। ১০টি তীর নিয়ে সাতটিতে পরিমাণ চিহ্ন এঁকে দেওয়া হতো এবং তিনটি খালি রাখা হতো। অতঃপর প্রত্যেকের নামে একেকটি তীর থলে থেকে উঠানো হতো। ওই তীরে যে পরিমাণ চিহ্নিত থাকত, তাকে সেই পরিমাণ মাংস দেওয়া হতো। যার নামে চিহ্নবিহীন তীর উঠত, সে কিছুই পেত না। আলোচ্য আয়াতে এ ধরনের জুয়া খেলা এবং সেই পশুর মাংস হারাম করা হয়েছে।

'আল-ইয়াওমা আকমাল্তু লাকুম...' আয়াতটি নাজিল হয়েছে হিজরি দশম সনের ৯ জিলহজ বিদায় হজের দিন। এরপর রাসুল (সা.) মাত্র তিন মাস বেঁচে ছিলেন। 'ধর্মকে পূর্ণ করে দিলাম'-এর অর্থ জীবনের সব সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়ে গেছে, এমন নয়। এর অর্থ, ধর্মের বিধান নাজিল সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ খবরটি দেওয়ার পর খাদ্যের ব্যাপারে আরো কিছু কথা বলা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment